পাঁচ বারের চেষ্টার পর অবশেষে একটা বিশ্বকাপ ঘরে তুলতে পারল শ্রীলঙ্কা। মাহেলা আর সঙ্গা দীর্ঘ দিন ধরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে। কোনও একটা বিশ্বমানের টুর্নামেন্ট না জিতে অবসর নিতে হলে ওদের কেরিয়ারে একটা বিশাল শূন্যতা থেকে যেত। কিন্তু কথায় আছে না, আপনি যদি পরিশ্রম করে যান, তা হলে উপরে একজন আছেন, যিনি আপনাকে কোনও না কোনও সময় ঠিক পুরস্কৃত করবেন।
গত কাল রাতে ওই চল্লিশটা ওভার দেখার পর অনেক কথাই মনে আসছে।
যেমন, আপনি যদি চেষ্টা চালিয়ে যান তা হলে কোনও না কোনও সময় সাফল্য পাবেনই। যেমন, এই খেলাটা সব সময়ই কোনও না কোনও ভাবে চমক সৃষ্টি করে আর সাফল্য পাওয়ার কোনও সুনির্দিষ্ট, নিয়মমাফিক রাস্তা হয় না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ লাসিথ মালিঙ্গা। শ্রীলঙ্কার অনেক মহান ক্রিকেটার নিজেদের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছিল একটা বিশ্বকাপ জিততে আর শেষ পর্যন্ত সেই কাপটা কে জিতল? না, এমন এক ক্যাপ্টেন যে টিমের দায়িত্ব পেয়েছিল নিয়মিত অধিনায়ক সরে যাওয়ায়। দায়িত্ব পেয়েই মালিঙ্গা তিনটে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জিতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ইতিহাসে জায়গা করে নিল। গত কালের ঘটনাটা আমার একটা বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে দিল যে, ভাল অধিনায়ক হঠাৎ করেই পাওয়া যায়। সব সময় যুক্তি মেনে, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে ভাল অধিনায়ক তৈরি করা যায় না।
এই ধারণা থেকে কিন্তু খেলাটার আরও একটা তত্ত্ব জন্ম নেয়। যে, আপনাকে বর্তমানে থাকতে হবে এবং সেই মুহূর্তটার জন্য খেলতে হবে। খুব বেশি ভবিষ্যতের দিকে তাকালে ফল নাও পাওয়া যেতে পারে। আর গত কাল রাতে বাইশ গজে এমন দুই অধিনায়ক ছিল, যারা পুরোপুরি এই তত্ত্বে বিশ্বাস রাখে।
আমি জানি, ফাইনালে হারের পর ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েছেন। খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারত যে ভাবে গোটা টুর্নামেন্টে খেলে এসেছে, তাতে আমাদের খুশি হওয়াই উচিত। ফাইনালের আগে পর্যন্ত ধোনিরা দুর্দান্ত খেলছিল। ওদের কোনও দুর্বলতাই চোখে পড়েনি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার একটা রাতের অসাধারণ ক্রিকেট ধোনিদের হাত থেকে কাপটা নিয়ে গেল। তবে আমরা যারা ভারতীয় দলটাকে সমর্থন করি, তাদের হয়ে টিম ইন্ডিয়াকে অভিনন্দন জানাতে চাই।
শ্রীলঙ্কা যখন টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল, একটু অবাক হয়েছিলাম বইকী। তবে এটা বলতেই হবে, শ্রীলঙ্কানরা যে পরিকল্পনাটা করেছিল, মাঠে নেমে সেটার একেবারে নিখুঁত প্রয়োগ করল। এ রকম বোলিং অনেক অনেক দিন দেখিনি। মালিঙ্গা আর কুলশেখরা যে শেষ চারটে ওভার করল, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। যে ধারাবাহিকতা নিয়ে ওরা ইয়র্কার করে গেল, তা বিশ্বের বাকি বোলারদের কাছে শিক্ষণীয়। ওরা এতটাই ভাল বল করে গেল যে ধোনি, কোহলি, যুবরাজের মতো ব্যাটসম্যানও বাউন্ডারি মারতে পারল না।
যুবরাজের কথায় আসি। যে ভাবে যুবরাজকে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখের। হ্যাঁ, ও আটকে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার পিছনে রয়েছে মালিঙ্গা-কুলশেখরার অসাধারণ বোলিং। এই ছেলেটা আপনাকে দুটো বিশ্বকাপ দিয়েছে। আর একটা খারাপ দিনের জন্য ওকে এ ভাবে হেনস্থা করাটা কিন্তু সত্যিই অবিবেচকের মতো একটা কাজ। এটা তো বুঝতে হবে যে আমাদের বাকি সবার মতো যুবরাজও একজন মানুষ এবং বাকিদের মতো ও-ও একটা ম্যাচ খারাপ খেলতে পারে। ওর কেরিয়ারই শেষ হয়ে গিয়েছে-- চেয়ারে বসে এমনটা বলে দেওয়া যথেষ্ট নির্দয়ের মতো কাজ। আর যারা এ সব বলছে, খেলাটার সূক্ষ্ম ব্যাপার সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট ধ্যান-ধারণা নেই।
১৩০ রানটা কখনওই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না শ্রীলঙ্কার সামনে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গত বার ধোনিরা যে ভাবে জিতেছিল, তার পর ভারতকে নিয়ে আশায় ছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু এ বার ভারতীয় স্পিনাররা এমন ব্যাটিং লাইনের সামনে পড়েছিল যারা ইংলিশ ক্রিকেটারদের চেয়ে স্পিনটা ভাল খেলে। ম্যাচ জিততে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল মাহেলা, সঙ্গকারার ক্লাস পারফরম্যান্স। যে রকম খেলা দরকার, ওরা দু’জন সে রকমই খেলে গেল।
অধিনায়ক ধোনির জন্যও টুর্নামেন্টটা কিন্তু দারুণ গেল। সব সময় মাঠে নিজের উপস্থিতিটা বুঝিয়েছে, খেলাটার থেকে সব সময় এক পা এগিয়ে ছিল। আর ফাইনাল ম্যাচের আগে পর্যন্ত কোনও ভুল করেনি। আমার কাছে সবচেয়ে যে ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল, চাপের মুখে শ্রীলঙ্কার দৃঢ়তা। আর এ জন্যই বোধহয় শেষ ছ’-সাত বছরে ওরা পাঁচ বার ফাইনালে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy