সেঞ্চুরি করে ড্রেসিংরুমে ফেরার পরও ও যে রকম, কোনও রান না করে আউট হয়ে ফেরার পরেও সে রকমই। ড্রেসিংরুমে ঢুকে প্যাড-গ্লাভস খুলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ও মাঠের ধারে। দলকে চিয়ার-আপ করতে।
ঋদ্ধিমান সাহাকে বরাবর এ ভাবেই দেখে এসেছি।
সাফল্য-ব্যর্থতা কোনও কিছুই ওকে কোনও দিন ছুঁতে পারেনি। উচ্ছ্বাস, হতাশা— এই আবেগগুলো ও মাঠের বাইরে রেখে নামে যেন। যে কোনও পরিস্থিতিতে পারফেক্ট টিমম্যান। আর ওর এই গুণটাই ওকে সবসময় কনফিডেন্স দেয়। যে কনফিডেন্সটা সে দিনও দেখলাম গ্রস আইলেটের মাঠে।
অনেককে একটা ব্যর্থতার হতাশা কাটাতেই অর্ধেক দিন কাটিয়ে দিতে দেখেছি। নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকতে দেখেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু ঋদ্ধি অন্য ধাতুতে গড়া। ওর কাছে ওর নিজের পারফরম্যান্সের চেয়েও টিমের গুরুত্ব অনেক বেশি।
ঋদ্ধিকে সে দিনের সেঞ্চুরিটা করতে দেখে অবাক হইনি। আমার বিশ্বাস, এ রকম ইনিংস আমরা আরও দেখব। এই কথাটা আমাদের ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালিও বিশ্বাস করে বলেই ঋদ্ধির উপর ওর প্রচুর আস্থা। তাই টেস্ট ক্রিকেটে উইকেটের পিছনে এখন ঋদ্ধির থাকা নিয়ে প্রশ্নই নেই।
সতেরো-আঠারো বছর ধরে আমি ঋদ্ধিকে খুব কাছ থেকে দেখছি। তাই জানি, ঋদ্ধি শুধু ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে আসেনি। নিজেকে ঘষে মেজে তৈরিও করেছে। প্র্যাকটিসে, নেটে নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার মানসিকতাটাই ওকে এতদূর নিয়ে গিয়েছে।
কোনও বিশেষ ধরনের প্র্যাকটিস ওকে আমি করতে দেখিনি। কিন্তু যা দেখেছি, সেটাও কম নয়। সবসময় ফোকাসড আর অ্যাকটিভ। যতক্ষণ প্র্যাকটিস চলছে, ঋদ্ধি ততক্ষণ হয় নেটে ব্যাট করছে, নয় কাউকে নিয়ে কিপিং প্র্যাকটিস করছে বা কাউকে থ্রো ডাউন দিচ্ছে। ফিট থাকলে ওকে কোনও সময় বসে থাকতে দেখিনি। প্র্যাকটিসের শুরু থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত ও মাঠে। ওই যে বলছিলাম, পারফেক্ট টিমম্যান। প্র্যাকটিসে অনেকটা সময় ওকে কাটাতে দেখেছি থ্রো-ডাউন দিয়ে। নিজের প্র্যাকটিসের সঙ্গে সঙ্গে যাতে অন্যরাও প্র্যাকটিসটা ভাল ভাবে করতে পারে, সে দিকটাও নজরে থাকে ওর। ভারতীয় দলের প্র্যাকটিসেও নিশ্চয়ই ও এ রকমই থাকে। আর সে জন্যই কোহালি ওকে এত ভালবাসে বলে আমার ধারণা।
ঋদ্ধি অনেকটাই এমএস ধোনির মতো। দু’জনেই পরিশ্রমী। আর দু’জনেই দু’টো জিনিস মনে প্রাণে বিশ্বাস করে— নিজের খামতিগুলো যত পারো সময় দিয়ে শুধরে নাও আর সুযোগ পেলেই কাজে লাগাও।
অনেকেই হয়তো এখন আবেগে ভেসে গিয়ে বলতে পারেন— এ বার ওয়ানডে টিমে এমএস ধোনির কাছে ঋদ্ধিমান একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। আমি কিন্তু আমার বন্ধুকে নিয়ে অতটা বাড়িয়ে বলতে রাজি নই। বরং বলব, এমএস ধোনি যত দিন ওয়ান ডে টিমে আছে, তত দিন আমি ঋদ্ধিকে ওয়ান ডে টিমে দেখছি না। কিন্তু বিশ্বাস করি, ধোনি যে দিন সরে যাবে, তার পর দিন থেকে ঋদ্ধিই ভারতের ওয়ান ডে টিমে উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে জায়গা করে নেবে।
আর কে এল রাহুল ভারতের টি-টোয়েন্টি টিমে থাকলেও ও ঋদ্ধির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে ঋদ্ধির সামনে তেমন কোনও বড় চ্যালেঞ্জার নেই। পার্থিব পটেল, দীনেশ কার্তিক, রবিন উত্থাপ্পারাও তো সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ঋদ্ধি যে ভাবে সুযোগ কাজে লাগিয়েছে, তা বোধহয় ওরা পারেনি। এখানেই ঋদ্ধিমানের সঙ্গে ওদের তফাত। আর এই তফাতটাই ওকে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy