Advertisement
E-Paper

সানির সঙ্কল্পকে উদাহরণ করতে বলছেন জাহির

‘‘আমাদের সময়ে যতটা বল খেলা হত, ততটাই বল ছাড়ার অভ্যেসও ছিল। বলাই হত, পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কে কত ভাল ব্যাটসম্যান, বোঝা যাবে কে কত ভাল বল ছাড়তে পারে তা দেখে। ব্যাটিংয়ে বল ছাড়াটা একটা শিল্প, যেটা এখন আর দেখি না,’’ শুক্রবার লর্ডসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন জাহির আব্বাস।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫১
সাক্ষাৎ: লর্ডসে জাহির আব্বাস (বাঁ দিকে)। দেখা হয়ে গেল দিলীপ দোশীর (ডান দিকে) সঙ্গে। শুক্রবার ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট ম্যাচের ফাঁকে। নিজস্ব চিত্র

সাক্ষাৎ: লর্ডসে জাহির আব্বাস (বাঁ দিকে)। দেখা হয়ে গেল দিলীপ দোশীর (ডান দিকে) সঙ্গে। শুক্রবার ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট ম্যাচের ফাঁকে। নিজস্ব চিত্র

ইংল্যান্ডে ধুঁকতে থাকা ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সামনে সেরা উদাহরণ হতে পারেন সুনীল গাওস্করই বলে মনে করছেন জাহির আব্বাস। পাকিস্তানের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের ইংল্যান্ডের মাটিতে ঈর্ষণীয় রেকর্ড। ৯ টেস্টে এখানে করেছেন ৮৪১ রান। গড় ৫৬.০৬। কেরিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর ২৭৪ ছিল এজবাস্টনে। তার তিন বছর পরে ওভালে করেন ২৪০।

‘‘আমাদের সময়ে যতটা বল খেলা হত, ততটাই বল ছাড়ার অভ্যেসও ছিল। বলাই হত, পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কে কত ভাল ব্যাটসম্যান, বোঝা যাবে কে কত ভাল বল ছাড়তে পারে তা দেখে। ব্যাটিংয়ে বল ছাড়াটা একটা শিল্প, যেটা এখন আর দেখি না,’’ শুক্রবার লর্ডসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন জাহির আব্বাস। লন্ডনে তাঁর বাড়ি আছে। লর্ডস থেকে কাছেই। মাঝেমধ্যে সেখানে ছুটি কাটাতে আসেন। এ বারও তাই এসেছেন। শুক্রবার চলে এলেন লর্ডসে খেলা দেখতে।

দেখা গেল এখনও জনতার কাছে মহাতারকা তিনি। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার সময়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে বার বার অটোগ্রাফ আর নিজস্বীর আবদার মেটাতে হচ্ছিল। দেখা হয়ে গেল পুরনো দিনের এক প্রতিপক্ষের সঙ্গেও— দিলীপ দোশী। ইংল্যান্ডে দীর্ঘদিন থাকার পরে ভারত এবং বাংলার প্রাক্তন বাঁ হাতি স্পিনার ফিরে গিয়েছেন নিজের দেশে। এখন মুম্বইয়ে থাকেন। তিনিও শুক্রবার লর্ডসে এসেছিলেন। জাহিরকে দেখতে পেয়ে পুরনো দিনের নানা স্মৃতি রোমন্থনের ফাঁকেই বললেন, ‘‘চলো, এর মধ্যে একসঙ্গে ডিনার করব।’’ বরাবরের সেই ভারত-পাক ক্রিকেটের আবেগপূর্ণ ছবি। মাঠের মধ্যে তীব্র সংঘাত, বাইরে বন্ধুত্ব।

ইংল্যান্ডের মতো প্রতিকূল পরিবেশে সফল হতে গেলে টেকনিক, অধ্যবসায় আর সংকল্প থাকতে হবে বলে মনে করেন জাহির। ক্রিকেট যতই বদলাক, টেস্ট ব্যাটিংয়ের ব্যাকরণে কোনও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। ‘‘আমাদের সময়ে যিনি ব্যাটিং ব্যাকরণের সেরা উদাহরণ ছিলেন, তিনি তো এক ভারতীয়ই— সুনীল গাওস্কর। আমার কাছে সব সময় উনিই সেরা থাকবেন,’’ বলছেন তিনি, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে যদি সফল হতে হয়, তা হলে এই ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানদেরও সানিকেই উদাহরণ করতে হবে। বিশেষ করে ওপেনারদের। ও রকম অধ্যবসায় লাগবে, টেকনিক ভাল হতে হবে, নতুন বল ছাড়তে জানতে হবে, সংকল্প থাকতে হবে।’’

অটল: এখনও সুনীল গাওস্করের ব্যাটিংয়ের ভক্ত জাহির আব্বাস।

গাওস্করকে নিয়ে একটি পুরনো ঘটনাও মনে পড়ে গেল তাঁর। ‘‘আমরা দু’জনে একটা ভারত-পাক ম্যাচে শো করছিলাম। এক ব্যাটসম্যান স্লিপে খোঁচা দিয়ে আউট হল। খেলার ধরন দেখে সানি আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমি ওঁর দিকে তাকাচ্ছি। তার পরে সানি বললেন, আমাদের সময়ে এ রকম আউট হলে কোচ তক্ষুনি বলতেন, যাও মাঠে গিয়ে পনেরো রাউন্ড দৌড়াও।’’

সচিন তেন্ডুলকরের যেমন একশো আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি রয়েছে, তেমনই জাহিরের ছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একশো সেঞ্চুরি। সেই প্রসঙ্গ তোলায় বললেন, ‘‘তখনকার দিনে ঘরোয়া ক্রিকেট বেশ কঠিন পরীক্ষা ছিল। সব ভাল ক্রিকেটাররা খেলত। একশো সেঞ্চুরি করতে আমাকে অনেক সময় ক্রিজে কাটাতে হয়েছে। এখনকার ব্যাটসম্যানদের দেখি টেস্টেও খুব তাড়াহুড়ো। ও রকম করে কি আর টেস্টে রান করা যায়!’’

এটা কি টি-টোয়েন্টি এবং সীমিত ওভারের ক্রিকেটের রমরমার ফল? জাহিরের জবাব, ‘‘সে রকমই তো মনে হয়। ক্রিকেটারেরাও জানে, ওই দু’টো ফর্ম্যাট খেললেই টাকা আসবে। টেস্ট ক্রিকেটের কদর করবে কেন? এখন তিন-সাড়ে তিন দিনেও টেস্টের ফয়সালা হয়ে যাচ্ছে।’’ ভারতীয় বোলার দেখলে সব চেয়ে নির্দয় হয়ে উঠতেন জাহির। ভারতের বিরুদ্ধে ১৯ টেস্টে করেন ১৭৪০ রান। গড় ৮৭। কেরিয়ারের ১২ সেঞ্চুরির মধ্যে ৬টি ভারতের বিরুদ্ধে। সর্বোচ্চ ২৩৫ নট আউট।

তবে বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে তুলনা করা পছন্দ নয় তাঁর। তাই সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড বিরাট কোহালি ধরতে পারবেন কি না বলে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা থেকে দূরে থাকতে চান। বললেন, ‘‘তুলনা করব না। সচিন দীর্ঘ দিন ধরে শ্রেষ্ঠ স্থান ধরে রেখেছিল। ওর রেকর্ড অসাধারণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশো সেঞ্চুরি। টেস্ট, ওয়ান ডে দু’ধরনের ক্রিকেটেই সমান ভাবে সফল। তবে এখনকার প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কোহালিই এগিয়ে। ওর সঙ্গে অন্যদের গুণগত মানের তফাত খুব সহজেই ধরে ফেলা যায়।’’ আরও এক ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে তাঁর ভাল লাগে। রোহিত শর্মা। ‘‘কী সব দুর্ধর্ষ স্ট্রোক খেলে ছেলেটা!’’ বলছেন তিনি।

ভারত-পাক ক্রিকেট শুরু হওয়া উচিত বলেও মনে করেন প্রাক্তন আইসিসি প্রেসিডেন্ট। ‘‘আমার কাছে এখনও ক্রিকেটের সেরা দ্বৈরথ এটাই। খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতেই তো লোকে মাঠে আসে। আমি নিশ্চিত দুনিয়া জুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা ভারত-পাক দ্বৈরথ দেখতে চান,’’ বলছেন তিনি। নতুন পাক প্রধানমন্ত্রী কি উদ্যোগ নিতে পারেন? জাহিরের উত্তর, ‘‘ইমরান নিজে ক্রিকেটার ছিল। এত ভারত-ম্যাচ খেলেছে। ও নিশ্চয়ই চাইবে, খেলাটা বন্ধ না থাকে। কিন্তু জট খুলতে গেলে ভারত সরকারকেও রাজি হতে হবে।’’

Cricket Test India England Zaheer Abbas Sunil Gavaskar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy