মোতেরায় মারণ ওভার! না কি মোতেরায় মৃত্যু মিছিল!
শেন ওয়াটসনের ১৫তম ওভার এবং প্রবীণ তাম্বের ১৬তম ওভার মিলিয়ে ৯ বলের মধ্যে বোর্ডে দু’রান ওঠার ফাঁকে হাফজডন নাইটের পতনের ব্যাখ্যায় কোনটা যুতসই উপমা?
আইপিএল-সাতের কোয়ার্টার সেঞ্চুরি ম্যাচের মহানাটকীয় পট পরিবর্তন যতটা ব্যাখ্যার অতীত, সে রকমই যেন ম্যাচ শেষে অবস্থা পরাজিত কেকেআর ক্যাপ্টেনের। টিভির সামনে কোনও রকমে বলে গেলেন, “এ রকম একটা তেতো হার একটা তেতো বড়ি গেলার মতোই ভীষণ কঠিন। আমি অন্তত এ ধরনের ক্রিকেট কস্মিনকালে দেখিনি!” মুখ চোখ স্পষ্টতই থমথম করছে। প্রথম সাত ম্যাচের পাঁচটায় হারা কোনও দলের অধিনায়কের মুখের চেহারা যেমন হতে পারে আর কী! গৌতম গম্ভীর আরও যোগ করেন, “এর পরেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখনও সাতটা ম্যাচ বাকি আছে। দেখা যাক...।” তার পরেই ফের ভেতরের তীব্র হতাশাটা বেরিয়ে আসে, “তবে আমাদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব কিছুতে উন্নতি দরকার। বোলিংয়ে নারিন, সাকিব ছাড়াও অন্যদের দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যাটিংয়ে ওপেনিং জুটি সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ খেলার পর বাকি কাজটা শেষ করতে পরের ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্ববোধ দেখানো দরকার।”
সতীর্থদের প্রতি কেকেআর ক্যাপ্টেনের এ-হেন ‘ফুল-চন্দন’ নিক্ষেপের সময় টিভিতে নাইটদের ডাগআউটের বিবর্ণ ছবি ভেসে উঠছিল। দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে ডব্লিউ ভি রামন। ফ্যালফ্যালে মুখে বসে বিজয় দাহিয়া। ভাবলেশহীন চোখ ইউসুফ পাঠানের। তার মধ্যেই বিজয়ী রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক শেন ওয়াটসন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে বললেন, “এ বার আমাদের দল গড়ার সময় থেকেই মাথায় রাখা হয়েছে ক্লোজ ম্যাচ বার করতে পারে এমন একটা টিম সেট-আপ। আর তাম্বে নিয়ে কী আর বলব! ও এই টুর্নামেন্টে উইকেট পেয়ে চলেছে তো চলেছেই। বড় ব্যাটসম্যানদের সব সময় আউট করার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। ওর পেমেন্ট বাড়িয়ে দেওয়া উচিত আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজির। সেটা আরও এই কারণে যে, টিমের অধিনায়ক হিসাবে আমার জীবনকে তাম্বে সহজ করে তুলেছে।”
এ বারের আইপিএলের প্রথম হ্যাটট্রিক তাম্বে করার আগের ওভারেই ওয়াটসনও পাঁচ বলে তিন উইকেট নিয়েছিলেন। ১৭১ তাড়া করতে নেমে ১৪ ওভারে বিনা উইকেটে ১২১ থাকা নাইটদের ইনিংসের উপর সেটাই প্রাথমিক ধাক্কা এবং ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট টিভিভাষ্যকার বলায় মুচকি হেসে ওয়াটসনের জবাব, “সত্যি বলতে কী ওই ওভারটায় কিছু ব্যাপার আমার পক্ষে গিয়েছে। তবে এ দিনের আগে পর্যন্ত টুর্নামেন্টে বল হাতে খুব একটা প্রভাব রাখতে পারছিলাম না। সে দিক দিয়ে এক ওভারে তিন উইকেট পাওয়াটা আমায় আত্মবিশ্বাস দেবে।”
আর দিল্লি-চেন্নাইয়ের মধ্যে এ দিনের পরের ম্যাচ শুরুর আগে পর্যন্ত আইপিএল-সাতের সর্বাধিক (১২) উইকেট প্রাপক হিসাবে সর্দার পটেল স্টেডিয়ামে ৪২ বছরের প্রবীণ লেগস্পিনার তাম্বে ‘পার্পেল ক্যাপ’-এর মালিক হয়ে বলে দিলেন, “হ্যাটট্রিক করে আমার মধ্যে একুশ বছরের ছেলের উচ্ছ্বাস এসে পড়েছিল। যে কোনও ধরনের ক্রিকেটে এটাই আমার প্রথম হ্যাটট্রিক। হ্যাটট্রিকের পর আমার এক সতীর্থ আমাকে মাঠে বলল, অ্যায়সা ভি হোতা হ্যায়! তাকে বললাম, ভাই, আমার বিয়াল্লিশ বছর বয়স। ছেলে-ছোকরাদের ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে আমাকে তো পারফর্ম করে যেতেই হবে। সেটাই করে চলেছি।”
বাইশ গজে বিস্ময়
১. আইপিএলের ইতিহাসে কেকেআর প্রথম টিম যারা রান তাড়া করতে নেমে ওপেনিং পাটর্নারশিপে একশোর বেশি তুলেও (১২১) হারল।
২. রাজস্থানের প্রবীণ তাম্বের দু’বলে হ্যাটট্রিক। এর আগে নিউজিল্যান্ডের সেন্ট্রাল ডিসট্রিক্টের বিরুদ্ধে ২০১০ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে দু’বলে হ্যাটট্রিকের নজির ছিল শ্রীলঙ্কার ক্লাব টিম ওয়াম্বার মিডিয়াম পেসার ইসুরু উদানার। তাম্বের প্রথম এবং উডানার দ্বিতীয় উইকেট আসে ওয়াইড বলে।
৩. আইপিএলে বয়স্কতম বোলার হিসাবে হ্যাটট্রিক প্রবীণ তাম্বের। ৪২ বছর ২০৯ দিন বয়সে।
৪. দু’ রানের ব্যবধানে কেকেআরের আট বলে ছয় উইকেট পড়া (১২১-১ থেকে ১২৩-৬)।
৫. আইপিএলে শেন ওয়াটসন প্রথম ক্রিকেটার যিনি চার বার একই ম্যাচে তিরিশ বা তার বেশি রান আর তিন বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড করলেন।
৬. কেকেআরের সর্বোচ্চ ওপেনিং পার্টনারশিপ (১২১)। দু’বছর আগে ৫ মে-তেই ইডেনে পুণে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে গম্ভীর-ম্যাকালামের ১১৩ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড ভাঙলেন এ দিন গম্ভীর-উথাপ্পা।
একটা ভাল দলগত প্রচেষ্টায় হার! কথায় আছে, যার যা প্রাপ্য সে সেটাই পায়। আমাদের এটা প্রাপ্য ছিল না। ওয়েল ডান রাজস্থান রয়্যালস।
—টুইটারে শাহরুখ খান
রাজস্থান রয়্যালস
রাহানে রান আউট ৩০
নায়ার স্টাম্প উথাপ্পা বো সাকিব ৪৪
স্যামসন ক মণীশ বো নারিন ৩৭
ওয়াটসন ক সূর্যকুমার বো নারিন ৩১
বিনি ক দুশখাতে বো বিনয় ১১
স্মিথ ক সূর্যকুমার বো বিনয় ৩
ফকনার ন.আ ১
ভাটিয়া ন.আ ৬
অতিরিক্ত ৭
মোট ২০ ওভারে ১৭০-৬।
পতন: ৫২, ১০৫, ১৩৬, ১৫৩, ১৬৩, ১৬৩
বোলিং: বিনয় ৪-০-৪২-২, উমেশ ৩-০-৩১-০, সাকিব ৪-০-২৫-১, নারিন ৪-০-২৮-২, রাসেল ৩-০-২৭-০, দুশখাতে ২-০-১৪-০।
কলকাতা নাইট রাইডার্স
উথাপ্পা ক ভাটিয়া বো ওয়াটসন ৬৫
গম্ভীর ক স্যামসন বো ওয়াটসন ৫৪
রাসেল বো ওয়াটসন ১
মণীশ স্টাম্প স্যামসন বো তাম্বে ০
সাকিব ন.আ ২১
ইউসুফ ক ও বো তাম্বে ০
দুশখাতে এলবিডাব্লিউ তাম্বে ০
সূর্যকুমার ন.আ ৯
অতিরিক্ত ১০
মোট ২০ ওভারে ১৬০-৬।
পতন: ১২১, ১২২, ১২২, ১২৩, ১২৩, ১২৩।
বোলিং: ওয়াটসন ৪-০-২১-৩, সাউদি ৩-০-৩৩-০, তাম্বে ৪-০-২৬-৩, ফকনার ৪-০-২৭-০, ভাটিয়া ৩-০-৩০-০, তেওয়াতিয়া ২-০-১৮-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy