আপনাদের প্রিয় টিম নাইট রাইডার্স তা হলে করে দেখাল!
তিন বছরে দু-দু’টো আইপিএল জেতার পর আমাদের নিয়ে নিশ্চয়ই দারুণ গর্বিত আপনারা! মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সের ওই অসাধারণ সংবর্ধনার জন্য করকাতার প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ। এই শহরের সমর্থন আর ভালবাসার সামনে প্রতিবার নিজেদের যে ঠিক কতটা স্পেশ্যাল মনে হয়, বলে বোঝানো খুব কঠিন। বিশ্বাস করুন, আপনারা পাশে আছেন বলেই আজ আমরা এখানে পৌঁছতে পেরেছি। একই সঙ্গে, ইডেনে ঢুকতে গিয়ে যাঁদের নানা অসুবিধা ভোগ করতে হল, তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনারা তো আমাদেরই সংবর্ধনা দিতে আসছিলেন। তাই আপনাদের ভোগান্তির জন্য নিজেকে আরও বেশি করে দায়ী মনে হচ্ছে!
রবিবারের ফাইনাল জেতার ঠিক পরে পরে কেউ একটা প্রশ্ন করেন, চ্যাম্পিয়ন হতে পারা মানে ঠিক কী? এখন আর মনে পড়ছে না, তবে সেই সময় সাংবাদিক বৈঠকের জন্য ছুটতে ছুটতে দায়সারা একটা উত্তর দিয়েছিলাম। পরে, বেঙ্গালুরুর আইটিসি রয়্যাল গার্ডেনিয়া হোটেলে বিজয়োৎসব যখন দারুণ জমে উঠেছে, শাহরুখ ভাইকে দেখছিলাম। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন অস্কার জিতে ফেলেছে! আমাকে বার বার ধন্যবাদ দিচ্ছিল আর বলছিল, “তুমি আমাকে আর আমার মেয়েকে জীবনের সেরা আনন্দ উপহার দিলে।”
শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, চ্যাম্পিয়ন হতে পারা কি একেই বলে?
পার্টি চলছে। তার মধ্যেই ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলাম। বড়রা আশীর্বাদ পাঠাচ্ছিলেন, ছোটরা অভিনন্দন। প্রত্যেকে আনন্দে ফুটছে। উচ্ছ্বসিত হইচই করছে। অথচ আমি ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া ইস্তক এই কণ্ঠগুলোই এতদিন ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলত প্রায় সাইলেন্ট মোড-এ, ফিসফিস করে। তা-ও বেশির ভাগ উত্তরই হ্যাঁ বা না-এ সেরে!
চ্যাম্পিয়ন হতে পারা কি তা হলে একেই বলে?
আমি মদ খাই না। সিগারেট ছুঁই না। বিয়ারও না। পার্টিতে সেটা দেখে কয়েক জন সম্ভাব্য শাশুড়ির আমাকে জামাই হিসাবে ভারি মনে ধরেছিল। এক আন্টিজি তো বলেই দিলেন, “আরে গৌতম তুমি তো একেবারে আদর্শ রোল মডেল! আমার মেয়ে থাকলে তার জন্য তোমাকে হাইজ্যাক করে তুলে নিয়ে যেতাম!” নিশ্চিন্তে ধরে নেওয়া যায় যে, কথাগুলো বলার আগে আন্টিজি দু’পাত্তর চড়িয়ে এসেছিলেন। তবু আমি বেশ লজ্জাই পেয়েছিলাম... না না ভুল বুঝবেন না। বিশ্বাস করুন, “আদর্শ রোল মডেল” অংশটুকুতেই লজ্জা পেয়েছিলাম। নিজেকে বলি, বাদবাকিটা তুমি কিন্তু শুনতে পাওনি!
তবে মনে হয়েছিল, চ্যাম্পিয়ন হতে পারা কি তা হলে একেই বলে?
পরে হোটেলের ঘরে বসেও প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছিল--চ্যাম্পিয়ন হতে পারা মানে ঠিক কী?
আমার ছোট্ট তুতো ভাই একাংশ ফাইনাল দেখবে বলে বেঙ্গালুরু এসেছিল। দেখলাম আই-প্যাডে কী দেখতে দেখতে খুব হাসছে। জিজ্ঞাসা করতে আই-প্যাডটা এগিয়ে দিল। দেখলাম ইউ টিউবে নোভাক জকোভিচের একটা ভিডিও। সম্ভবত ফরাসি ওপেন। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। এক বল বয় জকোভিচের মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে। আচমকা তাকে ডেকে নিয়ে পাশে বসাল জকোভিচ। তারপর ছাতাটা নিজে নিয়ে বাচ্চাটার মাথায় ধরল। মুহূর্তে উত্তাল গ্যালারি। ছেলেটি তো যেন স্বপ্নের দুনিয়ায় পৌঁছে গিয়েছে! এর পরে ওর হাতে নরম পানীয় ধরিয়ে চিয়ার্স করল জকোভিচ।
ভিডিওটা পরপর বেশ কয়েকবার দেখলাম। মনে হল, উত্তর পেয়ে গেছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়া একেই বলে! যখন তুমি নিজের কাজ দিয়ে অজানা-অচেনা মানুষদের জীবন ছুঁয়ে যেতে পার, তখনই তুমি আসল চ্যাম্পিয়ন। এই চ্যাম্পিয়ন আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। নিজের জীবনে শুধু খুঁজে নিতে হয়।
আমরা মাঠে যতই চার, ছয় মারি না কেন, তা দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে সত্যিই ছুঁয়ে যেতে পারি কি? জানি না। হ্যাঁ, ফ্যানদের মুখে আমরা হাসি ফোটাই। কিন্তু তার জন্যই তো আমাদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেওয়া হয়। তাই মানুষের জন্য আরও অনেক বেশি কিছু করার সুযোগ রয়েছে।
সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে এখনও আরও অনেক উন্নতি করতে হবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy