Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাপ-স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে আজ হয়তো ‘এক পা’ নিয়েই রোনাল্ডো

এতটা সাহস পাওলো মালদিনির হত কি না, সন্দেহ! কোথাকার এক ব্র্যাড ইভান্স, তা-ও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন, বিশ্বকাপ শুরুর আগেই য়ুরগেন ক্লিন্সম্যানের নোটবুক থেকে তিনি মাইনাস, চিন্তা সে সব নিয়ে নয়। উল্টে গত মাসে টুইট করে বসেছিলেন যে, ‘ক্রিশ্চিয়ানো, তোমার কাজটা এ বার বেশ সহজ হবে’! শুনলে ফুটবলবিশ্বের টম-ডিক-হ্যারির পর্যন্ত ব্রহ্মতালু চিড়বিড়িয়ে ওঠা উচিত। আর তিনি তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

এতটা সাহস পাওলো মালদিনির হত কি না, সন্দেহ!

কোথাকার এক ব্র্যাড ইভান্স, তা-ও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন, বিশ্বকাপ শুরুর আগেই য়ুরগেন ক্লিন্সম্যানের নোটবুক থেকে তিনি মাইনাস, চিন্তা সে সব নিয়ে নয়। উল্টে গত মাসে টুইট করে বসেছিলেন যে, ‘ক্রিশ্চিয়ানো, তোমার কাজটা এ বার বেশ সহজ হবে’!

শুনলে ফুটবলবিশ্বের টম-ডিক-হ্যারির পর্যন্ত ব্রহ্মতালু চিড়বিড়িয়ে ওঠা উচিত। আর তিনি তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো! বর্তমান ফুটবলবিশ্বের এক নম্বর ফুটবলার। সে দিন ইভান্সের টুইটটা দেখে থাকলে অসহনীয় লেগেছিল নিশ্চয়ই।

ফুটবল যদি সব সময় পোয়েটিক জাস্টিসের সমর্থক হত, তা হলে রবিবাসরীয় মানাউস সিআর সেভেনের হাতে ম্যাচের শাসনদণ্ড তুলে দিত নিশ্চয়ই। অদৃষ্টের এমন পরিহাস যে, রবিবার মানাউসে ইভান্সের যুক্তরাষ্ট্র থাকবে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তিনিও থাকবেন। কিন্তু তাঁর অসম্ভব ক্রিয়াশীল দুটো পা হয়তো থাকবে না।

লোকে তো বলছে, একটা পা নিয়েই যা করার করতে হবে রোনাল্ডোকে। বলছে, ওই একটা পা দিয়েই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে হবে। লিও মেসিকে বোঝাতে হবে তুমি নও, আমার চরম দুঃসময়েও আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ! দেশকে বাঁচাতে হবে। পেপে নেই। কোয়েন্ত্রাও নেই। ডিফেন্স তো বিপক্ষের স্বস্তির রানওয়ে। সর্বোপরি দেশের সঙ্গে বিশ্বকাপে নিজের অস্তিত্বও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

ভরসা ওই একটা পা! যার কি না যুক্তরাষ্ট্র কোচ ক্লিন্সম্যানও আবার বারোটা বাজাতে চাইছেন।

তাঁর অন্য পায়ের অবস্থাটা যে ঠিক কী, সেটা না ক্লিন্সম্যান ধরতে পারছেন, না পর্তুগাল ক্যাম্প থেকে কিছু পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে। অদ্ভুত অদ্ভুত সব রিপোর্ট আসছে সিআর সেভেনকে নিয়ে। কখনও প্র্যাকটিসে হাঁটুতে আইস-প্যাক বেঁধে তাঁকে বসে থাকতে দেখে মিডিয়া বলে দিচ্ছে, ব্যস, খতম! ওর বিশ্বকাপটাই শেষ। আবার এক দিন যেতে না যেতেই শোনা যাচ্ছে, ব্যক্তিগত ডাক্তারকে নাকি ভাল রকম ঝেড়েছেন রোনাল্ডো। অপরাধের মধ্যে ওই ডাক্তার সিআর সেভেনকে উপদেশ দিয়েছিলেন, তোমার হাঁটুর যা অবস্থা, বিশ্বকাপে আর নেমো না। নইলে তোমার বাকি ফুটবল জীবনটাই সঙ্কটে পড়ে যাবে। রোনাল্ডো নাকি উল্টে তাঁকে বলেছেন, “দেখুন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মাঠে নামবে কি না, সেটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোই ঠিক করবে! ডাক্তার নয়।” হেরাল্ড পোস্তিগা বলে গিয়েছেন, রোনাল্ডোকে নিয়ে আশঙ্কা চালাচালিটা একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই হচ্ছে। আর ফিজিক্যাল কন্ডিশন নিয়ে বলতে হলে তাঁর বক্তব্য, পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশনের আহতের লিস্টে রোনাল্ডোর নাম এখনও নেই। যার একটাই মানে হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি আছেন, খেলবেন। আর প্র্যাকটিসে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পোস্তিগার অভিমত, তিনি ডাক্তার নন কিন্তু রোনাল্ডোকে দেখে মনে হয়েছে, সিআর সেভেন ফিট।

কিন্তু রবিবার রোনাল্ডোর প্রতিপক্ষ যারা, তাদের আলাদা একটা ঐতিহ্য আছে। এমন নয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ পর্যন্ত কোনও বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তু নব্বই সাল থেকেই দেখা যায় বড় প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে এরা ভাল রকম ওস্তাদ। রোমারিওর ব্রাজিল হোক বা লুই ফিগোর পর্তুগাল, কিংবা ওয়েন রুনির ইংল্যান্ড কেউ বলতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র অমর্যাদাকর হারে মাঠ ছেড়েছে। ফিগোকে তারা হারিয়ে দিয়েছিল, রুনির সঙ্গে ড্র রেখেছিল, আর টপ ফর্মের রোমারিওর কাছে তারা হেরেছিল মাত্র এক গোলে। তাই রোনাল্ডোর পর্তুগালের সামনে পড়ার আগে তাদের কোচ থেকে প্লেয়ার, সবাই যে সুযোগ পেলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, মোটেও আশ্চর্যের নয়।

আজ নয়, রোনাল্ডোকে ঠেস দিয়ে আক্রমণ শুরু ক্লিন্সম্যান করেছিলেন আজ থেকে ছ’মাস আগে। বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগ ম্যাচ নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করায় ঘানা নিয়ে ‘জিততে হবে’ জাতীয় উত্তরের পর বলে দিয়েছিলেন, “ওটার পরেই সোজা অনিন্দ্যসুন্দর মানাউস। যেখানে তো আবার মিস্টার রোনাল্ডো থাকবেন।” যাঁর বর্ষসেরা ফুটবলারের তালিকায় প্রথমে ফ্রাঙ্ক রিবেরি ছিলেন, তার পরের দুটো স্থানে গ্যারেথ বেল আর রাদামেল ফালকাও। কোনও সিআর সেভেনকে তিনি পছন্দের তালিকায় রাখেননি। রবিবারের যুদ্ধে নামার আগে সিআর সেভেনের প্রতি যে সম্মানটা বাকি পাঁচ প্রতিপক্ষ দেখাবে, ক্লিন্সম্যান উপর-উপর সেটা দেখাচ্ছেন। বলছেন, “পর্তুগাল প্রথম ম্যাচে চার গোল খেয়েছে বলে ওরা আরও ভয়ঙ্কর। ওরা রেগে থাকবে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও রেগে থাকবে। আর রোনাল্ডো রেগে থাকলে ঠিক কী হয়, আমি জানি না।” কিন্তু পরমুহূর্তেই বিনয়ের মুখোশ সরিয়ে বেরিয়ে পড়ছে জার্মান কাঠিন্য। যেখানে ক্লিন্সম্যান হুঙ্কারই দিচ্ছেন, যে ভাবে হোক, যে উপায়ে হোক, মানাউসে রোনাল্ডোর জীবন দুর্বিষহ করে ছাড়বেন।

ক্লিন্সম্যান শোনাতেই পারেন। সেই জায়গাটা তাঁর আছে। ২০০৬ বিশ্বকাপে রোনাল্ডোর পর্তুগালকে তাঁর টিম (সে সময় তিনি জার্মানির কোচ) তিন গোল মেরেছিল। কিন্তু টিম ইউএসএ? তাদেরও তো কোনও ভয়ডর নেই। অতিরিক্ত কাঁপাকাঁপি নেই। মাইকেল ব্র্যাডলি থেকে জার্মেইন জোন্স বলছেন, রোনাল্ডোর ডান পা, রোনাল্ডোর বাঁ পা, চোট না সারলে পড়ে থাকা একটা পা, হেড, যা কোনও কিছুই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। সে সব আটকানোর উপায়? যুক্তরাষ্ট্রের ডামার্কাস বিসলির সহজসরল উত্তর, “কী আবার, ওকে ফাউল করো!”

আজ রবিবারের মানাউস তাই এক অসামান্য মাহেন্দ্রক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে। সিআর সেভেন যদি আজ না পারেন, তা হলে ব্রাজিলই সম্ভবত তাঁকে শেষ বারের মতো বিশ্বকাপের জার্সিতে দেখে নেবে। সিআর সেভেন যদি আজ না পারেন, তা হলে বিশ্বকাপের আকাশ থেকে যেমন আরও এক বড় তারকাচ্যুতি ঘটবে, ঠিক তেমনই লোকে বলবে, ও ক্লাব ফুটবলেই ঠিক আছে। দেশকে একা টানার ক্ষমতা নেই। বরং লিও মেসির ওপর ভরসা রাখা ভাল। ও হয়তো দুটোই পারবে। আর্সেন ওয়েঙ্গার এক বার ফুটবলের দুই মহাতারকাকে নিয়ে বলেছিলেন, লিও মেসি আদতে শিল্পী। যিনি ফুটবলার হয়ে গিয়েছেন। আর রোনাল্ডো চূড়ান্ত অ্যাথলিট।

রবিবারের মানাউসে রোনাল্ডোকে তাই দেখাতে হবে, হাঁটুতে আইস-প্যাক বেঁধেও তিনি এখনও একই রকম অ্যাথলিট। আর হ্যাঁ, শিল্পটাও তাঁর ভাল রকমই আসে। দেশের জন্য দরকারে ওই একটা পায়েই আসে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE