Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মাঠ পাহারা দেবে সশস্ত্র বাহিনী

জেলা ফুটবল লিগে অভিনব অভিষেক কয়েদি একাদশের

রবিন মল্লিক— পেশাদার খুনি। ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন হাইকোর্টে। মুকেশ সিংহ— রোমা ঝাওয়ার অপহরণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত। সোমনাথ মিশ্রী এবং জগন্নাথ নস্কর— অপহরণ এবং খুনের মামলায় অভিযুক্ত। পীযূষ বিশ্বাস— বাপি সেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামী। কলঙ্কিত এক-একটা পরিচয়ের বাইরে এঁরা এখন অন্য একটা পরিচয়েরও মালিক। এঁরা এখন প্রত্যেকেই ফুটবলার।

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০২
Share: Save:

রবিন মল্লিক— পেশাদার খুনি। ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন হাইকোর্টে।

মুকেশ সিংহ— রোমা ঝাওয়ার অপহরণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত।

সোমনাথ মিশ্রী এবং জগন্নাথ নস্কর— অপহরণ এবং খুনের মামলায় অভিযুক্ত।

পীযূষ বিশ্বাস— বাপি সেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামী।

কলঙ্কিত এক-একটা পরিচয়ের বাইরে এঁরা এখন অন্য একটা পরিচয়েরও মালিক। এঁরা এখন প্রত্যেকেই ফুটবলার।

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নজিরবিহীন একটি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চলেছেন এঁরা। ভারতে এই প্রথম কয়েদিদের নিয়ে কোনও টিম খেলতে চলেছে রাজ্য ফুটবল সংস্থার অনুমোদিত পেশাদার লিগে।

রাজ্যের কয়েদিদের নিয়ে তৈরি টিমে রবিন হলেন কিপার। মুকেশ খেলেন লেফট আউটে। পীযূষ স্টপার। তাঁর অবশ্য পুলিশ টিমে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। দলের অধিনায়ক জগন্নাথ। সোমনাথ আবার একটা সময়ে এরিয়ানের জুনিয়র দলেও খেলেছেন।

জেলের চার দেওয়ালের মাঝে বন্দিদের এখন ফুটবলই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আর সেই স্বপ্ন নিয়েই সোমবার থেকে জেলা ফুটবল লিগ খেলতে নামছেন এই দাগি আসামিরা। এর আগে কবাডি লিগ খেলেছেন জেলের কয়েদিরা। তবে ফুটবলে এ রকম উদ্যোগ এই প্রথম।

পশ্চিম বাংলার ছ’টি সংশোধনাগার থেকে দু’বছর আগে হওয়া একটি টুর্নামেন্টের মাধ্যমে মোট ৩৬ জন কয়েদি-ফুটবলারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সবাইকে দমদম সংশোধনাগারে রেখে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রাক্তন ফুটবলার মিহির দাসের কোচিংয়ে এ বার জগন্নাথ, পীযূষদের নতুন লড়াই। কয়েদি থেকে ফুটবলার হয়ে ওঠার লড়াই। কলঙ্কিত অধ্যায়কে পিছনে ফেলে সুস্থ জীবনে ফেরার লড়াই।

রাজ্য পুলিশের এডিজি (কারাগার) অধীর শর্মা এবং প্রাক্তন ফুটবলার মিহিরবাবুর উদ্যোগেই পেশাদার ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেতে চলেছেন এই সমস্ত দাগি আসামিরা। জেলের এই ফুটবল টিমকে কলকাতা লিগে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আইএফএ-র কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সেটা সম্ভব না হওয়ায়, জেলা লিগ খেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আইএফএ। আর সেই লিগের প্রথম ম্যাচে তারা মুখোমুখি হবে আগরপাড়া ক্রীড়া সংস্থার।

জেলের চার দেওয়ালের ভেতরে কখন, কী ভাবে প্র্যাকটিস করেন রবিনরা? কোচ মিহির বলছিলেন, “মূলত সকালবেলায় অনুশীলন করে ওরা। আসলে দিনে ওদের ছ’বার গুনতি হয়। সে সময় উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। তাই সকাল সাতটায় গুনতি হয়ে যাওয়ার পর অনুশীলন শুরু করি। আবার পৌনে দশটার মধ্যে ছেড়ে দিতে হয়। দশটার গুনতির জন্য।” এ সব প্রতিবন্ধকতার মাঝেই প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে জেলের এই টিম। ফোর্ট উইলিয়ামে গিয়ে আর্মি একাদশের সঙ্গে। আবার শনিবার বিকেলে সংশোধনাগারের পুলিশদের নিয়ে যে অফিস ফুটবল টিম রয়েছে, তাদের সঙ্গেও খেলেন মিহিরের অভিনব টিম।

কিন্তু সমস্যা একটা জায়গায়। কঠিন অনুশীলন করার পরও পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা নেই কয়েদি ফুটবলারদের জন্য। মিহিরবাবু বলছিলেন, “জেলের যা খাবার তাতে কতটুকুই বা প্রোটিন পাওয়া যায়? তাও এডিজিকে বলে কয়েদি ফুটবলারদের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম। কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত নয়। তাও তো ওরা লড়াই করছে। চেষ্টা করছে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার।”

এত দিন সংশোধনাগারের মধ্যে ফুটবল ম্যাচ খেলে এসেছেন কয়েদিরা। কিন্তু সোমবার থেকে পেশাদার লিগে খোলা মাঠে ম্যাচ খেলতে হবে। এই সব দাগি আসামি যদি কোনও ভাবে পালিয়ে যান বা অন্য কোনও সমস্যা তৈরি করেন? এর জন্য কি পুলিশের বিশেষ কোনও ব্যবস্থা থাকছে? এডিজি অধীর শর্মা জানালেন, “সশস্ত্র বাহিনী এসকর্ট করে নিয়ে যাবে ওদের। এ ছাড়াও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার বিশাল গর্গকে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে। যাতে বিশেষ নিরাপত্তা রাখেন আগরপাড়ার মাঠে। সোমবার গোটা মাঠেই বিশেষ পুলিশি প্রহরা থাকবে। কোনও সমস্যা হবে না।” জেলা ফুটবলের ফল দেখে আগামী বছর কলকাতা লিগেও কয়েদিদের এই টিমকে খেলানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করবেন বলেই জানালে অধীরবাবু।

জীবনের নিকষ অন্ধকার দিকটা ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন জগন্নাথ নস্কররা। নিজেদের অপরাধের জন্য এঁরা নাকি প্রত্যেকেই অনুতপ্ত। ফুটবল কি পারবে এই দাগি আসামিদের আলোর পথে ফেরাতে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE