Advertisement
E-Paper

গোমড়া হাবাসও হেসে ফেললেন ফেস্টুন দেখে

জো ডর গয়া ও মন্দির গয়া! শুক্রবার আমির খানের মুখে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পিকে’-র এই সংলাপ শুনেছে কার্গিল থেকে কালিকট। শনিবার গভীর রাতে ২৬/১১ খ্যাত মুম্বইয়ের ট্রাইডেন্ট হোটেলের পার্টি থেকে ফোনে গার্সিয়াদের সহকারী কোচ হোসে রামিরেজ ব্যারেটো অবশ্য বললেন, “যারা ভয় পায় তারা হারিয়ে যায়। হাবাস শিবিরে সেই ভয়টাই ঢুকতে দেননি। তাই আমরা আজ চ্যাম্পিয়ন।” ভয় ছিল না ঠিকই।

রতন চক্রবর্তী ও দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪
সেলিব্রেশন-কোলাজ। বিমানবন্দরে বীরের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন নিরাপত্তা কর্মী।

সেলিব্রেশন-কোলাজ। বিমানবন্দরে বীরের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন নিরাপত্তা কর্মী।

জো ডর গয়া ও মন্দির গয়া!

শুক্রবার আমির খানের মুখে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পিকে’-র এই সংলাপ শুনেছে কার্গিল থেকে কালিকট।

শনিবার গভীর রাতে ২৬/১১ খ্যাত মুম্বইয়ের ট্রাইডেন্ট হোটেলের পার্টি থেকে ফোনে গার্সিয়াদের সহকারী কোচ হোসে রামিরেজ ব্যারেটো অবশ্য বললেন, “যারা ভয় পায় তারা হারিয়ে যায়। হাবাস শিবিরে সেই ভয়টাই ঢুকতে দেননি। তাই আমরা আজ চ্যাম্পিয়ন।”

ভয় ছিল না ঠিকই। কিন্তু বিতর্ক, দলে সুযোগ না পাওয়ার হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, কারও কারও চাপা রাগ তো ছিলই। সেগুলোর কী হল? এ বার ব্যারেটো বললেন, “আরে, সেগুলোকেই তো ফুটবলারদের আবেগের খাঁচায় পুরে তিন মাস লালনপালন হল। আবার এখন ওই সবগুলো পার্টির উত্‌সব, বিনোদন, আনন্দে মিশে যাচ্ছে।”

যাঁকে নিয়ে ময়দানের সবুজ তোতার এত প্রশস্তি সেই হাবাস কিন্তু ছিলেন না ‘স্যাটারডে নাইট’-এ আটলেটিকো দে কলকাতার কাপ জয়ের মহোত্‌সবে। তিনি মাঠ থেকে সোজা হোটেলে নিজের ঘরে চলে গিয়েছিলেন। কোচের মতোই পার্টিতে না গিয়ে স্টেডিয়ামের লাগোয়া শ্যালিকার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন অর্ণব মণ্ডল। সেই অর্ণব অবশ্য আনন্দোত্‌সবের হোতা দেখাচ্ছেন ব্যারেটো, হাবাস-সহ গোটা টিমকেই। “দলগত সংহতির জন্যই তো এই সেলিব্রেশন পার্টি।”

এ তো গেল সচিনের শহরে সৌরভের ফুটবল টিমের আইএসএল ট্রফি জয়োত্‌সব-মুহূর্তের কোলাজ।

পরের সকালেই কলকাতায়?

একই বছরে ‘ডাবল’। শহরে আইপিএল এবং আইএসএল ট্রফি। কিন্তু জুনের শুরুতে গম্ভীরের টিমকে নিয়ে যে সেলিব্রেশন দেখেছিল খেলার শহর, সেই আবেগ, সেই সমর্থক সমাবেশ, প্রশাসকদের মেলা, টলিউডি তারকার ঢল এ দিন কোথায়? কলকাতার আটলেটিকোকে ঘিরে? ‘ডোডো’ পাখির মতোই সব অদৃশ্য!

কলকাতার গর্ব গার্সিয়াদের নিয়ে রবিবার ঘণ্টা দেড়েকের যে উত্‌সব হল তা মোহনবাগানের ২০০২-এর জাতীয় লিগ জয় বা তার পরের বছরই ইস্টবেঙ্গলের আসিয়ান কাপ জিতে ঘরে ফেরার উত্‌সবের ধারে-কাছে থাকবে না। দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে কেক কেটে আর বিশাল ট্রফিটার ভেতর শ্যাম্পেন ঢালার সঙ্গে খানিকটা শ্যাম্পেন-স্নাত হয়েই উত্‌সব সারল চ্যাম্পিয়ন এটিকে। ইডেনে আইপিএল জয়ের মেগা শোয়ের কাছে যা দুধভাত বলে গণ্য হবে।


হঠাত্‌ আবির্ভাব বিতর্কিত ফিকরুর।

দুপুর ১-২৫। ট্রফি নিয়ে শহরে পা দিলেন গার্সিয়ারা। চিত্রনাট্যকে সত্তর দশকের সেলিম-জাভেদের মতোই জমজমাট করে ততক্ষণে বিমানবন্দরে হাজির আটলেটিকোর ‘দুষ্টু ছেলে’ ফিকরু তেফেরাও। গায়ে আবার টিম জার্সিই! বললেন, “টিমকে নিতে এলাম। এই চ্যাম্পিয়ন টিমটার জন্য আমারও কিছু ঘাম-রক্ত আছে যে।”

বাইরে অবশ্য মেরেকেটে শ’দেড়েক আটলেটিকো ফ্যান হাজির ষাট ফুট লম্বা ফেস্টুন নিয়ে। তাতে লেখা‘ওয়েলকাম হোম। ফাটাফাটি ফার্স্ট চ্যাম্পিয়ন।’ যা দেখে সদাগম্ভীর কোচ হাবাসও হেসে ফেললেন ফিক করে। বললেন, “এই জয় মনে থাকবে সারা জীবন।”

আটলেটিকো ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা ছিল ট্রেলারে চাপিয়ে গোটা টিমকে যুবভারতীতে নিয়ে আসা। সেখান থেকে টিম বাসে বেকবাগানের শপিং মলে নিয়ে গিয়ে সংবর্ধনা। কিন্তু তাও বাতিল হয় শেষ পর্যন্ত। শেষ মুহূর্তে কেবল বাতানুকুল টিমবাসেই গার্সিয়াদের নিয়ে হাবাস বাহিনী ছুটল বেকবাগান। চালকের পাশে রাখা হল ট্রফিটা।

বেকবাগানের শপিং মলেও দেখা যায়নি কলকাতার ‘ফুটবল পাগল’দের কাউকেই। বড়দিনের আগের শেষ রবিবার দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে শহর পরিক্রমায় বেরনো ‘জেন ওয়াই’ প্রজন্মই হাজির সেখানে। হাবাস আর গার্সিয়া কাপ নিয়ে গিয়ে রাখলেন ঘূর্ণায়মান মঞ্চে। মিনিট দশেকের মধ্যে ফ্যানদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সটান পাঁচতলার রেস্তোরাঁয়। সেখানে ট্রফির পাশে রাখা ছিল সেলিব্রেশন কেক। তখনই সেই সংক্ষিপ্ত উত্‌সব-পালন চ্যাম্পিয়ন টিমের। লাঞ্চ সেরে তার পর গুটিগুটি পায়ে সন্ধের উড়ানের জন্য গার্সিয়াদের বেরিয়ে পড়া। ফাইনালের ম্যাচ উইনার রফিক-সহ বাকিরা শহরে পৌঁছলেন গভীর রাতে।

আসলে সৌরভের দল আসল উত্‌সবটা সেরে এসেছিল মুম্বইতেই। কলকাতারটা বাসিবিয়ের মতো। শনিবার রাতে টিম হোটেলে পার্টি চলেছে রাত সাড়ে তিনটে অবধি। ‘খানা-পিনা-গানা-বাজানা’-র অভাব ছিল না সেখানে। টিমের অন্য মালিকদের সঙ্গে হাজির ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তবে তিনি পার্টি থেকে বেরিয়ে পড়েন দেড়টায়।


ট্রফির শ্যাম্পেন-স্নান।

চিত্রনাট্যে ‘দাদাগিরি’-র পালা এল বরং এ দিন সকালে। গার্সিয়া-বেটেদের নিয়ে টিম বাসের মুম্বই বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার কথা ছিল সাড়ে আটটা নাগাদ। কিন্তু হোটেলের ঘরে কিছু ফেলে এসেছিলেন বোরহা ফার্নান্ডেজ। হোফ্রেকে সঙ্গে নিয়ে বোরহা ফের হোটেলে ঢুকলে বাস দাঁড়িয়ে থাকে পাক্কা পনেরো মিনিট। কন্যা সানা আর স্ত্রী ডোনাকে নিয়ে সৌরভের গাড়িও ওদের অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে। কেরল টিমও তখন হোটেল ছাড়ছে। ছিলেন আইএম বিজয়নও। সৌরভকে দেখে সেরে নিলেন শুভেচ্ছা বিনিময়। ততক্ষণে এসে গিয়েছেন হোফ্রেরা। দলের মালিক ‘দাদা’-ই অভিভাবকের মতো টিম বাসের আগে নিজের গাড়ি নিয়ে ঢোকেন মুম্বই বিমানবন্দরে।

আইএসএলের ভাঙা হাটে এ দিন কারও কারও কৌতূহল, দাদা কি শাহরুখকে ভাল খবরটা দিয়েছেন? সঙ্গে একটা অন্য প্রশ্নও। রফিক গোল করে জেতালেন, তিনি কেন রাতে আসবেন? নিজের শহরের উত্‌সবে সামিল হবেন না?

সৌরভ অবশ্য দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলের সংবর্ধনাস্থল ছাড়লেন এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য না করেই। বলে গেলেন, “এই তো সবে শুরু। পরের বছর আরও ভাল দল। অপেক্ষা আর ন’মাসের।”

ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক, শঙ্কর নাগ দাস

isl ratan chakraborty debanjan bandopadhyay habas airport festoons
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy