Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাঠান ঝড়ে এ বার প্লে-অফ

গ্যালারিতে জ্বলে উঠেছে হাজার হাজার মোবাইল। যেন নাইটদের মেঘমুক্ত আকাশে ফুটে উঠেছে অসংখ্য তারা। ইডেনের গ্যালারি উপচে পড়া মানুষের মুখে তখনও শেষ হাসি ফোটেনি। উল্লাসের প্রস্তুতি চলছে মাত্র। গ্যালারিতে জায়গায় জায়গায় বাঁধা হচ্ছে ঝাঁক ঝাঁক বেগুনি বেলুন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সূর্য ডুবিয়ে আইপিএল প্লে-অফে ওঠা তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

নাইটদের প্লে-অফে তুলে জুহি চাওলার সঙ্গে ইউসুফ পাঠানের ‘চ্যাম্পিয়ন’ নাচ। রবিবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

নাইটদের প্লে-অফে তুলে জুহি চাওলার সঙ্গে ইউসুফ পাঠানের ‘চ্যাম্পিয়ন’ নাচ। রবিবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৩:৪৪
Share: Save:

গ্যালারিতে জ্বলে উঠেছে হাজার হাজার মোবাইল। যেন নাইটদের মেঘমুক্ত আকাশে ফুটে উঠেছে অসংখ্য তারা।

ইডেনের গ্যালারি উপচে পড়া মানুষের মুখে তখনও শেষ হাসি ফোটেনি। উল্লাসের প্রস্তুতি চলছে মাত্র।

গ্যালারিতে জায়গায় জায়গায় বাঁধা হচ্ছে ঝাঁক ঝাঁক বেগুনি বেলুন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সূর্য ডুবিয়ে আইপিএল প্লে-অফে ওঠা তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

কেকেআর বক্সের সামনের ব্যালকনিতে উড়তে শুরু করে দিল বিশাল পতাকা।

অঙ্কিত রাজপুত শেষ বলটা করতেই রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় শান্ত শহর কাঁপিয়ে শব্দের বিস্ফোরণ ঘটল ইডেনে। হাজারো ওয়াটের গমগমে সাউন্ড সিস্টেমে বেজে উঠল, ‘করব, লড়ব, জিতব রে...’।

সারা মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বেগুনি জার্সিধারীরা চলে এলেন এক জায়গায়।

দু’দিন সবুজে ডুবে থাকার পর রবিবার সন্ধেয় কলকাতা যেন চলে গেল বেগুনির দখলে।

শহরকে তাঁদের রঙে ডুবিয়ে নিলেন নাইটরা।

করেছি, লড়েছি, জিতেছি রেএএএএ....। এ বার প্লে-অফেও খেলব রেএএএএ...।

লিগ পর্বে ১৬ পয়েন্ট পেয়ে যে আইপিএল ২০১৬-য় ষোলো কলা পূর্ণ করার দিকে দৌড় শুরু করে দিল বেগুনি-বাহিনী, তা নিয়ে আর কোনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রইল না।

প্লে অফের প্রথম হার্ডল ফের সেই হায়দরাবাদ। পটভূমিটা শুধু পাল্টে ইডেন থেকে হবে ফিরোজ শাহ কোটলা। রবিবার ইডেনে যদি তার ট্রেলার দেখিয়ে থাকেন গৌতম গম্ভীররা, তা হলে আশা করা যায় এই প্রথম হার্ডলটাও তাঁরা জিতবেন। তার পর ফাইনালের দিকে এগোনোর পালা।

রবিবার ইডেনের সান্ধ্য উত্সব অবশ্য শুরু হয়ে গেল এ সব হিসেব-নিকেশের অনেক আগেই। জয়ের জন্য ১৭২-এর লক্ষ্য নিয়ে নামা সানরাইজার্স ইনিংসের শুরুতেই। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে সুনীল নারিনকে রির্ভাস সুইপ করতে যাওয়া ডেভিড ওর্য়ানারের লেগ স্টাম্প যখন ছিটকে গেল।

এমনিতেই এ বার আইপিএলে সানরাইজার্স সম্পর্কে একটা প্রবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একাধিক বার। ওয়ার্নারই এই দলটার ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন চললে দল দৌড়বে আর ইঞ্জিন থেমে গেলে দলের দৌড়ও শেষ। তাদের গত আটটা জয়ের দু-একটা বাদ দিলে এই ঘটনাই ঘটেছে বারবার।

তাই নাইট বোলারদের সামনে এ দিন ছিল স্রেফ এক দফা কর্মসূচি। শুরুতে ওয়ার্নারকে থামিয়ে দাও। তাঁর দল আপনিই হাঁটু মুড়ে বসে পড়বে। হায়দরাবাদে গিয়েও তো কেকেআর এই একই নীল নকশায় সাফল্য এনেছিল। চার নম্বর ওভারে তাঁকে ফিরিয়ে দিয়ে সে দিন যেমন অর্ধেক যুদ্ধ জিতে নিয়েছিলেন নাইটরা, এ দিনও সেই একই রাস্তায় হেঁটে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেন তাঁরা। সেই চতুর্থ ওভারেই ওয়ার্নার-বিদায়। তার পর থেকেই ম্যাচের মোড় ঘোরা শুরু।

আধ ঘণ্টা আগে ৩৪ বলে ৫২-র অপরাজিত ইনিংস খেলে যে ইউসুফ পাঠান দলকে খাদের কিনারা থেকে সাফল্যের সমতলে নিয়ে এসেছিলেন, সেই ইউসুফকেই শুরুতে বল করতে পাঠিয়ে গম্ভীর তাঁর প্রথম এগারোয় চার স্পিনার রাখার সিদ্ধান্তের প্রতি বোধ হয় সুবিচার করলেন। তৃতীয় ওভারে সাকিব আল হাসান যেন তুরুপের তাস সুনীল নারিনের আগমনের ‘প্রিলিউড’।

চতুর্থ ওভারে এলেন নারিন। প্রথম বলটাই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে মিস করলেন ওয়ার্নার। একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী লাগছিল তাঁকে। পরের বলটা লং অনের উপর দিয়ে ছয়।

আর তার পরের বলেই বিদায়!

সেই যে ম্যাচের রাশ হাত থেকে বেরোনো শুরু হল সানরাইজার্সের, আর তা ফিরে পাননি শিখর ধবন, নমন ওঝা, যুবরাজ সিংহ, কেন উইলিয়ামসনরা। ফের বল করতে এসে জোড়া আঘাত হানেন নারিন। পীযূষ চাওলার বদলে চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদবকে নেওয়ার ফাটকাটাও এ দিন লেগে গেল। তাঁরও জোড়া শিকার।

জীবনের সেরা টেস্ট ইনিংসের মাঠে ডাগ আউটে বসে তাঁর দলের উপর এই ‘অত্যাচার’ দেখতে হল মেন্টর ভিভিএস লক্ষ্মণকে। তা-ও বহু যুদ্ধের নায়ক যুবরাজ সিংহ যত ক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, তত ক্ষণ সানরাইাজার্স শিবিরে যেন সূর্যাস্ত থমকে ছিল। কুলদীপকে পরপর দুটো ছয় হাঁকিয়ে সেই আশা জিইয়েও রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু মহারাজের মাঠে নায়ক হয়ে ওঠা হল না যুবরাজের। সাকিবকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের ধারে ধরা পড়ে গেলেন। সেলিব্রেশনের প্রস্তুতি তখনই শুরু হয়ে যায় ইডেনে।

গোটা আইপিএলে দুর্দান্ত বোলিং করে আসা মুস্তাফিজুরের হাতে যখন বল দিয়েছিলেন ওয়ার্নার, তখন পাঠান ও মণীশ পাণ্ডে তাঁদের বুলডোজার চালানো শুরু করে দিয়েছেন। দলের প্রধান স্ট্রাইক বোলারকে আনতে কেন এত দেরি, বোঝা গেল না। কেকেআরের দুই ব্যাটসম্যানই তখন বিধ্বংসী মেজাজে। গম্ভীর, উথাপ্পা, কলিন মানরো ফিরে যাওয়ার পরেও যে ভাবে এই দুই বিগ হিটার সানরাইজার্স বোলারদের দুরমুশ করলেন, তাতে ১৮০-১৯০ তোলার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। শেষ তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান ওঠায় যা আর হল না। যদিও গম্ভীররা ম্যাচের শেষে জানিয়ে দিলেন, ১৬০-এর লক্ষ্য নিয়েই ব্যাট করতে নেমেছিলেন তাঁরা। সেই গেমপ্ল্যান পাঠান-পাণ্ডের ৮৭ রানের দুর্ধর্ষ পার্টনারশিপে সুপার-ডুপার হিট। দু’জনে মিলে পাঁচটা করে ছয় ও চার হাঁকিয়ে মাতিয়ে দিলেন ইডেন।

প্রবাদই আছে, শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। লিগের শেষটা ভালই হল। এ বার প্লে-অফের পালা।

আর দু’ধাপ পেরোলেই রবিবারের ফাইনাল। তার পরেই আইপিএল ’১৬-র ষোলো কলা পূর্ণ হবে। আগামী এক সপ্তাহ যে দিনটাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখবে নাইটদের শহর কলকাতা!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: কলকাতা নাইট রাইডার্স ২০ ওভারে ১৭১-৬ (ইউসুফ ৫২ ন.আ, মণীশ ৪৮), সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২০ ওভারে ১৪৯-৮ (শিখর ৫১, নারিন ৩-২৬)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KKR SRH Ipl 2016 Yousuf Pathan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE