Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিজয় হজারেতে বিশ্বরেকর্ড পানিপুরি বিক্রি করা ছেলের

ছয় বছর পরে ব্যাট হাতে এখন বিশ্বরেকর্ড করছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান— যশস্বী জয়সওয়াল।

দুরন্ত: ১৫৪ বলে ২০৩ রান করে নজির ১৭ বছর বয়সি যশস্বীর। ছবি: টুইটার

দুরন্ত: ১৫৪ বলে ২০৩ রান করে নজির ১৭ বছর বয়সি যশস্বীর। ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৫২
Share: Save:

ক্রিকেট জীবনের শুরুতে তিন বছর মাঠকর্মীদের সঙ্গে ছোট্ট একটা তাঁবুতেই রাত কাটাতে হত তাঁকে। কখনও কখনও মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে পানিপুরি (ফুচকা) বিক্রি করতে হত জীবনধারনের জন্য, খিদে মেটানোর জন্য। আবার কখনও খিদে সহ্য করেই শুয়ে পড়তে হত ওই তাঁবুতে। ১১ বছরের ছেলেটা তবু লড়াই ছাড়েনি। যার ফল, ছয় বছর পরে ব্যাট হাতে এখন বিশ্বরেকর্ড করছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান— যশস্বী জয়সওয়াল।

বুধবার বিজয় হজ়ারে ট্রফিতে ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে ১৭ বছর ১৯২ দিন বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিলেন মুম্বইয়ের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনি হলেন ‘লিস্ট এ’ (ঘরোয়া সীমিত ওভারের ম্যাচ) ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ পুরুষ ক্রিকেটার, যাঁর ব্যাট থেকে এল দ্বিশত রান। এর আগে এই রেকর্ড ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান বারোর। যিনি এই রেকর্ড করেছিলেন ২০ বছর, ২৭৩ দিনে। সেই ১৯৭৫ সালে। যশস্বীর ১৫৪ বলে ২০৩ রানের সৌজন্যে ৫০ ওভারে মুম্বই তোলে তিন উইকেটে ৩৫৮। জবাবে ঝাড়খণ্ডের ইনিংস শেষ হয় ৩১৯ রানে।

এই নজির গড়ার পরে কী অনুভূতি? সংবাদসংস্থাকে যশস্বী বলেছেন, ‘‘ভাল লাগছে। কিন্তু আমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। এটা সবে শুরু। আশা করব এই রকম ছন্দ পরের ম্যাচগুলোয় ধরে রাখতে পারব।’’

আরও পড়ুন: ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে বসতে চান বোর্ড প্রেসিডেন্ট

উত্তরপ্রদেশের ভারোহির এক দোকানদারের ছোট ছেলে যশস্বী। সেখান থেকে ক্রিকেটকে বাঁচার অবলম্বন করে মুম্বই চলে আসেন তিনি। বাবা আপত্তি করেননি, কারণ তাঁর পক্ষেও সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল দিনকে দিন। মুম্বইয়ে আসার পরে যশস্বীর লড়াই মাঠের বাইশ গজ থেকে ছড়িয়ে পড়ে জীবনের বাইশ গজেও। মুম্বইয়ে এসে কাকার বাড়িতে ছিলেন কিছু দিন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা দেখা দেয়। এর পরে তিন বছরের জন্য যশস্বীর ঠিকানা হয়েছিল আজাদ ময়দানের একটি ক্লাব তাঁবু। সেখান থেকেই স্বপ্নের উত্থান।

চলতি মরসুমে বিজয় হজ়ারে ট্রফিতে দুরন্ত ফর্মে আছেন যশস্বী। ইতিমধ্যেই দুটো সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। এ দিন তাঁর ইনিংসে ছিল ১২টি ছয়, ১৭টি চার। ঝাড়খণ্ডের বোলারদের মধ্যে ছিলেন পেসার বরুণ অ্যারন এবং বাঁ-হাতি স্পিনার শাহবাজ় নাদিম। কিন্তু তাঁরা কোনও সমস্যা তৈরি করতে পারেননি।

সমস্যা তৈরি করতে পারেনি দারিদ্রের কঠিন চ্যালেঞ্জও। বছর খানেক আগে ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পাওয়ার পরে যশস্বী বলেছিলেন, ‘‘রাম লীলা চলার সময় পানিপুরি বিক্রি করে বেশ লাভ হত। কিন্তু প্রার্থনা করতাম, আমার মাঠের সঙ্গীরা যেন ওখানে চলে না আসে। মাঝে মাঝে কেউ না কেউ ঠিক চলে আসত। তখন ওদের পানিপুরি বিক্রি করতে খারাপ লাগত।’’

খারাপ লাগত রাতে একা, একা তাঁবুতে শুতেও। যশস্বীর কথায়, ‘‘আমার বাড়ির কথা, পরিবারের কথা খুব মনে পড়ত। তখন কান্না সামলাতে পারতাম না।’’ যশস্বীর প্রশংসা আগেই শোনা গিয়েছিল মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচ সতীশ সামন্তের কথায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যশস্বী খুব ভাল করে বুঝে যেতে পারে বোলাররা কী ভাবছে। ওর আরও একটা গুণ পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Yashasvi Jaiswal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE