Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গ্ল্যামারের পূর্ণিমা ধাঁধিয়ে দিলেও ঘোর অমাবস্যা নিয়মে

আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার টেনিস লিগের কোর্টে তখন অক্ষয় কুমার নেমে পড়েছেন জকোভিচের বিরুদ্ধে। ক্যারাটের ব্ল্য্যাকবেল্ট বলিউড নায়কের ওয়ার্ম আপ দেখার মতো—কোর্টেই ঊর্ধ্বপদ-হেঁটমুণ্ডু অবস্থায় দু’হাতে ভর দিয়ে হেঁটে ফেললেন! একটু আগেই আমির খানের সার্ভিসে একবারও বল নেট পার না করায় রজার-নোভাক দু’জনেই নেটের উপর চেপে বসে সেটার হাইট নিচু করে দিয়েছেন। তাতেও আমিরের পরের সার্ভিস নেটে! দেখেশুনে এআইটিএর এক প্রভাবশালী কর্তা চব্বিশ ঘণ্টা পরেও আজ বলছিলেন, “এ সব করে যে কী ভাবে এ দেশের টেনিসের স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো সম্ভব জানি না! আইপিটিএল বড়জোর বেশি লাভের মুখ দেখতে পারে। সেলিব্রিটিদের তামাশা দেখতে লোকে আরও ভিড় করবে মাঠে।”

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার টেনিস লিগের কোর্টে তখন অক্ষয় কুমার নেমে পড়েছেন জকোভিচের বিরুদ্ধে। ক্যারাটের ব্ল্য্যাকবেল্ট বলিউড নায়কের ওয়ার্ম আপ দেখার মতো—কোর্টেই ঊর্ধ্বপদ-হেঁটমুণ্ডু অবস্থায় দু’হাতে ভর দিয়ে হেঁটে ফেললেন!

একটু আগেই আমির খানের সার্ভিসে একবারও বল নেট পার না করায় রজার-নোভাক দু’জনেই নেটের উপর চেপে বসে সেটার হাইট নিচু করে দিয়েছেন। তাতেও আমিরের পরের সার্ভিস নেটে!

দেখেশুনে এআইটিএর এক প্রভাবশালী কর্তা চব্বিশ ঘণ্টা পরেও আজ বলছিলেন, “এ সব করে যে কী ভাবে এ দেশের টেনিসের স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো সম্ভব জানি না! আইপিটিএল বড়জোর বেশি লাভের মুখ দেখতে পারে। সেলিব্রিটিদের তামাশা দেখতে লোকে আরও ভিড় করবে মাঠে।”

এবং আপাতত ঠিক সেটাই টার্গেট এই অভিনব টেনিস লিগের প্রধান মহেশ ভূপতির। পরের বছর আরও বেশি সংখ্যায় টেনিসবিশ্বের মহাতারকাদের এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে যুক্ত করে আরও সফল টুর্নামেন্ট করে আরও বেশি লাভের মুখ দেখা। সঙ্গে মহেশ যেটা ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, শুনলে আশাবাদ দেখতেই পারেন সেই এআইটিএ কর্তা। লাভের পরিমাণ যত বাড়বে আইপিটিএলের, মহেশ নাকি ততই সেই অর্থ ব্যয় করবেন এ দেশের টেনিস পরিকাঠামোর উন্নতিতে।

কিন্তু স্বয়ং আইপিটিএলের ভবিষ্যৎ কী?

ঘনিষ্টমহলকে ভূপতি জানিয়েছেন, নাদালও ২০১৫-র আইপিটিএলে খেলবেন বলে ইতিমধ্যে কথা দিয়েছেন। এ ছাড়া পরের বছরের টুর্নামেন্টে টেনিস নক্ষত্ররা পুরো লিগটা খেলবেন। ফেডেরার, জকোভিচ, নাদাল, মারে, সেরেনা, শারাপোভাদের আইপিটিএলের প্রতিটা ফ্র্যাঞ্চাইজি শহরের দর্শক কোর্টে নাকি দেখতে পাবেন। সে ভাবেই ২০১৫-র টুর্নামেন্ট ড্রাফ্ট তৈরি হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় তাৎপর্যের, পরের বার চারটে নয়, দক্ষিণ ও প্রাচ্য এশিয়ার ছ’টা শহরের টিম অংশ নেবে আইপিটিএলে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ২০১৫-র প্লেয়ার্স ড্রাফ্ট ঘোষণার দিনই সেই নতুন দুই শহরভিত্তিক দলের নামও প্রকাশ করবেন ভূপতি। যদিও সূত্রের খবর, তার মধ্যে একটা অবশ্যই ভারতীয় শহর হবে। সম্ভবত মুম্বই। যারা এ বার শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় দিল্লি এগিয়ে আসে। এখন আইপিটিএলের সাফল্য, বিশেষ করে এখানে ‘র-জা-র, র-জা-র’ দর্শক-গর্জন দেখে মুম্বই নাকি ফের আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

মুদ্রার উল্টো পিঠও থাকছে! দিল্লিতে আইপিটিএলের তিন দিনে অন্তত আট জন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে থাকা পুরুষ-মেয়ে বিভিন্ন ম্যাচের পর মিডিয়াকে যা বলে গেলেন, তার সারমর্ম: প্রতিযোগিতা হিট। কিন্তু টুর্নামেন্টের নিয়মাবলী ফ্লপ।

ফেডেরার, জকোভিচ, চিলিচ, বার্ডিচ, সঙ্গা থেকে শুরু করে ইভানোভিচ, ওজনিয়াকি, ফ্লিপকিন্স তো বটেই, পিট সাম্প্রাস, গোরান ইভানিসেভিচ, প্যাট র্যাফটারের মতো প্রাক্তন মহাতারকারাও জনে জনে বলে গেলেন, “আইপিটিএলের এক-একটা সেট মূলত কুড়ি মিনিটের ম্যাচ প্র্যাক্টিসের মতো। কিন্তু পেশাদার ট্যুরের জন্য তা কোনও কাজের বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, এর রুল। যা মাঝেমধ্যে যেমন জটিল, তেমনই অদ্ভুত। নতুন নিয়মগুলোর একটাও ট্যুরে চালু হওয়ার মতো নয়।”

যেমন, হ্যাপিনেস পাওয়ার গেম। গোটা ফর্ম্যাট সময়কে মাথায় রেখে করা হয়েছে। যাতে এক-একটা ম্যাচ তিন ঘণ্টায় শেষ হয়— টেনিসের টি-টোয়েন্টি বলা হচ্ছে, অথচ হ্যাপিনেস পাওয়ার গেম অনির্দিষ্টকালের! যতক্ষণ না কোনও এক সেটে পরাজিত প্লেয়ার ওই গেম জিতছেন।

দ্বিতীয়ত, হ্যপিনেস পাওয়ার পয়েন্ট। ব্রেক পয়েন্টে দাঁড়ানো প্লেয়ার ‘সার্ভিস রিসিভার’ অবস্থায় নিয়ে সেই গেমই পকেটে পুরে ফেলার সুযোগ পাচ্ছে। একসঙ্গে দু’টো পয়েন্ট জিতে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমতা থাকছে না।

তৃতীয়ত, প্রতি সেটে দু’দলের কোচেদের একবার করে টাইমআউট নেওয়াটা। এটাও আইপিএল বা হকির পেশাদার লিগের মতো। কিন্তু গেম পয়েন্টে দাঁড়ানো দলের বিপক্ষ কোচ সেই সময় এক মিনিটের টাইমআউট নিয়ে খেলা থামিয়ে নিজের প্লেয়ারকে কোর্ট থেকে বার করে নিলে খেলার তাল কেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

তবে সবচেয়ে সমালোচনা হচ্ছে কুড়ি সেকেন্ডের সার্ভিস ক্লক নিয়মের। শারাপোভা ম্যানিলায় প্রথম লেগেই বলেন, সার্ভিস করতে গিয়ে সব সময় ভয় হচ্ছে, এই বুঝি ঢং করে অ্যালার্ম ক্লক বেজে উঠবে। ফেডেরারের মতো ভদ্র, ঠান্ডা স্বভাবের চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার কিংবা সাম্প্রাসের মতো প্রাক্তন কিংবদন্তিও প্রায় অনুরূপ বললেন দিল্লিতে। আর ঠোঁটকাটা, মেজাজি স্বভাবের বিশ্বের এক নম্বর জকোভিচ ভারতে তাঁর তিন মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলনেও অভিযোগ করে গেলেন “সার্ভিস ক্লকের মাথামুণ্ডু বুঝলাম না। কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে কখনও সার্ভিস করা যায় না কি?”

চিলিচের আবার খোঁচা, “ট্যুরে এমন সুপারস্টারের বিরুদ্ধেও খেলি, পয়েন্টের ফাঁকে যে দম নেওয়ার ছুঁতোয় এক মিনিটও নেয় সার্ভিস করতে। তার কাছে কুড়ি সেকেন্ড কতটা ভয়ঙ্কর, বুঝতেই পারছেন?”

টেনিসের তরুণ প্রজন্মের খোঁচাটা তাঁর কোন বিখ্যাত পূর্বসূরিকে, বলার জন্য অবশ্য কোনও পুরস্কার নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

supriyo mukhopadhyay iptl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE