সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদ কোচ। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার
মিডিয়ার বিতর্কিত প্রশ্নে কখনও তিনি বিরক্ত। “কে বলেছে আমি হোম সিক। এই তো আমি বসে আছি। রবিবার কলকাতা লিগের ম্যাচ খেলব।”
কখনও তিনি বিনয়ী। “আরে কলকাতা লিগে যদি জুনিয়রদের খেলাতে না পারি, তা হলে ওদের খেলাব কোথায়? কলকাতা লিগেও র্যান্টি খেলবে! আবার এ এফ সি কাপেও! প্লিজ, একটু বুঝুন। বোঝার চেষ্টা করুন।”
কখনও একেবারে বাস্তবের মুখোমুখি। “আইএসএলের ঠিক পরেই ফেড কাপ হওয়ায় মানিয়ে নিতে একটু তো সমস্যা হবেই। কারণ বিভিন্ন দলের হয়ে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা আইএসএল খেলবে। ফেরার পর তাদের মধ্যে বোঝাপড়ার সমস্যা হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। কী আর করা যাবে। চেষ্টা করতে হবে।”
কখনও লক্ষ্যে স্থির। “কলকাতা লিগ তো ইস্টবেঙ্গল বহু বার পেয়েছে। কিন্তু এ এফ সি কাপ আর আই লিগ জেতাই আমার প্রথম লক্ষ্য।”
আবার কখনও একেবারেই আবেগপ্রবণ। “আরে গত বার আই লিগ পাইনি বলে তো এক সময় ভেবেছিলাম, আর কোচিং-ই করাব না। কিন্তু কর্তাদের অনুরোধে ফের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফিরলাম আই লিগ জিতব বলে। গত বার তো শেষ মূহূর্তে ছিটকে গিয়েছিলাম।”
সংশয়ীও হয়ে পড়লেন এক সময়। “জানি না আইএসএল ভারতীয় ফুটবলকে কতটা উপকৃত করবে! এখনই তা বলা যাবে না।”
আবেগপ্রবণ হয়ে শোনাচ্ছিলেন, ছোটবেলায় পিতৃহীন হওয়ার পর কী ভাবে ঠাকুমা আর মা তাঁকে ফুটবলার হওয়ার জন্য উদ্দীপ্ত করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে নানা রকম মুডে পাওয়া গেল দেশের সফলতম ক্লাব কোচ ইস্টবেঙ্গলের আর্মান্দো কোলাসোকে। পাশে বসে ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে যিনি দু’দিন পর শুরু হতে যাওয়া কলকাতা লিগকে পাঁচ নম্বর টুর্নামেন্ট হিসাবে ধরছেন। “আমার বিচারে আই লিগ, ফেড কাপ, ডুরান্ড, আই এফ এ শিল্ডের পর পাঁচ নম্বর হবে কলকাতা লিগ।”
যিনি পড়শি ক্লাব মোহনবাগানের নাম না করে বলেন, “কত কোটি কোটি টাকার বিদেশি ফুটবলার তো আনল ওরা। ট্রফি কেন, ট্রফির ছায়া পর্যন্ত গত চার বছরে ঢোকেনি ওদের ক্লাবে।”
সচিব কটাক্ষ করলেও আর্মান্দো কিন্তু বাগানকে নিয়ে কোনও ঠেস দেওয়া মন্তব্য করেননি। বরং ফের বলে দিয়েছেন, “আমি জানি কর্তা, সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে প্রচুর সমস্যা আছে। কিন্তু সেটা কেন হবে! কলকাতা লিগের পর মোহনবাগানের সঙ্গে যদি কোনও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হয়, কোনও সমস্যা নেই।”
নিজের অন্য কিছু ইচ্ছাও লাল-হলুদ কোচ জানিয়ে দিয়েছেন এই মঞ্চে বসেই। “জুনিয়রদের নিয়ে আমি ডুরান্ড কাপ খেলতে আগ্রহী। তবে কলকাতা লিগের জুনিয়রদের পারফরম্যান্স দেখে ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।” তাঁর পাশে বসে ক্লাব সচিবও বললেন, “জুনিয়রদের খেলিয়ে খারাপ ফল হলে তো আপনারাই বড় বড় হেডিং করবেন। সে জন্য সব কিছু খতিয়ে দেখেই ডুরান্ডে খেলার সিদ্ধান্ত নেব।” বার বার ঘুরে ফিরে এল কলকাতা লিগ। আর্মান্দো কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। “জুনিয়রদেরই খেলাব।” অনুশীলনে যোগ দেওয়া একমাত্র বিদেশি র্যান্টিকে কি রবিবার মহমেডান ম্যাচে খেলাবেন? “এখনও ঠিক করিনি। হাতে সময় আছে।” এ দিনই ইস্টবেঙ্গল ১০-০ হারিয়েছে বালি প্রতিভাকে। টিম তো তৈরি? আর্মান্দোর মন্তব্য, “এই ফল নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তবে প্র্যাকটিস দেখে কিন্তু আমি খুশি।”
কলকাতা ডার্বি ৩১ অগস্ট। তার আগে আই এস এলের জন্য মেহতাব-অর্ণব-সহ ১৬ ফুটবলার ছেড়ে দিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। কী করবেন? আর্মান্দোর উত্তর, “দেখা যাক কী হয়।” আর কোচের কাছ থেকে মাইক নিয়ে সচিবের মন্তব্য, “সে ক্ষেত্রে আই এস এল ক্লাবদের অনুরোধ করব কিছু ফুটবলার ছেড়ে দিতে।”
আই এস এল নিয়ে প্রশ্নের সময়ই একমাত্র বিব্রত দেখায় লাল-হলুদ কোচ আর সচিবকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy