Advertisement
E-Paper

রুনির সেরা ম্যাচ নিয়ে চলে গেলেন সুয়ারেজ

জয়সূচক গোল করে কেঁদে ফেললেন লুই সুয়ারেজ। আর এখানে মিডিয়া সেন্টারে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন উরুগুয়ের কিছু সাংবাদিক। অন্য দেশের রিপোর্টাররা মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে তখন ছুটছেন ভিডিওয় অভাবনীয় সেই দৃশ্য আর কান্নার রোল তুলে রাখতে! একটা গ্রুপ লিগ ম্যাচ পরিস্থিতি বিচারে নকআউট হয়ে গিয়ে কী অতিনাটকীয় চেহারা নিতে পারে, বিষ্যুদবার বিকেলের এরিনা সাও পাওলো তাই দেখল! প্রেস ট্রিবিউন বিতরণ করা ফিফার হিসেবে দেখছি বল দখলে ইংরেজরা যেখানে ৬১ শতাংশ, সেখানে উরুগুয়ে মাত্র ৩৯।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০২:৪৫
চোটের আশঙ্কা উড়িয়েই ইংল্যান্ডের সঙ্গে মরণবাঁচন ম্যাচে মাঠে নামলেন। দু’গোল করে দলকেও জেতালেন লুই সুয়ারেজ। প্রথম গোলের পরে সতীর্থের আলিঙ্গনে।  ছবি: উৎপল সরকার

চোটের আশঙ্কা উড়িয়েই ইংল্যান্ডের সঙ্গে মরণবাঁচন ম্যাচে মাঠে নামলেন। দু’গোল করে দলকেও জেতালেন লুই সুয়ারেজ। প্রথম গোলের পরে সতীর্থের আলিঙ্গনে। ছবি: উৎপল সরকার

জয়সূচক গোল করে কেঁদে ফেললেন লুই সুয়ারেজ। আর এখানে মিডিয়া সেন্টারে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন উরুগুয়ের কিছু সাংবাদিক। অন্য দেশের রিপোর্টাররা মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে তখন ছুটছেন ভিডিওয় অভাবনীয় সেই দৃশ্য আর কান্নার রোল তুলে রাখতে!

একটা গ্রুপ লিগ ম্যাচ পরিস্থিতি বিচারে নকআউট হয়ে গিয়ে কী অতিনাটকীয় চেহারা নিতে পারে, বিষ্যুদবার বিকেলের এরিনা সাও পাওলো তাই দেখল! প্রেস ট্রিবিউন বিতরণ করা ফিফার হিসেবে দেখছি বল দখলে ইংরেজরা যেখানে ৬১ শতাংশ, সেখানে উরুগুয়ে মাত্র ৩৯। কিন্তু শুধু বল দখলে তো ফুটবল হয় না। গোল করতে হয়। দু’টিমে সেই গোল করার সর্বশ্রেষ্ঠ লোক যেহেতু উরুগুয়ের নীল জার্সিতে খেলেন, তারাই ম্যাচটা শেষ মুহূর্তে জিতে ইংল্যান্ডকে বিশ্বফুটবল যুদ্ধ থেকে কার্যত বার করে দিল।

অন্য বারের মতো হাইপ না তুলে ইংল্যান্ডের অভিজাত ব্রডশিটগুলো এ বার ব্রাজিল ফুটবল-তীর্থযাত্রীদের উদ্দেশ্যে অনেক বাস্তববাদী দিগনির্দেশ দিয়েছিল। বলেছিল, ব্রাজিলে থাকাকালীন কী কী না দেখলেই নয়।

নাটাল: অসাধারণ সব সি বিচ।

পোর্তো আলেগ্রে: উদ্দাম নিশুতি জীবন।

রিও: ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের স্ট্যাচু এবং দুর্ধর্ষ সব সি ফিশ।

সাও পাওলো: আর্ট গ্যালারি

আর ফ্যাশন স্টোর্স। সান্তোসে গিয়ে পেলের ভিটে।

আর বলেছিল ফুটবলটা সঙ্গে থাক। কারণ ওটায় তো ইংল্যান্ডের বিশেষ কোনও সুযোগ নেই। দ্রুতই হারবে এবং সম্ভবত আর্জেন্তিনার কাছে দু’গোল খেয়ে হারবে। যাতে মনের দুঃখটা আরও বেশি হয়।

দু’গোলই হল। হারলও। শুধু লাতিন আমেরিকার অন্য দেশের কাছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে উরুগুয়েকে বলা হচ্ছিল ডার্ক হর্স। কোস্টারিকার কাছে খাওয়া তিন গোলে ঘোড়াটোড়া বলা বন্ধ হয়ে যায়। সম্ভবত আজ থেকে আবার শুরু হবে। শুধুই লুই সুয়ারেজের জন্য। প্রথম গোলটা অর্জুন রামপাল কাটিং। কাভানির সঙ্গে বুদ্ধি করে ওয়ান টু খেলতে খেলতে ঢুকে পড়ে। পরেরটা ডান দিক থেকে গোলার মতো শটে।

লিভারপুলের হয়ে চলতি মরসুমে ৩১ গোল করেছেন সুয়ারেজ। ভাবা হয়েছিল হাঁটুর চোট নিয়েও ম্যাচটা খেলতে বাধ্য হয়েছেন তো! ইপিএলের ফর্ম কিছুতেই এখানে দেখা যাবে না। দেখা গেল ভুল ভাবা হয়েছিল। গ্রুপ লিগের এই একটা ম্যাচ সময়-সময় সেমিফাইনাল সদৃশ চাপের হয়ে গিয়েছিল। সেটা একা বার করলেন সুয়ারেজ।

ঠিক উল্টো দিকে ড্যানিয়েল স্টারিজ ছিলেন। তিনিও ইপিএলের তারকা স্ট্রাইকার। কিন্তু সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলেন না এবং সেই প্রবাদবাক্যটা ভারী হল যে, বন্যেরা যেমন বনে সুন্দর তেমনই সুন্দর কিছু ইংরেজ ফুটবলার ইপিএলে!

এই তালিকায় আর যাতে তাঁকে না ফেলা যায় তার জন্য উরুগুয়ে ম্যাচে অবশ্য পর্যাপ্ত করেছেন ওয়েন রুনি। খেলা শেষ হওয়ার পনেরো মিনিট আগে রুনির গোলে ইংল্যান্ড ১-১-ও করে দিয়েছিল। কিন্তু চাপ রাখতে পারেনি। একটা টিম এত সংঘর্ষপূর্ণ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে মারামরির ম্যাচে যখন পিছন থেকে ফিরে গোল শোধ করে, তখন সচরাচর তারাই জেতে। এ দিনের ইংল্যান্ড ব্যতিক্রমী থাকতে বাধ্য হল দিয়েগো গডিনকে নিয়ে গড়া দুর্ভেদ্য উরুগুয়ে রক্ষণ আর সুয়ারেজের জন্য। গ্যারি লিনেকার থেকে শুরু করে তাবৎ ব্রিটিশ মিডিয়াই সম্মান যুদ্ধে অন্তত এ দিনের জয়ী। তাঁর একটা হেড ক্রসপিসে লেগে না ফিরলে ইংল্যান্ডেরই ১-০ এগিয়ে যাওয়ার কথা। যেটা দাঁড়াল, রুনি দেশজ মিডিয়ার বিরুদ্ধে জিতে উরুগুয়ের কাছে হেরে গেলেন।

টুর্নামেন্টের আগে করা যাবতীয় পূর্বাভাস এখন শুধু ভুলই প্রমাণ হচ্ছে না, হাস্যকর পর্যায়ে নেমে এসেছে। স্টিফেন হকিং যেমন! প্রবাদপ্রতিম পদার্থবিজ্ঞানীর পূর্বাভাস ছিল, দুটো ফ্যাক্টর কাজ করলে ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।

যদি ইউরোপিয়ান রেফারি ম্যাচ খেলান তা হলে শতকরা ৬৩ ভাগ বাড়বে। যদি তাপমাত্রা নেমে যায় অন্তত পাঁচ ডিগ্রি তা হলে শতকরা ৫৪ ভাগ আশা বাড়বে।

সাও পাওলোয় এ দিন মাঠের মধ্যে যে ঠান্ডা ছিল, তাতে গ্যালারিতে ফায়ারপ্লেস রাখলে কেউ আপত্তি করতেন না। আর স্পেনের রেফারি ম্যাচ খেলিয়েছেন। তাতেও তো রুনিকে ষোলো পিস লাগেজ আর পরিবার নিয়ে ফিরেই যেতে হচ্ছে!

আসলে এ সব পূর্বাভাস আজকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ম্যাচে সম্ভবই নয়। ওই রুনির হেডটাই যদি আগে গোল হয়ে যায়। তার পর উরুগুয়ের রডরিগেজ যদি ফাঁকা গোল পেয়েও বাইরে না মারতেন। ভাগ্যের টুকরোটাকরা এমন সব এক ইঞ্চি-আধ ইঞ্চি ঘুরে যাওয়া ব্যাপার থাকে যে, সেগুলোই হয়ে যায় চূড়ান্ত নির্ণায়ক।

তবে একটা পূর্বাভাস এরিনা সাও পাওলোয় বসে আজ করাই যায়। মেসির যদি উরুগুয়ে ডিফেন্স থাকত, তা হলে আর্জেন্তিনা ফেভারিট!

fifaworldcup gautam bhattacharya sao paulo suarez rooney
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy