Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আইপিএলে যা হতে পারে

সিএসকে ছেড়ে দিলেও বাঁচার রাস্তা নেই শ্রীনির

জেন্টলম্যানস গেমকে দুর্নীতির কোন অতলে তলিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এন শ্রীনিবাসন আর তাঁর দলবল, বৃহস্পতিবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের শুরু থেকেই সেটা স্পষ্ট। দ্বিতীয় পাতাতেই পরিষ্কার মন্তব্য করা হয়েছে, “যে দেশে ক্রিকেট শুধু আবেগ নয়, সারা দেশকে একসূত্রে বাঁধার শক্তিও, সেখানে ক্রিকেটকে কলুষমুক্ত করার আর্তি পূরণের একমাত্র উপায় ‘জিরো টলারেন্স অ্যাপ্রোচ’।”

ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:০০
Share: Save:

জেন্টলম্যানস গেমকে দুর্নীতির কোন অতলে তলিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এন শ্রীনিবাসন আর তাঁর দলবল, বৃহস্পতিবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের শুরু থেকেই সেটা স্পষ্ট। দ্বিতীয় পাতাতেই পরিষ্কার মন্তব্য করা হয়েছে, “যে দেশে ক্রিকেট শুধু আবেগ নয়, সারা দেশকে একসূত্রে বাঁধার শক্তিও, সেখানে ক্রিকেটকে কলুষমুক্ত করার আর্তি পূরণের একমাত্র উপায় ‘জিরো টলারেন্স অ্যাপ্রোচ’।”

আদালত যে ভাষায় এই দুর্নীতিপরায়ণ ক্রিকেট প্রশাসকদের আক্রমণ করেছে, যে ভাবে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে শ্রীনি ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসকদের বাণিজ্যিক স্বার্থ কী মারাত্মক জায়গায় চলে গিয়েছে, তা এক কথায় বেনজির। যে ক্রিকেটকে দেশের বহু মানুষ তাদের ধর্ম বলে মানে, সেই ক্রিকেটকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর ক্রিকেটপ্রেমীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, এমন মন্তব্যও করেছে মহামান্য আদালত।

যার নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট কলুষিত করার এই ‘অভিযান’, এই রায়ের পর সেই এন শ্রীনিবাসনের আর দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে ফেরার রাস্তা প্রায় বন্ধ বললেই চলে। কেন, তা ব্যাখ্যা করার আগে বলে রাখা ভাল যে, স্বার্থের সংঘাত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ দুটো কিন্তু একই বিষয় নয়। একই ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক দায়িত্ব ও পদ আঁকড়ে থাকলে তাকে স্বার্থের সংঘাত বলা হয়। কিন্তু সেখান থেকে যখনই কেউ আর্থিক ভাবে লাভবান হবে, তখন সেখানে বাণিজ্যিক স্বার্থ এসে যায়। শ্রীনির বিরুদ্ধে এই দুইয়েরই অভিযোগ রয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের তিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটি তাঁর এই দুই ভূমিকাই আরও ভাল করে খতিয়ে দেখবে। শুধু শ্রীনিবাসনই নন, তাঁর সঙ্গীসাথীদের কীর্তিকলাপও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে এই কমিটিকে।

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আর এন লোঢার নেতৃত্বাধীন এই কমিটিকে রিপোর্ট পেশ করার জন্য ছ’মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যত দিন না তদন্ত কমিটি তাদের শাস্তি নির্ধারণ করছে, তত দিন শ্রীনিবাসন বা বাণিজ্যিক স্বার্থ ও স্বার্থসংঘাত আছে এমন কেউই বোর্ড নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। ছ’মাস সময় যখন কমিটিকে দেওয়া হয়েছে এবং বিষয়টি যখন বেশ জটিল, লোঢা কমিটি সেই তদন্ত তাড়াহুড়ো করে ছ’সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে রিপোর্ট পেশ করতে পারবে বলে মনে হয় না।

শ্রীনিবাসন কালই যদি ঘোষণা করেন, চেন্নাই সুপার কিংস থেকে তাঁর ইন্ডিয়া সিমেন্টসের যাবতীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হচ্ছে, তা হলেও তিনি বাণিজ্যিক স্বার্থমুক্ত হয়ে যাবেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ, এর আগেও তিনি যা সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন, সেগুলো যে ক্রিকেটে তাঁর বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষার জন্যই, তা সুপ্রিম কোর্টের ১৩৮ পাতার রায়ে স্পষ্ট। বেটিং ও ফিক্সিংয়ে শ্রীনি জড়িত কি না, তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া না গেলেও তাঁর যে স্বার্থ সংঘাত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ দুটোই রয়েছে, এই নিয়ে সন্দেহ নেই আদালতের।

কাগজে কলমে শ্রীনিবাসনের সামনে বোর্ড নির্বাচনে ফেরার একটাই রাস্তা খোলা। ছ’সপ্তাহের মধ্যে যদি তিনি লোঢা কমিটির কাছ থেকে ক্লিন চিট পান এবং এই ছ’সপ্তাহের মধ্যে যদি তাঁর কোম্পানি ইন্ডিয়া সিমেন্টস চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে যাবতীয় আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে ও প্রমাণ করতে পারে, দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে তাদের কোনও বাণিজ্যিক স্বার্থ নেই। কিন্তু তা কতটা বাস্তবসম্মত ভেবে দেখার বিষয়।

সিএসকের সঙ্গে ইন্ডিয়া সিমেন্টস বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর অন্য কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিকে সেই জায়গা নিতে হবে। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে তখন খতিয়ে দেখতে হবে, সেই ব্যক্তি বা সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে কি না। বাজারে তার অবস্থান, তার আর্থিক সঙ্গতি, গত তিন বছরে তার আর্থিক অবস্থা এবং আরও অগুনতি বিষয় খতিয়ে দেখতে যে সময় লাগবে, তা ছ’সপ্তাহের চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তা ছাড়া যে ফ্র্যাঞ্চাইজির অদূর ভবিষ্যতে নির্বাসিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত, সেই ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন মালিক কে-ই বা হবে? তাই শ্রীনি এই রাস্তা ধরলে, তাও তাঁর কাছে অলীক স্বপ্ন হয়ে উঠতে পারে।

তাই আপাতত শ্রীনির লড়াই শেষ। বোর্ড প্রশাসনে ফেরার স্বপ্ন দেখা এ বার বোধহয় বন্ধই করতে হবে তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE