রোমারিও থেকে রোনাল্ডো, ব্রাজিলীয় ফুটবলের কিংবদন্তিরা বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পর বারবার একটা কথা বলে আসছিলেন। লুই ফিলিপ স্কোলারিকে সরিয়ে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন যদি হাত ধুয়ে ফেলে, তা হলে ভুল হবে। স্কোলারির জায়গায় আনতে হবে এমন কাউকে যিনি আধুনিক ফুটবলটা বোঝেন, জানেন। যিনি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ঘরানা ধরে রাখবেন যেমন, তেমন আমদানি করবেন আধুনিক ফুটবলের ধ্যান-ধারণাও। হোসে মোরিনহোর নাম বিপর্যয়ের বাজারে প্রবল ভাবে শোনা যাচ্ছিল। কেউ কেউ তুলে আনছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলার নামও।
কিন্তু বাস্তবে ব্রাজিল ফুটবল সামনে নয়, পিছনের দিকেই হাঁটতে শুরু করল আবার! দুঙ্গা আবার ফিরে আসছেন যে!
সব কিছু ঠিকঠাক চললে ফিলিপাওয়ের চেয়ারে দেখা যাবে দুঙ্গাকে। প্লেয়ার হিসেবে ব্রাজিলকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করলে কী হবে, কোচ হিসেবে তিনি ব্যর্থ। আর সেটাও মাত্র চার বছর আগে! দেশের মাঠে তবু ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে তুলেছিলেন স্কোলারি। দুঙ্গা চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় সেটাও পারেননি। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে ১-২ হেরে ছিটকে যায় ব্রাজিল।
কিন্তু দুঙ্গা কেন? ২০০৬ থেকে ২০১০ চার বছর ধরে দেশের দায়িত্বে থেকেও ব্রাজিলকে কাপ দিতে পারেননি যখন? তিতে, রামালহোর মতো কেউ কেউ তো ছিলেন নতুন ব্রাজিল গঠনের জন্য। বলা হচ্ছে, নতুন টিডি গিলমার রিনাল্ডির সঙ্গে অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক দুঙ্গার। দু’জনে ’৯৪ সালে বিশ্বজয়ী টিমের সদস্য ছিলেন, দুঙ্গা তো আবার ছিলেন অধিনায়ক। চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে সিবিএফের (ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন) সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয় দুঙ্গার। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, সাম্প্রতিকে কোচ দুঙ্গার রেকর্ড মোটেও সুবিধের নয়। চার মাস আগে ক্লাব থেকে বিতাড়িত হয়েছেন টিমের জঘন্য পারফরম্যান্সে।
সিবিএফের কেউ কেউ পাল্টা তথ্য দিয়ে বলছেন, দুঙ্গা ’০৭ কোপা আমেরিকা দিয়েছেন। দু’বছর পর কনফেড কাপ দিয়েছেন। বিশ্বকাপে তিনি না পারলেও ব্রাজিল ফুটবলে একেবারে ব্যর্থ, বলা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, স্কোলারিও দেশকে কনফেড কাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে ব্রাজিল উড়ে গিয়েছে স্রেফ। সেখানে দুঙ্গার উপর ভরসা রাখাও কতটা যুক্তিযুক্ত? আর তিনিও যে ব্রাজিলীয় ফুটবলের আজন্মের শিল্পের ঘরানায় অত বিশ্বাসী নন, সেটাও তো দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ দেখেছে।
দুঙ্গাকে নিয়ে ব্রাজিল জনতার মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই আবার আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন নেইমার। দেশের ফুটবল পরিকাঠামোর সমালোচনা করে বলেছেন, “আমাদের দেশের প্র্যাকটিস সেশনকে কেউ গুরুত্বই দেয় না। জার্মানিতে যেটা হয়। স্পেনে যেটা হয়। ওরা আমাদের চেয়ে এখন অনেক এগিয়ে, এটা মেনে নেওয়াই ভাল। আমাদের ওই পর্যায়ে যেতে হবে।” ব্রাজিল বোমার আরও বক্তব্য, “আমাদের দেশে দেখি কেউ ইচ্ছে হলে বেশিক্ষণ প্র্যাকটিস করল। ইচ্ছে হল না তো কম করল। সেই দায়বদ্ধতাটা থাকে না ট্রেনিংয়ে।”
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ শেষের এক সপ্তাহ পরেও ব্রাজিল ফুটবলে অশান্তি থামার নামগন্ধ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy