পুষ্টিকর খাবার কিংবা নামী কোচের প্রশিক্ষণ দূরের কথা, অনেকের কাছে ফুটবল খেলার জুতোও ছিল না। তবে ছিল অদম্য মনের জোর আর জান লড়িয়ে দিয়ে মাঠ দখলে রাখার তেজ। ফুটবলকে পায়ে বশ করেই একের পর এক দলকে হারিয়ে রাজ্যস্তরের আন্তঃকলেজ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হল সারেঙ্গার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ফুটবল দল। ওই সেরাদের নিয়েই এখন মেতে আছে সারেঙ্গা। আর সেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে মঙ্গলবার কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজকে টাইব্রেকারে হারিয়েছে রাজ্য সেরার কাপটি হাতে তুলে নেয় সারেঙ্গার এই কলেজ। বুধবার ওই বিজয়ী দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে সারেঙ্গা বাজারে বিজয়োৎসব হয়। তাদের নিয়ে কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে সাধারণ বাসিন্দারা মিছিলে আনন্দ করেন। জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের সংবর্ধনা জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। সাতটি গাড়ির কনভয় করে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে সিমলাপাল, লক্ষ্মীসাগর থেকে সারেঙ্গা বাজার প্রদক্ষিণ করেন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
দিন পনেরো আগে আন্তঃকলেজ ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজকে টাইব্রেকারে হারিয়ে জেলা চ্যাম্পিয়ান হয় সারেঙ্গার এই কলেজ। তখনই অনেকে আশা করেছিলেন, এই দল অনেক দূর এগোবে। নক আউট পর্যায়ে এই দল বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে। সেমিফাইনালে তারা মুখোমুখী হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চ্যাম্পিয়ন সবং কলেজের সঙ্গে। সবং কলেজকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায় সারেঙ্গা। তারপরটা এই কলেজের কাছে ইতিহাস।
ফাইনালে চারুচন্দ্র কলেজকে হারিয়ে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন রঘুনাথ মুর্মু কলেজের গোলকিপার সঞ্জীব মণ্ডল। এই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ চারটি গোল করেছেন সারেঙ্গার দীপক সোরেন। ফুটবল খেলায় এই সাফল্যে গর্বিত কলেজের টিচার-ইনচার্জ কুন্তলকান্তি চট্টরাজ। তিনি বলেন, “আন্তঃকলেজ ফুটবল প্রতিযোগিতায় আমাদের কলেজ রাজ্য চ্যাম্পিয়ান হওয়ায় আমরা তো গর্বিতই, খুশি সমগ্র জঙ্গলমহল তথা বাঁকুড়া জেলা।”
কিন্তু লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না। কলেজের ক্রীড়া অধ্যাপক তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, তিনিই দলের কোচ তথা ম্যানেজার। তুষারবাবু বলেন, “ফুটবল দলের অধিকাংশ সদস্যই শারীরশিক্ষা বিভাগের ছাত্র। প্রতিদিন কলেজ মাঠে তাদের অনুশীলন করানো হয়। তবে শহরের কলেজ ছাত্ররা ভাল খেলার জন্য যে সব সুবিধা পান, আমাদের কলেজের খেলায়াড়রা তা পাননি। কলেজ ছাড়াও অনেকে স্থানীয় ক্লাবে খেলেন। শুধু মনের জোর নিয়েই ওরা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।” তিনি জানানস ১৮ জনের ওই দলের মধ্যে নজরকাড়া খেলেছেন সঞ্জীব মণ্ডল, দীপক সোরেন, মার্শাল মুর্মু, সুরেন্দ্র বেসরা, রামপ্রসাদ মুদি, তাপস মুদি, অর্জুন সোরেন, রমজান মুর্মু, সাগুন হেমব্রম। গোলকিপার সঞ্জীবকে পরাস্ত করে বিপক্ষের কোনও খেলোয়াড়ই গোল করতে পারেননি।
বিজয়ী দলের অধিনায়ক বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুরেন্দ্র বেসরা, গোলকিপার বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র সঞ্জীব মণ্ডল বললেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। আমরা সফল।” তাঁরা সাফল্যের অংশীদারিত্ব কলেজের প্রতিটি ফুটবল খেলোয়াড়কে দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও এই কলেজ সাফল্য ধরে রাখার চেষ্টা চালাবে বলে তাঁরা আশাবাদী।