নামটা সেই আটলেটিকো দ্য কলকাতাই থাকল। বুধবার। ছবি: উৎপল সরকার।
আটলেটিকো মাদ্রিদ খেলতে আসছে কলকাতায়।
লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনা খেলে যাওয়ার প্রায় তিন বছর পর আবার কলকাতা চাক্ষুষ করবে বিশ্ব ফুটবলের ঝলক।
নতুন মরসুমের প্রস্তুতি ম্যাচ হিসাবে অগস্টে খেলতে আসবে এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালিস্টরা। ওই ম্যাচে আটলেটিকোর প্রতিপক্ষ কে, তা অবশ্য এখনও ঠিক হয়নি। তবে টিমের এক নম্বর তারকা দিয়েগো কোস্তার ওই টিমের সঙ্গে আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ তার আগেই দলবদল করে চেলসিতে যোগ দেওয়ার কথা কোস্তার।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দল কলকাতা টিমের সঙ্গে চুক্তি করতে শহরে এসেছেন আটলেটিকোর প্রধান কর্তারা। বুধবার দুপুরে বাইপাসের ধারের এক পাঁচ তারা হোটেলে টিমের নামকরণ অনুষ্ঠানের পর আটলেটিকোর মালিক মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মার্টিন বলে দেন, “কলকাতার ফুটবল প্যাশন আমাদের মুগ্ধ করেছে। অগস্টে আমরা পুরো দল নিয়ে এখানে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে আসব।”
কলকাতা টিমের পাঁচ মালিকের এ দিনই ছিল প্রথম যৌথ সাংবাদিক বৈঠক। জার্সির রং, যুবভারতী, কোচ, বিদেশি ও স্বদেশি ফুটবলার নিয়ে জট না কাটালেও ঘোষণা করে দেওয়া হয় টিমের নাম। আইএসএলে কলকাতার টিম খেলবে ‘আটলেটিকো দ্য কলকাতা’ নামে।
জানা গিয়েছে, মাদ্রিদ থেকে আসা আটলেটিকো কর্তাদের সঙ্গে কলকাতার অন্য মালিকদের দু’দিন দফায় দফায় বৈঠকের পর সেই অর্থে কার্যকর কোনও রূপরেখাই তৈরি হয়নি। পুরো ব্যাপারটাই এখনও কেমন যেন ভাসমান। সেটা না হওয়ার অন্যতম কারণ অবশ্য ফুটবল আই পি এলের সংগঠক আইএমজি-আর এখনও টুর্নামেন্টের নিয়মকানুন সম্পর্কে লিগ পার্টনারদের অবহিতই করতে পারেনি। মে মাসের শেষ সপ্তাহে ওয়ার্কশপ করে যা জানানোর কথা।
আটলেটিকো কর্তারা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলার পাশাপাশি আরও যে দু’টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাতে উচ্ছ্বসিত হতেই পারেন কলকাতার অন্য মালিকরা। যেমন, এক) কলকাতার টিমের কোচিং স্টাফরা চাইলে স্পেনে গিয়ে আটলেটিকোর পরিকাঠামো ব্যবহার করে প্রস্তুতি নিতে পারবেন। দুই) বাংলায় একটি পুর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমি করবে আটলেটিকো। যেখান থেকে স্পেনের টিমে খেলার সুযোগ মিলতে পারে। আটলেটিকোর কর্পোরেট বিভাগের প্রধান ইগনেশিও অ্যাগুলিও বলে দিলেন, “চিন, জাপান থেকে যদি ফুটবলার আমাদের টিমে খেলতে পারে তা হলে ভারতের ছেলেরা পারবে না কেন? আমরা বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদের মতো ধনী ক্লাব নই। অ্যাকাডেমি থেকে ফুটবলার তুলে এনেই টিম করি। এতে খরচ কম হয়।”
কিন্তু এর বাইরে যে আর কিছুই হল না। কলকাতার অন্যতম অংশীদার শিল্পপতি হর্ষবর্ধন নেওটিয়া বলছিলেন, “আমার একজন কোচ পাঠানোর জন্য আটলেটিকো কর্তাদের অনুরোধ করেছি।” এই মুহূর্তে লা লিগার শীর্ষে থাকা ক্লাব যদি কোচও পাঠায় তা হলে তাঁকে কি নিতে পারবে কলকাতা? সম্ভবত না। কারণ সুপার লিগের নিয়মানুযায়ী সংগঠকদের তৈরি করে দেওয়া ম্যানেজার বা প্রধান কোচের প্যানেল থেকেই কোচ নিতে হবে। সে জন্য ইতিমধ্যেই তিন জন-- পিটার স্কিমিচেল (ডেনমার্ক), মার্সেল দেশাই (ফ্রান্স), কেনি ডালগ্লিশকে (স্কটল্যান্ড) কে চুক্তিবদ্ধ করে ফেলেছেন সংগঠকরা। আরও পাঁচ জনের সঙ্গে কথা চলছে। কলকাতা টিমের আর এক মালিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “আমরা অনুরোধ করব আটলেটিকোর কোচ যাতে আমাদের টিমের কোচিং করাতে পারেন।”
সমস্যা রয়েছে কলকাতার জার্সি পরে আটলেটিকোর প্রথম দলের নামী ফুটবলার খেলানো নিয়েও! আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর দিল্লি থেকে এ দিন ফোনে বললেন, “ফিফার নিয়মানুযায়ী দু’টো ক্লাবের মধ্যে চুক্তি থাকলে দু’মাসের জন্য একটা টিম থেকে অন্য টিম লিয়েনে ফুটবলার নিতে পারে। পরে ফিরে যেতে পারে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সমস্যা নেই।” লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে না খেলিয়ে আটলেটিকো কি দাভিদ ভিয়া, গাবিদের কলকাতায় পাঠানোর ঝুঁকি নেবে? স্পেনের দলটির কর্তারা কিন্তু নানা সমস্যার কথা শোনাচ্ছেন। ফিফার নিয়ম দেখাচ্ছেন।
সবথেকে বড় সমস্য যুবভারতী। যেখানে হোম ম্যাচ গুলো খেলতে চাইছে কলকাতা। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের জন্য অক্টোবরে ফিফার প্রতিনিধিরা স্টেডিয়ামের অগ্রগতি দেখতে আসবেন। সেক্ষেত্রে সল্টলেকের কৃত্রিম টার্ফ তুলে ফেলতে হবে জুনেই, তা হলে সুপার লিগ হবে কোথায়? তাই বিশ্বকাপ এবং সুপার লিগের মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে রাজ্য ক্রীড়া দফতরকে। বিশ্বকাপ ছেড়ে রাজ্য সরকার তিন মাসের একটা টুর্নামেন্টকে অগ্রাধিকার দেবে কি? সৌরভ এ দিন আবার বলে দিয়েছেন, “ইডেনে ক্রিকেট হবে না, যুবভারতীতে সুপার লিগ হবে না, হয় না কি? করতেই হবে।” অনুশীলন মাঠ নিয়েও সমস্যা আছে। এ দিন সকালে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান এবং পৈলান অ্যারেজের মাঠ ঘুরে দেখেন আটলেটিকো কর্তারা। কোথাও তাদের চোখ কুঁচকেছে, কোথাও খুশি হয়েছেন তাঁরা।
তবে দু’দিনের শেষে পার্টনার সঞ্জীব গোয়েনকা, হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, উৎসব পারেখ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের হাতে আটলেটিকো কর্তারা তুলে দিয়েছেন ‘রোজি ব্ল্যাঙ্কোস’ বা সাদা-লাল জার্সি। দিয়োগো কোস্তার ১৭ নম্বর লেখা ছিল জার্সির পিছনে। তার আগে উত্তরীয় দিয়ে বরণ করা হয় সৌরভদের পক্ষ থেকেও। কলকাতা-মাদ্রিদ মিশে যাওয়ার এই উৎসবের মধ্যেও তাই অনেক প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy