দিন কয়েক আগে তাঁরই জোড়া গোলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘটে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের। আর এখন সেই লুই সুয়ারেজকে নিয়েই আবার লেগে গেল দু’দেশে। এ বার যুযুধান প্রতিপক্ষের নাম— ইংরেজ এবং উরুগুয়ের মিডিয়া।
ইতালির ডিফেন্ডারের ঘাড়ে উরুগুয়ে ফুটবলারের কামড় পড়লেও সুয়ারেজের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব হয়েছে ব্রিটিশ মিডিয়া। আবার উরুগুয়ে প্রচারমাধ্যমের বক্তব্য, এ সব ব্রিটিশ মিডিয়ারই চক্রান্ত। সুয়ারেজের কামড়ের কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
রুনিদের বিরুদ্ধে দু’ গোল করে সুয়ারেজ বলেছিলেন, “ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বদলা নিতে পারাটা একটা আলাদা তৃপ্তি। ওদের প্রচারমাধ্যম আমাকে অনেক অপমান করেছে।” ভাগ্যের পাল্টা খেলায় এ বার শিকার সুয়ারেজ ও শিকারি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।
গত কাল ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই ‘এল পিস্তলেরোর’ বিরুদ্ধে সরব ইংরেজরা। প্রায় চার-পাঁচ বার উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেজের দিকে ধেয়ে আসে একটাই প্রশ্ন— “সুয়ারেজের কামড়ের পর কি আর কোনও দিন জাতীয় জার্সি পরতে পারবেন তিনি?” ইংল্যান্ডের প্রায় প্রতিটি দৈনিক জুড়েই ছিল সুয়ারেজ নিয়ে ক্যারিকেচার। কোথাও উরুগুয়ের স্ট্রাইকার নরখাদক। কোথাও আবার লেখা হয়েছে, ২০১০-এ বাক্কাল ও ২০১৩-এ চেলসির ব্র্যানিস্লাভ ইভানোভিচের পরে এ বার কামড়ানোর হ্যাটট্রিক করলেন সুয়ারেজ। এমনকী ব্রিটিশদের এও অভিযোগ, এক বছর আগে কনফেডারেশনস কাপেই চিয়েলিনিকে কামড়াতে গিয়েছিলেন সুয়ারেজ। সেই অসফল কাজটাই শেষ করলেন এক বছর পরে।
পাল্টা আবার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জোচ্চুরির অভিযোগ আনল উরুগুয়ের এক টিভি চ্যানেল। যাদের মতে, রিপ্লে থেকে বোঝা যাচ্ছে না আদৌ সুয়ারেজ কামড়েছেন কি না চিয়েলিনিকে। যেখানে ইতালির এত মাথাব্যথা নেই, ইংল্যান্ড এত খেপে আছে কেন? চ্যানেলের এক কর্তা বলেন, “এটা ব্রিটিশ মিডিয়ার ষড়যন্ত্র। ওদের ছিটকে দিয়েছিল সুয়ারেজ। এই কারণে ওরা চায় আমাদের লুইসিতো যেন বিশ্বকাপে আর না খেলতে পারে।” সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “ইংরেজরা নিজেরাই জোচ্চুরি করতে ওস্তাদ। সবার মনে আছে ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ কী করে জিতেছিল ইংল্যান্ড। ওরা সাহস পায় কী করে ইংল্যান্ডের দিকে আঙুল তুলতে।”
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন সুয়ারেজ। বলেন, “পেনাল্টি বক্সে এ রকম ঘটনা হতেই থাকে। চিয়েলিনির কাঁধের সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগে। তারপর আমি পড়ে যাই। ওর কাঁধের ধাক্কায় আমারই চোখে লাগে।” কিন্তু ঘটনাটা যদি তাই হয় তবে ধাক্কা লাগার পর সুয়ারেজ দাঁত ধরে বসেছিলেন কেন? এই প্রশ্ন তুলে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবলার গ্যারি লিনেকার টুইট করেন, “চোখেই যদি লেগে থাকে, তা হলে সুয়ারেজ দাঁত ধরে বসেছিল কেন?” ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন ফুটবলার পল স্কোলস আবার বলেন, “সুয়ারেজ এত ভাল ফুটবলার। কিন্তু ওকে সবাই ফুটবলের থেকেও বেশি মনে রাখবে কামড়ানোর জন্য। জানি না সারা জীবন ওকে নির্বাসিত করলেও উপযুক্ত শাস্তি হবে কি না।”
সারা বিশ্ব যখন তাঁর বিরুদ্ধে, এল পিস্তলেরো পাশে পেলেন দলের কোচ অস্কার তাবারেজকে। উরুগুয়ে কোচ বলেন, তাঁর দলের তারকার ভাবমূর্তি আরও খারাপ করছে সংবাদমাধ্যম। “যা হয়েছে তার থেকে বেশি বড় করে দেখানো হচ্ছে। যদি ঘটনাটা সত্যিই ঘটত, তা হলে রেফারির চোখে পড়তই। সবাই যখন ওকে এ ভাবে আক্রমণ করছে, তখন আমার দায়িত্ব ওর পাশে থাকা। সুয়ারেজ দলের এক অপরিহার্য অঙ্গ।”
কামড়ে লক্ষ্মীলাভ
সুয়ারেজের কামড়ে একদিকে বিতর্কের রেশ ছড়িয়ে পড়ল। পাশাপাশি আবার লক্ষ্মীলাভ ঘটল অনেকের। বিশ্বকাপে সুয়ারেজ কামড়াবেন কিনা তার উপরে বাজি লাগিয়েছিলেন ১৬৭জন। যার মধ্যে সবথেকে বেশি লাভবান হলেন নরওয়ের টমাস সিভেরসেন। যিনি ৯১৬ ডলার বাজি লাগিয়েছিলেন, সুয়ারেজ ঠিক কামড়ের হ্যাটট্রিক করবেন বলে। ঘটনার সময় ঘুমিয়ে থাকলেও পরে শোনেন সুয়ারেজের কীর্তি।
এল পিস্তলেরোর ৫ কীর্তি। সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।