Advertisement
E-Paper

বেনজির বিস্ফোরণে আক্রান্ত সৌরভ-দর্শন

গাড়ি থেকে নেমে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রচণ্ড উত্তেজিত অশোক দিন্দা। এতটাই যে, ফুঁসতে শুরু করলেন। “আরে সিএবির প্ল্যানিং কোথায়? কোন ম্যাচ কোন উইকেটে হওয়া উচিত, সেটাই তো ঠিক করে উঠতে পারছে না। যে উইকেটে আজ খেললাম, সেটা কর্নাটক ম্যাচের জন্য ঠিক ছিল। কারণ এটা পাটা। কর্নাটক ম্যাচের উইকেটটায় এই ম্যাচটা করা উচিত ছিল। আমি পেসার, তবু বলছি জম্মু-কাশ্মীরের জন্য টার্নার হোক।”

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৯
ম্যাচ শেষে জরুরি বৈঠক। বঙ্গ টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে নির্বাচকদের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

ম্যাচ শেষে জরুরি বৈঠক। বঙ্গ টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে নির্বাচকদের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

গাড়ি থেকে নেমে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রচণ্ড উত্তেজিত অশোক দিন্দা। এতটাই যে, ফুঁসতে শুরু করলেন। “আরে সিএবির প্ল্যানিং কোথায়? কোন ম্যাচ কোন উইকেটে হওয়া উচিত, সেটাই তো ঠিক করে উঠতে পারছে না। যে উইকেটে আজ খেললাম, সেটা কর্নাটক ম্যাচের জন্য ঠিক ছিল। কারণ এটা পাটা। কর্নাটক ম্যাচের উইকেটটায় এই ম্যাচটা করা উচিত ছিল। আমি পেসার, তবু বলছি জম্মু-কাশ্মীরের জন্য টার্নার হোক।”

সন্ধেয় ক্লাবহাউস গেট দিয়ে বেরনোর সময় মিডিয়াকে নিজেই ডেকে নিলেন মনোজ তিওয়ারি। সাংবাদিক সম্মেলন করে পরিষ্কার বলে দিলেন, টিমে এখন অনেক বেশি মাথা। তাদের নানাবিধ প্রস্তাব, সব মানতে গেলে বিপত্তি আরও বাড়বে। “আমাদের ভাবতে হবে কোন কথাটা শুনলে ছ’টা পয়েন্ট আসবে। আমরা যদি সাত বা ছ’পয়েন্টের ম্যাচ খেলতে চাই, তা হলে উইকেটটাও সে রকম করো। বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা বিচার করে নামো। মনে হচ্ছে রঞ্জি ট্রফি জেতার নির্দিষ্ট লক্ষ্যটাই টিমে নেই!”

প্রশ্নটা শুনেই তিতিবিরক্ত অশোক মলহোত্র রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠলেন। “দিন্দা কী জানে? ও জানে জম্মু-কাশ্মীরের শক্তি-দুর্বলতা? কর্নাটক ম্যাচে আড়াইশোয় ন’টা চলে গেল। তার পরেও ওরা দেড়শো তুলল। এর পরেও দোষটা পিচের? আর কীসের টার্নার? আমার হাতে স্পিনার আছে যে, টার্নার বানাতে বলব?”

সিএবি প্রশাসক যেন বিহ্বল। বাংলা আজ ছ’পয়েন্ট হারানোর পর ছুটে গেলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার চেম্বারে। ফিরে যুগ্ম-সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় শুনলেন বঙ্গ ক্রিকেটারদের আক্রমণের বৃত্তান্ত এবং মুহূর্তে ক্রুদ্ধ, “কর্তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়াটাই তো সবচেয়ে সহজ। আমরা কী দিইনি ওদের? আর সব কিছু নিয়ে যখন এত সমস্যা হচ্ছে, তখন এত দিন আমাদের কেউ কিছু জানায়নি কেন? সৌরভের সঙ্গে এত মিটিং হল, তখনও তো একটা কথাও কেউ বলেনি।”

বঙ্গ ক্রিকেটের প্রাচীন ইতিহাস টিম বেঙ্গলের কম চড়াই-উতরাই দেখেনি। টিম রঞ্জি জিতেছে, টিমের অবনমন হয়েছে। টিমে বিভাজনও বঙ্গ ক্রিকেটে নতুন খবর নয়। প্লেয়ারে-প্লেয়ারে দলাদলি, কোচের সঙ্গে লেগে যাওয়া ছিল, থাকবেও। সাম্প্রতিকে আবার চার নির্বাচকের মধ্যেও দুটো ভাগ। কিন্তু এক ঘণ্টার বিতর্কের একটা স্পেল যে একটা টিমকে ভেঙে চুরচুর হয়ে দিচ্ছে, টিম স্পিরিটের তোয়াক্কা না করে বহির্জগতের কাছে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন টিমেরই সিনিয়ররা, পরোক্ষ ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে বাংলার সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের সিদ্ধান্তকে, এতটা সম্ভবত বঙ্গ ক্রিকেট কখনও দেখেনি।

বৃহস্পতিবারের ইডেন কিন্তু দেখল। দেখল, টিমের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য অভিযোগের আঙুল সরাসরি সিএবি প্রশাসনের দিকে তুলছেন ক্রিকেটাররা! দেখল টিম, পিচ, লক্ষ্য, কোনও কিছুতেই সহমত হতে পারছেন না এগারো জন। দেখল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে আক্রান্ত হতে। দেখল টিমের সহ-অধিনায়ক প্রকাশ্যে বলে দিচ্ছেন, তাঁকে অর্ধেক ম্যাচে টিম মিটিংয়েই ডাকা হয় না।

আশ্চর্যের হচ্ছে, বাংলা আজ তামিলনাড়ুর কাছে হারেনি। ম্যাচের প্রথম দিন থেকে যা অভীষ্ট ছিল, সেই তিন পয়েন্ট পেয়েছে। দীনেশ কার্তিকের সেঞ্চুরি ছ’পয়েন্ট আসতে দেয়নি। কিন্তু কার্তিকের ওই ইনিংস যে ভাবে বিতর্কের লাভাস্রোতে পুড়িয়ে দিল বাংলার সংসারকে, রাত পর্যন্ত তার কোনও বিষল্যকরণী নেই।

আর বিস্ফোরণগুলো ঘটালেন কারা? না, আট টিমের গ্রুপে আটে থাকা টিমের সদস্যরা। যাঁরা যত না খেলছেন, তার চেয়ে বেশি কথা বলছেন। গোটা দিনে চারটের বেশি উইকেট ফেলা গেল না। কিন্তু চারশো অভিযোগ তুলে টিমের আবহের বারোটা বাজানো গেল।

দিন্দাকে বলা হয়েছিল, সৌরভ নিজে চেয়েছেন গ্রিন টপে খেলুক বাংলা। তা হলে? উত্তরে সপাটে দিন্দা, “দোকানে মাল নেই। শাটার খুলে বসে থেকে কী হবে!” মনোজ আবার বুঝতে পারছেন না, সৌরভ যা বলেছেন সে রকম গ্রিন টপই দেওয়া হচ্ছে কি না। “এটা গ্রিন টপ। কিন্তু ফোর্থ ডে-তেই ব্যাটিং ট্র্যাক হয়ে গেল। তা হলে এটাকে কি শুধুই সবুজ পিচ বলা যায়? দাদি চেয়েছিল চ্যালেঞ্জিং উইকেট। সেটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু এটা? জম্মু ম্যাচে আর গ্রিন টপ না। টার্নারে ফেরা উচিত।”

যা শুনে চরম খেপেছে সিএবি। বলা হচ্ছে, টিমের এমন দুঃসময়ে কোথায় সিনিয়ররা স্পিরিট ফেরাতে এগিয়ে আসবেন। তা নয়, বিস্ফোরক অজুহাতে বাজার গরম করে লজ্জার বাস্তবটা ঢাকতে চাইছেন। যে বাস্তব বলছে, বরোদা সরাসরি জিতে এ দিন সাত পয়েন্ট পেয়ে যাওয়ায় বাংলার সঙ্কট আরও বাড়ল। যে বাস্তব বলছে অ্যাওয়ে ম্যাচে বরোদা যা করতে পারছে, ঘরের মাঠে মনোজ-দিন্দা তার ব্যবস্থা করতে পারছেন না। যে বাস্তব বলছে, গ্রুপে উত্তরপ্রদেশও এখন বাংলার ‘দাদা’।

কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় সব শুনে বললেন, “ঠিক আছে। জম্মু ম্যাচে টার্নার চাই তো? খোঁয়াড় দিয়ে দেব। দেখব কত পারে!” শোনা গেল, সামনের ম্যাচে গ্রিন টপ পাল্টে তিন স্পিনারে যাচ্ছে বাংলা। টিম এখন হবে না। হবে রবিবার, সৌরভ ফেরার পর।

টিমে এত গণ্ডগোল, এত অশান্তি দেখেও কেউ কেউ আশা ছাড়ছেন না। বলা হচ্ছে, সৌরভ ফিরলেই এগুলো মিটে যাবে। গত বার লিগ টেবলে অনেকটা এ রকম অবস্থা থেকেই তো পরের দিকে জিততে শুরু করেছিল বাংলা। এ বার পারবে না কেন?

পারলে ভাল। রূপকথা হবে। কিন্তু মুশকিল হল রূপকথা যদি রোজনামচা হত, পটার-সিরিজ পোকায় কাটত, রাউলিংয়ের সৃষ্টি লোকে ছুঁয়েও দেখত না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

তামিলনাড়ু ২৪৬-৯ ও ৩২৭-৫ (কার্তিক ১০৩ নট আউট, দিন্দা ২-৮১)

বাংলা ৪৫৪-৯ ডিঃ।

priyadarshini rakshit bengal ranji trophy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy