Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওলন্দাজদের বিরুদ্ধে আজ ‘দুর্যোগের দিনে’ও সেই মেসি-মন্ত্র জপে যাওয়া

দিয়েগো মারাদোনা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি রিও থেকে বুধবার মেসির টিমকে দেখতে সাও পাওলো উড়ে যাবেন কি না? তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এ দিন বলছিলেন, টিমের কতটা কাছে দিয়েগো এ বার যাবে, সেটা নিয়ে নানান কারণে ওর নিজেরই দ্বিধা রয়েছে। তাই মাঠে বসে মেসিদের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার টগবগে সমর্থন জানাবে কি না, দিয়েগো নিজেই জানে না। তা ছাড়া আর্জেন্তিনা এখনও অবধি যা খেলেছে, তাতে দারুণ ভরসাও পাচ্ছে না।

গৌতম ভট্টাচার্য
বেলো হরাইজন্তে শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৫০
Share: Save:

দিয়েগো মারাদোনা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি রিও থেকে বুধবার মেসির টিমকে দেখতে সাও পাওলো উড়ে যাবেন কি না?

তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এ দিন বলছিলেন, টিমের কতটা কাছে দিয়েগো এ বার যাবে, সেটা নিয়ে নানান কারণে ওর নিজেরই দ্বিধা রয়েছে। তাই মাঠে বসে মেসিদের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার টগবগে সমর্থন জানাবে কি না, দিয়েগো নিজেই জানে না। তা ছাড়া আর্জেন্তিনা এখনও অবধি যা খেলেছে, তাতে দারুণ ভরসাও পাচ্ছে না।

একা মারাদোনা নন! আর্জেন্তিনা ফুটবল মহলে কথা বলে মনে হল, নেইমার বিহীন ব্রাজিল যেমন জার্মানির সামনে পড়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল! আর্জেন্তিনার মেসি সঙ্গে থেকেও কিনা ডাচদের নিয়ে মারাত্মক দুর্ভাবনা রয়েছে! গুলেরমো তোফোনি হলেন ওখানকার ফুটবল মহলের এক হর্তা-কর্তা। নিজে কোনও পদে না থেকেও সর্বময় কর্তা গ্রন্দোনাকে তিনি রিমোটে চালান!

সেই তোফোনিকে মঙ্গলবার যখন ফোনে ধরলাম তিনি বুয়েনস আইরেস বিমানবন্দর থেকে ব্রাজিলগামী ফ্লাইটে ওঠার তোড়জোড় করছেন। আর্জেন্তিনা ফুটবল মহলে হাতে গোনা তিন থেকে চার জন ভাঙা-ভাঙা ইংরেজি বলতে পারেন। গয়কোচিয়া, ড্যানিয়েল বার্তোনি, গুলেরমো তোফোনি। তা শেষোক্ত ব্যক্তি তাঁর মোবাইল থেকে বললেন, “নেদারল্যান্ডস সামনে না পড়লেই ভাল হত! আমরা চেয়েছিলাম কোস্টারিকা। দেখে নেবেন সাও পাওলোটাই কার্যত ফাইনাল। কাল যারা জিতবে তারাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!”

শুনে একটু অবাকই লাগল। প্রথমত আর্জেন্তিনার এক ফুটবল-কর্তা এত খোলাখুলি তাঁদের উদ্বেগের কথা বলছেন। তা ছাড়া বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার বরাবরের গাঁট হল জার্মানি! জার্মানদের ওই বলিষ্ঠ ডিফেন্স সংগঠন আর গতিকে বরাবর ভয় পেয়েছে আর্জেন্টাইনরা। এমনকী মারাদোনারও জার্মান ডিফেন্সের বিরুদ্ধে কোনও গোল নেই! অন্য সেমিতে জার্মানি রয়েছে এই অবস্থায় নেদারল্যান্ডস নিয়ে এমন হৃদকম্প কেন!

তোফোনি ব্যাখ্যা করলেন, “নেদারল্যান্ডস এ বারের টুর্নামেন্টে এখন অবধি সেরা টিম! ওদের সে দিন টাইব্রেকার মারাগুলো লক্ষ করেছিলেন! বদলি গোলকিপার নামানো থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা পেনাল্টিওদের পেশাদারিত্বের নিপুণ ছাপ।’’ বেলোর কাছে আর্জেন্টাইন বেসক্যাম্পেও শুনলাম বারবার একটা প্রসঙ্গই আলোচিত হচ্ছে, নেদারল্যান্ডস হল সাংঘাতিক টিম যারা এ বার খুব রাগী হয়ে টুর্নামেন্টে এসেছে। রাগটা কী, না আগের বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়ার। আর্জেন্তিনীয়দের মতে, কোনও টিম যদি এমন দলগত রাগের একটা চলমান ভিত্তিপ্রস্তর নিয়ে ঘোরে তখন তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মারাত্মক হয়ে যায়। তখন তাদের লম্বা টুর্নামেন্টেও ক্রমাগত মোটিভেশন রেখে যাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় না!

হতাশার এই আপাত-সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে বেরোনোর সবুজ আলো অবশ্য মেসির টিমেরই কেউ কেউ তাঁদের অধিনায়ককে দিয়েছেন। বলেছেন, “এক দিক দিয়ে আমাদের সুবিধে হবে। ওরা সুইৎজারল্যান্ড বা বেলজিয়াম নয়। অ্যাটাকে যখন আসবে, সবাইকে নিয়ে ওপেন আসবে। জায়গাটা কালকে বেশি পাওয়া যাবে।”

শুনে টোস্টাওয়ের কথাটা মনে পড়ে গেল। ‘হোয়াইট পেলে’ নামে নিজের সময়ে খ্যাত টোস্টাও থাকেন বেলো হরাইজন্তেয়। কাল এখানকার কাগজে নিজের কলামে তিনি লিখেছেন, ‘মেসি আর নেইমারের কথা ভাবলে আমার খারাপই লাগে। সত্তর দশকে খেললে ওরা আরও বড় স্টার হত! এখন তো ফুটবলে জায়গাই পাওয়া যায় না। তার মধ্যেই ওরা যে ভাবে খেলা তৈরি করে!’

শহরের এক ফুটবল-উৎসাহী তর্জমা করে দিচ্ছিলেন পর্তুগিজ থেকে টোস্টাওয়ের কলাম। এক জায়গায় তিনি রীতিমতো বিলাপই করেছেন, এখন মিডফিল্ডে খেলার জন্য ফুটবলার লাগছে না। ভাল অ্যাথলিট সঙ্গে ফুটবল সেন্স আছে, এ রকম থাকলেই চলবে। শর্ত হল, অবিরাম গোটা মাঠ দৌড়ে ট্যাকল করে যেতে হবে আর ম্যাচ পিছু ১১ কিলোমিটার করে দৌড়নোর স্ট্যামিনা থাকতে হবে।

এটা শুনতে শুনতে আরও মনে হচ্ছে মেসির সতীর্থরা সাও পাওলোয় এ বার যে ওপেন স্পেস পাবে বলে ভরসা করছে, সেটা আদৌ পাবে? স্নাইডার, রবেন আর ফান পার্সিদের মতো ডিফেন্স কচুকাটা করা আক্রমণ এই প্রতিযোগিতায় আর্জেন্তিনা দেখেনি তো নিশ্চয়ই। এর সঙ্গে কোচ লুই ফান গলের মস্তিষ্ক! এক-এক জন কোচ এক-এক ভাবে অপারেশন মেসি সম্পন্ন করতে চেয়েছেন। এক-আধ জন সফল হয়েছেন। বেশির ভাগই হননি। হলে মুন্ডিয়াল ২০১৪-এ আর্জেন্তিনা চব্বিশ বছর পর সেমিফাইনাল খেলত না!

মেসি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আছেন যথাসম্ভব। দি’মারিয়াকে খোয়ানো আর্জেন্তিনা আপাতত আগেরোর প্রত্যাবর্তনী গতির দিকে তাকিয়ে। সামনে আগেরো, ইগুয়াইনরা গতি তুলবেন আর একটু পিছিয়ে মার্কারের আড়ালে খেলতে চাইবেন মেসি! চলতি বিশ্বকাপে মেসি যা খেলছেন তাতে এক-এক সময় মনে হচ্ছে, হাতিবাগানের অফিস টাইমের ভিড় বাসের মধ্যেও ড্রিবল করতে করতে চলে যেতে পারবেন। মেসি রুটটাই খুব সঙ্কীর্ণ জায়গা দিয়ে যাওয়ার মতো করে যেন তৈরি!

প্রশ্ন হল, সেই এক চিলতে জায়গাটা তাঁকে বুধবারের ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বী দেবে? আর্জেন্তিনা সরকার বর্তমানে ঋণের দায়ে জর্জরিত। তাদের অর্থ উপদেষ্টা মোটেও সাও পাওলো উড়ে আসছেন না। বরং গত কাল নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রককে বোঝাতে যে, প্লিজ এখনই আমাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন না। ঋণ শোধের আরও কিছু দিন সময় দিন।

মার্কিনরা সহৃদয় হলেও হতে পারে। নেদারল্যান্ডস হবে এমন কোনও পূর্বাভাস ভবিষ্যতদ্রষ্টা হাতি নেলিও করেনি।

তা হলে আর দুর্যোগের দিনে সেই মেসি-মন্ত্র প্রাণপণ জপে যাওয়া ছাড়া নীল-সাদা জার্সির আর উপায় কী-ই বা খোলা থাকল!

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE