Advertisement
E-Paper

বঙ্গ-ক্যারিবিয়ান জোড়া বাউন্সারে অস্বস্তিতে নাইটদের দুই মহানায়ক

রবিন উথাপ্পা ক কারসন ঘাউড়ি বো কনিষ্ক শেঠ। সুনীল নারিন ক ও বো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ড।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০৩:৪৩
নাইট শিবিরের দুই মেজাজ। বান্ধবীর সঙ্গে ফুরফুরে রবিন উথাপ্পা। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় বিষণ্ণ সুনীল নারিন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

নাইট শিবিরের দুই মেজাজ। বান্ধবীর সঙ্গে ফুরফুরে রবিন উথাপ্পা। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় বিষণ্ণ সুনীল নারিন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

রবিন উথাপ্পা ক কারসন ঘাউড়ি বো কনিষ্ক শেঠ।

সুনীল নারিন ক ও বো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ড।

বেঙ্গালুরুর প্রাক্ আইপিএল ফাইনাল কেকেআর স্কোরকার্ড যদি কাউকে লিখতে বলা হয়, তা হলে এমনটা লিখে ফেললে বোধহয় খুব ভুল হবে না। অন্তত শুক্রবার গোটা দিনব্যাপী দুই কেকেআর মহারথীকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহকে ধরলে।

কেউ ভেবেছিল, ফাইনাল শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে বাংলার কনিষ্ক কলকাতার উথাপ্পাকে এমন বিপত্তিতে ফেলে দেবেন! মিচেল জনসন থেকে শুরু করে লাসিথ মালিঙ্গা ক্রিকেট বিশ্বের তাবড় পেসারকে যেখানে গত আট ম্যাচ ধরে ক্রমাগত শাসন করে গিয়েছে কেকেআরের ওপেনিং ব্যাট, সেই তাঁরই হেলমেট ঘেঁষে উড়ে যাবে উনিশের কনিষ্কের বাউন্সার! বঙ্গ পেসারের কয়েকটা সুইঙ্গার এমন যাবে যে, খোঁচা দিতে দিতে বেঁচে যেতে হবে নাইটদের রবিনহুডকে!

কেউ ভেবেছিল, ফাইনালের ঢাকে কাঠি পড়ার ঠিক আগে সুনীল নারিনের সামনে ‘বিভীষিকা’ হিসেবে আবির্ভূত হবে নিজ দেশেরই ক্রিকেট বোর্ড! যারা বলে দেবে, আইপিএল ফাইনাল খেললে খেলো। কিন্তু মনে রেখো, ১ জুন তোমাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরেও যোগ দিতে হবে। নইলে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে তুমি নেই! সোজাসুজি বললে, কেকেআর ছেড়ে ক্যারিবিয়ান সংসারে তাঁকে আইপিএল ফাইনালের দিনই আসতে হবে। বেছে নিতে হবে ক্লাব বা দেশের যে কোনও একটা!

সব কিছু ঠিকঠাক চললে, আগামী রবিবারের চিন্নাস্বামীতে অবশ্যই সুনীল নারিন কেকেআর জার্সিতে নামছেন। অবশ্যই কনিষ্কের কাছে সাময়িক ‘পরাজয়ে’ রবিবারের চিন্নাস্বামীতে উথাপ্পার ব্যাটে বিশেষ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু শুক্রবারের মানদণ্ডে কোথাও গিয়ে বোধহয় আইপিএল সেভেনে নাইটদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই যোদ্ধা একটু অস্বস্তিতেই রইলেন।

এ দিন দুপুরে টিম হোটেলে নারিন যখন ঢুকছিলেন, ততক্ষণে তাঁর উপর ক্যারিবিয়ান বোর্ডের ‘ফতোয়া’র খবর ক্রিকেটমহলে দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে উঠে পড়েছে অতি সঙ্গত প্রশ্ন রবিবারের ফাইনালে নারিন আছেন না নেই? কেকেআরের জার্সিতে নামছেন, না নামছেন না? কে না জানে, তিনি লিগ ম্যাচেও না থাকা মানে কেকেআর সংসারে প্রবল ধাক্কা। আর এটা তো ফাইনাল! ক্যারিবিয়ান অফস্পিনার না থাকা মানে তো টুর্নামেন্টের অন্তিম যুদ্ধে নামার আগেই কেকেআর টু সেট ডাউন! কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর ততক্ষণে মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে দিয়েছেন: নারিন বোর্ডকে অমান্য করতে চান না। বরং বোর্ডের কাছে কিছুটা ‘ফ্লেক্সিবিলিটি’ প্রত্যাশা করছেন। দু’এক দিনের ছাড়পত্র চাইছেন। যাতে রবিবার তিনি কেকেআর জার্সিতে নেমে নিজের কাজটা সম্পন্ন করে যেতে পারেন। আরও বলা হয় যে, নারিন নিজেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দেশের জার্সিতে তিনি অবশ্যই যুদ্ধে নামতে চান।

ক্যারিবিয়ান অফস্পিনার নিজে এই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। বারবার জিজ্ঞেস করা হলেও টিম হোটেলে উপস্থিত মিডিয়াকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে লিফটে উঠে পড়লেন। মহাযুদ্ধের আগে এমন অপ্রত্যাশিত চাপে কিছুটা বিব্রতই দেখাল তাঁকে। নারিন নীরব থেকে গেলেন বটে, কিন্তু পরের দিকে কেকেআর ম্যানেজমেন্টের বেশ কয়েক জনকে প্রবল আক্রমণাত্মক মেজাজেই পাওয়া গেল। ওয়াসিম আক্রম যেমন। সন্ধেয় টিম হোটেলে বসে বলে উঠলেন, “নারিন নিয়ে প্রশ্নের জবাবটা দিতে ভাল রকমই ইচ্ছে করছে। একটা কথা বলব। ওকে বাদ দিয়ে যদি নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তা হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই ক্ষতি।” কেকেআরের আর এক কর্তা রীতিমতো উগ্র ভাবে জানতে চাইছেন, আজ পর্যন্ত ঠিক ক’টা টেস্টে নারিনকে খেলিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ? ক’বার তাঁর বদলে শেন শিলিংফোর্ডকে খেলানো হয়েছে? পরিষ্কার বলে দেওয়া হল, কোনও ভাবেই ফাইনালের আগে ছাড়া হবে না। নারিন অবশ্যই দেশজ দায়িত্ব পালনে যাবেন। কিন্তু ফাইনালের আগে নয়। পরে। আচমকা ক্রিকেট ওয়েবসাইটের এমন খবরের ভিত্তিতে ভারতীয় বোর্ডও দেখা গেল বেশ অস্বস্তিতে। বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “এমন কোনও অনুরোধ তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড থেকে আমরা পাইনি। মিডিয়া থেকে শুনছি। বিভিন্ন দেশের বোর্ডের থেকে ছাড়পত্র জোগাড় করেই আইপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের খেলানো হয়। সরকারি ভাবে এমন অনুরোধ পেলে, অবশ্যই মেটানোর চেষ্টা করব। ফাইনালের আগে প্লেয়ার ছাড়া যায় নাকি?”

কিন্তু তখন কে জানত, নারিনেই সমাপ্তি নয়। রাহুল দ্রাবিড়ের শহরে আরও এক মহানাটকের বাকি আছে। এবং সেটা রবিন উথাপ্পাকে ঘিরে!

রবিবারের আইপিএল মহাযজ্ঞ ঘিরে চিন্নাস্বামীর সেলসিয়াস এতটাই ঊর্ধ্বমুখী যে কেউ টেরও পায়নি, কখন সাতসকালে টিম হোটেল থেকে বেরিয়ে উথাপ্পা জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির নেটে ঢুকে পড়েছেন। মিডিয়াও নয়। চিন্নাস্বামীতে একটার বদলে তখন দু’টো সম্পূর্ণ প্রস্তুত পিচ নিয়ে মশলার খোঁজ চলছে। ম্যাচ পিচ তো একটা। তা হলে দু’টো কেন? তা-ও আবার দু’রকম! খোঁজ চলছে, আইপিএল ফাইনালে আসছেন কে কে? গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদীর কাছে তো আমন্ত্রণ গিয়েছে। কিন্তু আসছেন কি? শ্রীনি তাঁকে দেখা যাবে? কেউ খেয়ালও করেনি, টিম কেকেআরের প্র্যাকটিস শিডিউল না থাকলেও গুরু ও শিষ্য নিজেদের মতো প্র্যাকটিস শিডিউল তৈরি করে নিয়েছিলেন।

প্রবীণ আমরে ও রবিন উথাপ্পা। আর প্র্যাকটিস শুরুর পরবর্তী আধ ঘণ্টায় যা ঘটল, তা যে কোনও বঙ্গক্রিকেটপ্রেমীর পরিতৃপ্তির কারণ হতে পারে।

ছাত্র নেটে পেস বোলার খেলবে বলে এনসিএ-র বর্তমান বোলিং কোচ কারসন ঘাউড়ির কাছে একজন ভাল পেসার চান আমরে। ঘাউড়ি এগিয়ে দেন বাংলার কনিষ্ককে। সদ্য অনূর্ধ্ব উনিশ বিভাগে পদার্পণ করা কনিষ্ক সুযোগ পেয়েই অত্যুৎসাহের চোটে ঘাউড়িকে জিজ্ঞেস করে বসেন, “স্যর, যদি রবিনের হেলমেটে মারি তা হলে আমাকে কেকেআরে নেবে?” প্রত্যুত্তরে ঘাউড়ি বলেন, “আগে ভাল করে বলটা করে এসো।” এবং বল করতে এসে সুইং আর বাউন্সে কনিষ্ক নাকি উথাপ্পাকে এতটাই বিভ্রান্ত করে দেন যে, নাইট ওপেনার বাগুইহাটির ছেলেকে বলে যান— ভাল করছ। আরও ভাল তোমাকে করতে হবে। ঘাউড়ি পরে ফোনে বলছিলেন, “কয়েকটা বল রবিনকে বিট করাল। গোটা দু’য়েক আবার রবিনের হেলমেট ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। ছেলেটা যেমন সুইং করাতে পারে, তেমনই বাউন্সার দেয়। খুব ভাল ট্যালেন্ট। রঞ্জি টিমে এখনই ওকে খেলানো উচিত।” আর বছর তিন-চার ধরে মেনল্যান্ড সম্বরণ অ্যাকাডেমিতে খেলে উঠে আসা বাঁ-হাতি পেসার কনিষ্কের কথা? তিনি বলে দিলেন, রবিনের বিরুদ্ধে ‘ম্যাচ জেতা’ মোটেও ক্রিকেটজীবনের সবচেয়ে সুখের দিন নয়। সেটা আসবে যে দিন তিনি ইন্ডিয়া জার্সিটা পাবেন।

কাল চিন্নাস্বামীতে নামতে চলা টিম কেকেআরে বাঙালি বলতে খুব সম্ভবত শুধু সাকিবই থাকবেন। কিন্তু টিম কেকেআরের অন্যতম স্তম্ভের ‘ফাইনাল প্রিপারেশনে’ যদি বাংলার কারও পরোক্ষ ভূমিকাও থেকে যায়, সেটাও বা মন্দ কী!

ipltag uthappa narine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy