লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কোচ সিমিওনেকে নিয়ে উল্লাস। ছবি: রয়টার্স
বার্সেলোনা-১ (সাঞ্চেজ)
আটলেটিকো মাদ্রিদ-১ (গোডিন)
ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিস, আড্ডা, জিম, সুইমিং পুল এমনকী গাড়ি সারানোর গ্যারাজেও রেহাই নেই! ইদানীং যেখানেই ফুটবল নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে, আটলেটিকো মাদ্রিদের নাম উঠে এসেছে।
আসলে ফুটবলের সঙ্গে যখন কলকাতার নাম জড়িয়ে যায়, তখন শহরে উৎসাহের কোনও অভাব থাকে না। তাই স্প্যানিশ লিগে আটলেটিকোর জয় দেখার স্বপ্নে বিভোর বাঙালি মেসি-ইনিয়েস্তা-জাভিকেও ব্যাকসিটে পাঠিয়ে দিয়েছে! এমনকী লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের প্রভাব এতটাই তীব্র যে ‘বিবিসি’-র বাজার দরও কমছে কলকাতায়। লিসবনে বেল-বেঞ্জিমা-ক্রিশ্চিয়ানো নয়, এখন নিজেদের দলের জন্যই গলা ফাটাবে কলকাতা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আমার বাজি অবশ্য শুরু থেকেই রিয়াল ছিল। কিন্তু শনিবার যে ফুটবল আটলেটিকো খেলল, তাতে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। তারকাকেন্দ্রিক ফুটবলকে ধূলিসাৎ করে কী ভাবে টিমগেমের দাপটে ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে ফেলা যায়, সেটা দেখিয়ে দিল আটলেটিকো। এর জন্য অবশ্য কোচ সিমিওনেকেই পুরো কৃতিত্ব দিতে হবে। যে ভাবে উনি দলটার মধ্যে ‘কিলার’ মানসিকতা আমদানি করেছেন, তা যে কোনও বিপক্ষকে আতঙ্কে দিন কাটাতে বাধ্য করবে। এই মরসুমে আটলেটিকো যে কত ভয়ঙ্কর, সেটা শনিবারের ম্যাচে প্রমাণ করে দিল। স্কোরলাইনে হয়তো বড় কোনও চমক নেই। কিন্তু ফুটবল-মানসিকতা তফাত গড়ে দিল। শুরুতেই কোস্তা-তুরান চোট পেয়ে বেরিয়ে গেল। তাতে বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে, কাউন্টার অ্যাটাককে অস্ত্র বানিয়ে এগোতে থাকল ভিয়া-গোডিনরা। বিপক্ষে ইনিয়েস্তা-জাভি-বুস্কেতসদের মতো বড় নাম থাকা সত্ত্বেও। মেসিকে তো খুঁজেই পাওয়া গেল না। সত্তর মিনিট খেলার পরে বার্সাকে ক্লান্ত দেখালেও, স্ট্যামিনা, গতির কোনও কমতি নেই আটলেটিকোর। অনেকে হয়তো মনে করবেন মোরিনহো-স্টাইল অনুসরণ করছেন সিমিওনে। কিন্তু আমি বলব এটা একেবারেই আটলেটিকো কোচের নিজস্ব-স্টাইল। যেখানে শুধু ফিজিক্যাল ফুটবল নয়, গতি, স্ট্যামিনা এবং ফুটবল-বুদ্ধির সুন্দর ভারসাম্য আছে। সিমিওনের কৃতিত্ব আমি তাই কারও সঙ্গে ভাগ করতে পারব না।
আরও একটা কথা। আটলেটিকোর এই সাফল্য ফ্লুক নয়। আগামী দিনেও রিয়াল-বার্সাকে সমান ভাবে টক্কর দেবে ওরা। অবাক হব না যদি বার্সা বা রিয়ালকে হঠিয়ে এর পর ওরা স্পেনের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দেখা দেয়। খুব খারাপ লাগছে কোস্তার জন্য। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল তো বটেই, দেখে মনে হল বিশ্বকাপেও বোধহয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। ওর অনুপস্থিতি আজ ভিয়ারা ভরাট করে দিয়েছে, কিন্তু বিশ্বকাপে না নামতে পারলে স্পেন বড় ধাক্কা খাবে।
উল্টো দিকে ঘরের মাঠেও আটলেটিকোকে থামাতে পারল না বার্সা। সাঞ্চেজের বিশ্বমানের গোলের পরেও। মেসি-পেড্রোদেরও দেখলাম, সহজ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছে না। তিকিতাকা কোথায় গেল? আমার মনে হয়, গুয়ার্দিওলার সঙ্গে সেটা জার্মানিতেই পালিয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক কোচের আলাদা আলাদা স্পেশ্যালিটি থাকে। যেমন অমল দত্তের ডায়মন্ড সিস্টেম। মর্গ্যানের অ্যাটাকিং-থিওরি। দেখা গেল একই টিম নিয়ে ইস্টবেঙ্গলে ফালোপা ফ্লপ করল। ঠিক যেমন জেরার্দো মার্টিনোও পারলেন না। তারকাখচিত বার্সা ফরোয়ার্ড লাইন তো বটেই, ডিফেন্সও চূড়ান্ত ফ্লপ। পিকে যদি চোট সারিয়ে দলে ঢুকতে পারে, তা হলে আদ্রিয়ানোর বদলে ইয়র্দি আলবা নয় কেন? কোকের কর্নার থেকে গোডিনের গোলে বার্সা ডিফেন্সের দোষ বেশি।
কী দাঁড়াল? মেসি পারল না। এ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আটলেটিকোর বিরুদ্ধে রোনাল্ডোর পরীক্ষা। মনে হয়, বড় কোনও অঘটন না হলে লিসবনে সিমিওনের হাতেই ট্রফিটা উঠবে।
চোট নিয়ে ধোঁয়াশা
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে কি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নামবেন? শনিবার লা লিগা ম্যাচে রোনাল্ডো নামবেন ঠিক ছিল। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট অনেকটাই সেরেছে। কিন্তু ম্যাচের প্রস্তুতিতে নেমে ফের চোট পেয়ে প্র্যাকটিসের মাঝপথে উঠেও যান। নাম তুলে নেন শনিবারের ম্যাচ থেকে। আন্সেলোত্তি অবশ্য বলেন, চোট গুরুতর নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy