শেষ বেলার ব্যস্ততা কোলাসোর। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
আর্মান্দো কোলাসোর গন্তব্য লন্ডন। চিডি-র তাইল্যান্ড। হরমনজ্যোৎ খাবড়া কানাডা। মেহতাব হোসেন কাশ্মীর। সৌমিক দে গোয়া। অর্ণব মণ্ডল পাহাড়ের দিকে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের পাশে লেখা জায়গাগুলোর নাম দেখলে অনেকেই আঁতকে উঠতে পারে! সবাই কি দল বদলের দিকে ঝুঁকলেন?
নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। দেশ-বিদেশের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে দল বদলের সম্পর্ক নেই। গরমের ছুটিতে লাল-হলুদের ফুটবলাররা কে কোথায় সময় কাটাবেন, এটা সেই ভ্রমণ-সূচি। তবে সপরিবার প্রাণ খুলে যে ছুটির আনন্দে মাতবেন চিডিরা, তার উপায় নেই। লাল-হলুদ গোলমেশিন থেকে অধিনায়ক মেহতাব সবার ভ্রমণপথ আলাদা হলেও, আই লিগ জিততে না পারার আফসোসে সবার হৃদয় একসঙ্গে গেঁথে। রবিবার প্র্যাকটিসের পরে ক্লাব তাঁবুতে দাঁড়িয়ে চিডি বলছিলেন, “বেঙ্গালুরুর সঙ্গে পয়েন্টের তফাত আরও একটু বেশি হলে বোধহয় এতটা কষ্ট হত না! এত গায়ে গায়ে শেষ হল বলেই মেনে নিতে অসুবিধে হচ্ছে।”
আই লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেড স্পোর্টসও অবনমন-আশঙ্কা থেকে মুক্ত। তা হলে সোমবারের ম্যাচে ফুটবলারদের মোটিভেশন কী? আছে। ইউনাইটেড যখন ‘যার শেষ ভাল, তার সব ভাল’ থিওরি নিয়ে মাঠে নামতে চাইছে, তখন আর্মান্দোর চোখ এএফসি কাপে। লাল-হলুদ কোচ বলছিলেন, “সবাই নীল আর্মস্ট্রংকে চেনে। কিন্তু চাঁদে পা রাখা দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম বলতে পারবেন? সেকেন্ড বয়-কে কেউ মনে রাখে না। তাই আমার কাছে এই ম্যাচটা শুধু এএফসি কাপ খেলার টিকিট।” রবিবার সাতসকালে ক্লাব তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেল, কোচের মতো ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররাও এএফসি কাপকে পাখির চোখ করেছেন। মেহতাব বললেন, “এত কাছাকাছি এসেও আই লিগ জিততে না পারার আফসোস যাবে না। শেষ ম্যাচ জিতে এএফসি কাপে খেলাটা নিশ্চিত করতে চাই।” প্রায় দেড় মাস বাদে ফের লাল-হলুদ জার্সিতে খেলতে দেখা যাবে মেহতাবকে। চোটের জন্য অবশ্য খেলতে পারবেন না মোগা ও রবার্ট।
বেঙ্গালুরু চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ায় আই লিগ নিয়ে উন্মাদনা নেই ময়দানে। না হলে মরসুমের শেষ প্র্যাকটিস আর ক্লাব তাঁবুতে চিডি-সুয়োকাদের গ্যালারি ফাঁকা! আসলে আই লিগের কৌতূহল ভুলে এখন নতুন মরসুমের দল বদলের অঙ্ক কষতে ব্যস্ত সদস্য-সমর্থকেরা। আর্মান্দো কি থাকছেন? র্যান্টি ছাড়া আর তিন বিদেশি কে হবেন? বাইরের রাজ্যের কোনও ফুটবলার আসছেন?
শেষের দু’টো উত্তর এখনও পরিষ্কার না হলেও, প্রথম প্রশ্নের জবাব নিজের মুখেই দিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ, “সম্ভবত পরের মরসুমে ইস্টবেঙ্গলেই থাকব। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি যাচ্ছি। ২২ মে আমার মেয়ের বিয়ে। সেটা মিটে যাওয়ার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” একটু থেমে আর্মান্দো যোগ করলেন, “র্যান্টির মতো ফুটবলার যে-কোনও টিমের সম্পদ। আমি ম্যানেজমেন্টকে দলে খুব বেশি পরিবর্তন করতে বারণ করেছি।” ইঙ্গিত পরিষ্কার, ইস্টবেঙ্গল পরের মরসুমেও গোয়ার বাসিন্দার উপরই ভরসা রাখতে চলেছে।
আর সেটাই তো স্বাভাবিক! মরসুমের মাঝপথ থেকে টিমের দায়িত্ব নিয়ে আই লিগে ‘সেকেন্ড বয়’। কলকাতা লিগ। তাও আবার অনেক ম্যাচেই উগা-মোগা-মেহতাবের মতো দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছাড়াই। কিন্তু যে আই লিগ জেতার স্বপ্ন ময়দানে প্রথম মরসুমে অধরা থেকে গেল, সেটা কি সেকেন্ড ইনিংসে ছোঁয়া সম্ভব? আর্মান্দোর যুক্তি, “কর্তারা যদি আই লিগকে হ্যামবার্গার বা হটডগ ভাবে তা হলে চলবে না। আই লিগ এক কামড়ে শেষ করা যায় না। ধৈর্য ধরতে হবে। ফুটবলারদেরও আরও নিষ্ঠা দিয়ে খেলতে হবে।”
আর্মান্দো তা হলে শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগেই নতুন মরসুম নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিলেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy