Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আড়ষ্টতা মুছে ইডেন ভাসল পুনর্মিলনের আবেগে

২৬ মে ২০১৩। আইপিএল সিক্স ফাইনাল। ২০ মে ২০১৪। আইপিএল সেভেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংস। দুটো ম্যাচের মধ্যে কেটে গিয়েছে প্রায় একটা বছর। ক্রিকেট-বিনোদনের নেশাতুর ককটেলে চুমুক দেওয়া হয়নি এই শহরের। দুটো মে মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বলতে সচিন তেন্ডুলকরের ১৯৯তম টেস্ট। কিন্তু সেটা ছিল ক্রিকেট শোকসভা। চাপা কান্নার মঞ্চ, প্রাণখোলা উচ্ছ্বাসের নয়।

বিমর্ষ ধোনি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বিমর্ষ ধোনি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০২:৫০
Share: Save:

২৬ মে ২০১৩। আইপিএল সিক্স ফাইনাল।

২০ মে ২০১৪। আইপিএল সেভেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংস।

দুটো ম্যাচের মধ্যে কেটে গিয়েছে প্রায় একটা বছর। ক্রিকেট-বিনোদনের নেশাতুর ককটেলে চুমুক দেওয়া হয়নি এই শহরের। দুটো মে মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বলতে সচিন তেন্ডুলকরের ১৯৯তম টেস্ট। কিন্তু সেটা ছিল ক্রিকেট শোকসভা। চাপা কান্নার মঞ্চ, প্রাণখোলা উচ্ছ্বাসের নয়।

সাড়ে তিনশো দিনের উপর ‘সুখা’ থাকা শহর যে এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে এই ম্যাচটাকে দু’হাত ভরে পান করতে চাইবে, তার চেয়ে স্বাভাবিক আর কী হতে পারে! আইপিএল ভক্তের ভাল লাগার সব কিছুই এ দিন হাজির ছিল ইডেনে। ডিজে কনসোল, চিয়ারগার্লের নাচ, ওভারের মাঝে বলিউডি গানের ফোড়ন, সব। ময়দান চত্ত্বরে চেনা ভিড় হেডব্যান্ড, জার্সি, ফ্ল্যাগ বিক্রি হচ্ছে দেদার। কোথাও খুদে আইপিএল ভক্ত দাঁড়িয়ে পড়ছে গালে পছন্দের টিমের রং মাখতে। কোথাও জার্সি নিয়ে দরাদরি। সোনালি-বেগুনি বর্মে ঢাকা ইডেনে ঢুকতে হবে না, তার আগেই বোঝা যাবে শহরে আজ আইপিএলের অকালবোধন।

ম্যাচের অর্ধেকটা শেষ হওয়া পর্যন্তও যেটা বোঝা যাচ্ছিল না সেটা হল, নাইটদেরও কি আজ বোধন? বোঝা যাচ্ছিল না কারণ, ৬৫ হাজারের ঠাসা ইডেনে শুধু সোনালি-বেগুনি নয়, ছিল বেশ কয়েকশো হলুদ জার্সিও। বোঝা যাচ্ছিল না কারণ, চেন্নাই অধিনায়ক এবং শহরের জামাই ব্যাট করতে নামার সময় ইডেন ফেটে পড়ছিল ‘ধোনি... ধোনি’ চিৎকারে। বোঝা যাচ্ছিল না কারণ, কর্পোরেট বক্সে শাহরুখ খান তো নয়ই, সমর্থন টানার জন্য জুহি চাওলার মতো হেভিওয়েট নামও ছিল না। জয় মেটা, বেঙ্কি মাইসোর যতই গ্যালারির দিকে হাত নাড়ুন, এসআরকে-র ফ্লাইং কিসের সম্মোহন সেখানে কোথায়!

প্রথম ইনিংস শেষে তাই টিম ধোনি যখন ডাগআউটে ফিরছে, ইডেনে সমর্থনের অদৃশ্য স্কোরবোর্ডে তখন সিএসকে ১: কেকেআর ১। ইডেনের হাবভাব অনেকটা সেই অভিভাবকের মতো, যার প্রিয় ছেলে দীর্ঘ পরবাসের পরে ঘরে ফিরেছে। চেনা, আবার অচেনাও। রিইউনিয়নে তাই কিছুটা আড়ষ্টতা, নিজেকে উজাড় করে দেওয়ায় খানিকটা ইতস্তত ভাব।

কেকেআরের সঙ্গে কলকাতার সম্পর্কটা আইপিএল সেভেন নিলাম-উত্তর অনেকটা সে রকমই তো ছিল। ‘চেনা’ বলতে গৌতম গম্ভীর, সুনীল নারিন, জাক কালিস, ইউসুফ পাঠান। টিমের বেশির ভাগই বেগুনি জার্সিতে নতুন। তার উপর নিলামে বাংলাকে ব্রাত্য রাখার ‘অপরাধ’। এত সবের পরে নাইট রাইডার্স নামেই যে শুধু ‘কলকাতা’ থাকবে, সেটা ভেবে নিলে খুব ভুল হত কি? মাসখানেক আগে পর্যন্ত হয়তো ভুল হত না। কিন্তু মঙ্গলবারের পর আর সেটা বলা যাচ্ছে না। কারণ মঙ্গলবারের ইডেনে নাইট এবং শহরের ক্রিকেট-জনতার যে রিইউনিয়ন আড়ষ্টতা দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেই পুনর্মিলন শেষ হল আবেগের স্রোতে ভেসে।

যে আবেগের শুরু ঠিক কখন, হলফ করে বলা মুশকিল। হয়তো সেটার শুরু উথাপ্পা-গম্ভীর জুটি ওপেন করতে নামা থেকে। হয়তো বা চেন্নাই বোলারকে মারা উথাপ্পার ছক্কা থেকে। হয়তো বা শাহরুখের টুইট থেকে, ‘চলো, আমরা আজ রাজত্ব করি। কারণ আমরা এখন ঘরে খেলছি, কলকাতায়।’

শুরু যেখানেই হোক, নাইট ইনিংসের প্রথম কয়েকটা ওভার যেতে না যেতেই যেন প্রায় ম্যাজিকের মতো দোনামনার খোলস ছেড়ে ইডেনের বেরিয়ে আসা। গ্যালারি থেকে আস্তে আস্তে হলুদ রং মুছে দিয়ে সেখানে সোনালি-বেগুনির দৃপ্ত প্রত্যাবর্তন। নাইটদের প্রতিটা সিঙ্গলসেও উল্লাস, ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, কেকেআর জিতেগা’ স্লোগান পাঠ, ৬৫ হাজারের দর্শক থেকে সমর্থক হওয়া।

মঙ্গলবার রাতে জিতে মাঠ ছাড়ল যে টিম, তাদের কেউ দিল্লিওয়ালা, কেউ কর্নাটকী, কেউ মুম্বইকর, কেউ দক্ষিণ আফ্রিকান, কেউ ক্যারিবিয়ান, কেউ অস্ট্রেলীয়, কেউ আবার সুদূর নেদারল্যান্ডসবাসী। মঙ্গলবারের পর থেকে অবশ্য তাঁদের আরও একটা পরিচয় যোগ হল তাঁরা সবাই এখন কলকাতার। আইপিএল সেভেনে এ যাবৎ টিমটার নামে ‘কলকাতা’ ছিল নিষ্প্রাণ একটা শব্দ মাত্র।

তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে গেল মঙ্গলবারের ইডেন!

চেন্নাইকে এই রানে বেঁধে রাখাটা দারুণ ব্যাপার। স্পিনাররা তো দুর্দান্ত বোলিং করেছেই। কামিন্স ও উমেশের প্রশংসাও করতে হবে। জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে আমাদের। এ বার মিষ্টি দই আর রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে করছে।
গৌতম গম্ভীর

টস হারাটাই খারাপ হল। শুরুতে উইকেটটা স্লো ছিল। ওদের স্পিনাররা তাতে খুবই ভাল বল করল। ক্রমশ ব্যাটিং সহায়ক হয়ে ওঠে। বোলাররা সুযোগ তৈরি করলেও আমাদের ফিল্ডাররা তা নিতে পারল না। রায়না আজও খুব ভাল ব্যাট করেছে। ১০-১৫ রান বেশি দরকার ছিল।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ipltag priodarshini rakshit kkr
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE