Advertisement
E-Paper

প্রশাসক সৌরভের আবির্ভাব মৃদু দ্বন্দ্বের ছায়া নিয়ে

১৯৯৬। লর্ডস। ১৮ জুলাই, ২০১৪। ইডেন গার্ডেন্স। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে বোধহয় প্রথমের মতো দ্বিতীয় পংক্তিটাও আজ থেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ল! কারণ শুধু এটা নয় যে, দু’জায়গাতেই সৌরভের অভিষেক। ’৯৬-এর জুন ক্রিকেটার সৌরভের জন্ম দেখে থাকলে, শুক্রবারের ইডেন দেখল প্রশাসক সৌরভের জন্ম। যখন বিকেল নাগাদ সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার প্রদেয় প্যানেলে দেখা গেল যুগ্ম-সচিব পদে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক আছেন। কারণ শুধু এটাও নয় যে, ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলির দু’টো ‘অভিষেক’-ই এমন দু’টো জায়গায় হয়ে থাকল যা ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে পুণ্যতীর্থ। বরং কারণ এটাও যে, দু’টো ক্ষেত্রেই সৌরভের পারিপার্শ্বিক অনেকটা এক থেকে গেল!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৫
এ বার সিএবি-র চেয়ারে।

এ বার সিএবি-র চেয়ারে।

১৯৯৬। লর্ডস।

১৮ জুলাই, ২০১৪। ইডেন গার্ডেন্স।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে বোধহয় প্রথমের মতো দ্বিতীয় পংক্তিটাও আজ থেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ল! কারণ শুধু এটা নয় যে, দু’জায়গাতেই সৌরভের অভিষেক। ’৯৬-এর জুন ক্রিকেটার সৌরভের জন্ম দেখে থাকলে, শুক্রবারের ইডেন দেখল প্রশাসক সৌরভের জন্ম। যখন বিকেল নাগাদ সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার প্রদেয় প্যানেলে দেখা গেল যুগ্ম-সচিব পদে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক আছেন। কারণ শুধু এটাও নয় যে, ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলির দু’টো ‘অভিষেক’-ই এমন দু’টো জায়গায় হয়ে থাকল যা ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে পুণ্যতীর্থ। বরং কারণ এটাও যে, দু’টো ক্ষেত্রেই সৌরভের পারিপার্শ্বিক অনেকটা এক থেকে গেল!

বেহালার বীরেন রায় রোড থেকে লর্ডসের রাস্তা মসৃণ ছিল না ক্রিকেটার সৌরভের। কণ্টকাকীর্ণ সেই রাস্তার কোথাও বিরোধিতার মুখ ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার, কোথাও টিমের প্রভাবশালী কেউ।

বেহালার বীরেন রায় রোড থেকে ইডেন গার্ডেন্সের রাস্তাও তো একেবারে মসৃণ হল না প্রশাসক সৌরভের। ক্রিকেটজীবনের মতো অতটা না হলেও মৃদু কাঁটার খোঁজ এখানেও থেকে গেল। ঠারেঠোরে আপত্তি, দ্বন্দ্বের কাঁটা।

কী রকম?

শোনা গেল, প্রশাসক সৌরভকে নাকি এখনই সিএবি-র যুগ্ম-সচিব পদে দেখতে আপত্তি ছিল সিএবি-র কোনও কোনও মহলে। যে জল্পনাটা আরও জোরাল হল, তড়িঘড়ি সিএবি প্রেসিডেন্টকে এ দিন জরুরি বৈঠক ডাকতে দেখে। আজ পর্যন্ত নাকি প্যানেল ঘোষণার আগে বৈঠক করতে দেখা যায়নি সিএবি প্রেসিডেন্টকে। বলাবলি শুরু হয়ে যায়, সদস্যদের মধ্যে সৌরভের ব্যাপারটা নাকি সর্বসম্মত ভাবে পাশ করানোর জন্যই বৈঠক ডেকেছেন ডালমিয়া। যাবতীয় জল্পনা যাতে শেষ হয়। বৈঠক শেষেও যে সম্পূর্ণ মিটমাট হল, তা নয়। বরং বৈঠক শেষে সিএবি-র একটা প্রভাবশালী মহল মনে করিয়ে দিল, এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেখা যায়নি সিএবি-র সিনিয়র দুই প্রাক্তন সচিবকে। বলা হল যে, ওই দুই সিনিয়রের নাকি কিছুটা আপত্তি ছিল সৌরভের হাতে এখনই যুগ্ম-সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ তুলে দেওয়ার ব্যাপারে।

উক্ত দুই প্রাক্তন যুগ্ম-সচিবকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিলেন। বলে দিলেন, সৌরভই যোগ্যতম। এ সব কথা ওঠাই হাস্যকর। বৈঠকে না আসা নিয়ে একজনের বক্তব্য তিনি আগে থেকেই জানতেন কী হচ্ছে। বৈঠকে গিয়ে নতুন করে জানার কিছু ছিল না। অন্য জন আবার বললেন, তিনি পরের দিকে ছিলেন। যদিও অভিযোগকারী মহল পাল্টা বলছে, শেষাক্ত জন এসেছেন বৈঠক শেষের ঘণ্টা দু’য়েক পরে। আর ওই অংশের আপত্তির কারণ নাকি এক নয়, একাধিক। প্রথমত, সৌরভ এলে দল নির্বাচনের সময় প্রভাব খাটানো বন্ধ হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত, সৌরভ আসার পর সিএবি-র প্রশাসনিক কাঠামোর অনেক পরিবর্তনই নাকি হতে পারে। এত দিনের ধ্যান-ধারণাও অনেককে বদলাতে হতে পারে। প্রভাবশালী মহলের বক্তব্য— সিএবি-র বর্তমান সহ-সচিব প্রবীর চক্রবর্তীকে নাকি সচিব-যুদ্ধে নামানোর চেষ্টা হয়েছিল।

সিএবি সহ-সচিব যে যুগ্ম-সচিব পদের এক জন সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন, এটা ঘটনা। এ দিনের বৈঠকে তাঁর নাম উল্লেখ করে সিএবি প্রেসিডেন্ট বলেও দেন, ‘ও-ও খুব কাছাকাছি ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে সৌরভই সেরা লোক।’ মিডিয়া আবার কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থায় প্রশাসক অনিল কুম্বলের অবস্থার কথা তুললে ডালমিয়া আরও কাটা-কাটা, “এক জন ভাল ক্রিকেটার ভাল প্রশাসকও হতে পারে। আমি এটা তাই সমর্থন করি। বোর্ড প্রেসিডেন্ট যখন ছিলাম, তখনও করেছি।” বাংলা ক্রিকেটমহলও তাই মনে করে। সৌরভের অগ্রজ স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেকে মনে করেন, বাংলার ক্রিকেট-প্রশাসনে সৌরভ যোগ্যতম। ঠিক তেমনই বাংলা ক্রিকেটমহল মনে করে, ২৭ জুলাই সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভা সব দিক থেকে ব্যতিক্রমী হতে যাচ্ছে। প্রশাসক সৌরভের দৌড় শুরু ছাড়াও আরও দু’টো ব্যাপারে। এক, সিএবি সম্পূর্ণ বিরোধী-হীন হয়ে পড়ল। এত দিনের বিরোধী মুখ সমর পাল ভাইস প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে পড়ায়। আর দু’নম্বর ব্যাপারটার প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী।

বার্ষিক সাধারণ সভায় আরও এক প্রখ্যাত ক্রিকেটারের উপস্থিতি। ইনি, বাংলা ক্রিকেটের বর্তমান শুধু নন, স্বয়ং অধিনায়ক! লক্ষ্মীরতন শুক্ল আগামী ২৭ জুলাইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় থাকছেন। শালকিয়া ফ্রেন্ডসের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বার্ষিক সভায় সংশ্লিষ্ট ক্লাবের তিনি মনোনীত প্রতিনিধি। আজ পর্যন্ত কোনও বর্তমান বাংলা ক্রিকেটারকে বার্ষিক সভায় কোনও ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায়নি। সে দিক থেকে বাংলার হয়ে একশো রঞ্জি ম্যাচ খেলে ফেলা অধিনায়ক লক্ষ্মীর রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া শুধু অভিনব নয়, যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহীও।

এলআরএস নিজে অত কিছুতে ঢুকতে চান না। শুধু বললেন, “এত কিছু ভাববেন না। আমি আরও পাঁচ বছর বাংলার হয়ে ক্রিকেটটা খেলতে চাই। বার্ষিক সভায় যাব ক্রিকেট প্রশাসনটা কী রকম হয় একটু দেখতে, বুঝতে, আর ব্যাপারটা অনেক বেশি উপভোগ করতে।” কিন্তু শুক্রবার রাতের দিকেও সিএবি-র প্রভাবশালী কারও কারও কাছে ব্যাপারটা বিস্ময়কর ঠেকেছে। এত দিন তো এ রকম দেখা যায়নি লক্ষ্মীর মতো বাংলার কোনও প্রখ্যাত বর্তমানকে এ ভাবে প্রশাসনের ব্যাপারে ঢুকে পড়তে।

স্বাভাবিক ভাবে তাই একটা প্রশ্নও উঠে পড়েছে। প্রশাসক সৌরভের আবির্ভাব কি একটা ট্রেন্ডের জন্ম দিয়ে গেল বঙ্গ ক্রিকেটে? এর পর থেকে নিয়মিত ক্রিকেটারদের দেখা যাবে ক্রিকেট প্রশাসনে? সৌরভ, সৌরভের পর লক্ষ্মী, তারও পর...।

sourav cab administrator laxmi ratan shukla
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy