মঙ্গলবার প্র্যাকটিসে দুই কোচের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস
একা পুলিশে রক্ষা নেই। সঙ্গে আবার দোসর চিমা ওকোরি!
সামনে চিমা আর তাঁর পুলিশকে দেখেই কি বদলে গেল আর্মান্দো কোলাসোর রণকৌশল? বদলে গেল ‘যুব-তত্ত্ব’? না কি পড়শি বাগানের জয়ের পর চাপে পড়ে গিয়েছেন তিনি। ঘটনা বা রটনা যাই হোক, কলকাতা লিগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ‘গিনিপিগ’ থেকে সরে এসে ফের স্বমহিমায় ফিরছে ইস্টবেঙ্গল!
ইস্টবেঙ্গলের গোয়ান কোচ কলকাতা লিগের দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিন বলে গেলেন, “বুধবার কিন্তু অন্য খেলা। সম্পূর্ণ অন্য দল মাঠে নামবে।” পরে চিমার নাম না করেও বলে ফেললেন, “কোনও ব্যক্তিবিশেষ নয়। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ইস্টবেঙ্গল যখন মাঠে নামে তখন তাঁদের ডিকশনারিতে ভয়-ভীতি শব্দটা থাকে না।”
কোচ মুখে না বললেও মঙ্গলবার সকালে লাল-হলুদের অনুশীলন কিন্তু বলছে, এই ‘ব্যক্তিবিশেষ’-এর জন্যই রাতারাতি আলমারিতে চলে গেছে তাঁর ‘তরুণের স্বপ্ন’ শীর্ষক ফুটবল স্ট্র্যাটেজি! কলকাতা পুলিশের নাইজিরিয়ান কোচ চিমা ততক্ষণে হুঙ্কার ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর দলের নীলকান্ত, শুভাশিস প্রয়াসুদের কাছে ‘কালো চিতা’-র ভোকাল টনিক, “সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ শিকারের মজা জানো তো? বুধবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে গিয়ে সেটাই করো। আমাদের আক্রমণের সময় সাপোর্টিং আর ওরা অ্যাটাকে এলে তাড়া করতে হবে শেষ মিনিট পর্যন্ত।”
লাল গেঞ্জি গায়ে পেশিবহুল চিমা যখন এ কথা বলছেন, তখন সেখান থেকে একশো মিটার দূরে ইস্টবেঙ্গল মাঠে চলছে আর্মান্দোর কলকাতা লিগে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রস্তুতি। কিন্তু সেখানে প্রথম ম্যাচে খেলা লাল-হলুদের কিষাণ, সফর, অবিনাশ, জীতেনরা কোথায়? বদলে আর্মান্দোর প্রথম দলে তো দাপাতে দেখা গেল সেই দীপক মণ্ডল, হরমনজ্যোৎ খাবরা, জোয়াকিম, লোবো, অর্ণব, মেহতাব, রবার্টদের। এমনকী হাজির র্যান্টিও! লাল-হলুদ শিবিরের খবর, চিমার পুলিশ যাতে ঘরের মাঠে এসে খবরদারি না করে যায়, তার জন্য প্রথম একাদশে বুধবার এদেরই দেখা যাবে। যার মানে, মহমেডানের কাছে অপ্রত্যাশিত হার আর পড়শি মোহনবাগানের জয়ের পর আর্মান্দোর ‘যুবতত্ত্ব’ আপাতত বাক্সবন্দি। চাপে থাকা লাল-হলুদ কোচের চরম মোক্ষ সেই ট্রফি-ই।
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেও ফেললেন সে কথা। যা শুনে দু’দিন আগের নেওয়া নোট উল্টেপাল্টে দেখছিলেন উপস্থিত সাংবাদিকদের কেউ কেউ। “ইউথ ডেভলপমেন্ট কি এক দিন বা একটা ম্যাচের ব্যাপার? গোটা মরসুম জুড়ে চলবে। আর কলকাতা লিগের একটা আবেগ তো রয়েছেই।” এখানেই শেষ নয়। নিজে যে চাপে রয়েছেন সে কথা বেরিয়ে এল এ বার। “ম্যাচের ফল অন্য রকম হলে চাপ বাড়বে। তাই দলটা পুরো বদলাচ্ছি।” কিন্তু সোমবারও যাঁর গোড়ালিতে চোট ছিল। আই লিগের প্রসঙ্গ টেনে এনে বিশ্রামের কথাও বলছিলেন লাল-হলুদ কোচ, সেই র্যান্টির গোড়ালির চোট রাতারাতি উধাও কি চিমার জন্য? আর্মান্দো প্রথমে বললেন, “এ নিয়ে কোনও মন্তব্য নয়।” তার পর বললেন, “চিমা কলকাতা ময়দানকে হাতের তালুর মতো চেনে। ওদের দুটো বিদেশি বেশ ভাল। মাঠেই দেখা যাবে কী হয়।”
যা শুনে চিমার হাসি আর থামেই না। ময়দানের ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ চোয়াল শক্ত করে শুরুতে বললেন, “শ্রদ্ধেয় ইস্টবেঙ্গল কোচ র্যান্টি কেন পুরো দল খেলিয়ে দিক। আমার অসুবিধা নেই। দর্শকরা একটা উপভোগ্য ম্যাচ দেখতে পাবেন। আর মনে রাখবেন, আমরা কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলছি। জেতা ছাড়া কিছুই ভাবছি না।” তিন বিদেশি থাকলেও বুধবার ‘সিংহ শিকার’-এ চিমার প্রথম একাদশে খেলবেন দু’জন। নাইজিরিয়ান স্টপার কিন্সলে এবং স্ট্রাইকার ইনি। টালিগঞ্জের পরেই দ্বিতীয় হয়ে মূলপর্বে ওঠা পূুলিশ কোচের একটাই আশঙ্কা। তা আবার ইস্টবেঙ্গল জার্সিকে ঘিরে। বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি। জানি ওই জার্সিটার ওয়েট। এটা মাইন্ড গেম।”
এ দিকে বুধবারই মরসুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছেন লাল-হলুদের এই মরসুমের অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ খাবরা। বাড়ি ফেরার আগে তিনিও তাঁর কোচের মতোই বলে গেলেন, “প্রথম ম্যাচটা অঘটন। কাল জিততেই হবে। এই লিগে আমরা শেষ চার বার চ্যাম্পিয়ন। আমার অধিনায়কত্বে সেটাকে পাঁচে নিতে হবে তো।”
জুনিয়রদের উৎকর্ষ, কার্যকারিতা তাই ‘প্ল্যান বি’-তে সরে গিয়ে জয়ের সরণিতে ফিরতে খাবরাদের এই সংকল্পই আজ মূলধন আর্মান্দোর।
বুধবার
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ: ইস্টবেঙ্গল : পুলিশ এসি (ইস্টবেঙ্গল, ৩-৫০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy