সুদীপকে টানা থ্রো-ডাউনের পাশাপাশি প্রচুর টিপসও দিলেন লক্ষ্মণ।
সোমবার যখন ইডেনে পা রাখেন ভিভিএস লক্ষ্মণ, তখন অনুশীলন শেষ তাঁর। তাই লক্ষ্মণের এ বারের ইডেন সফরের প্রথম দিন ঘটনাটা ঘটেনি।
মঙ্গলবার ঘটল। সাত সকালে হাজির দু’জনই। লক্ষ্মণ এবং এই মুহূর্তে বঙ্গ ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিময় ব্যাটসম্যান সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। এবং বাংলার উদীয়মান তারকাকে নিয়ে ঘষামাজার কাজটা ভালমতোই করলেন লক্ষ্মণ। দু’জনের সেশন চলল বেশ খানিকক্ষণ।
মাত্র দশটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচের কেরিয়ারে যাঁর গড় ৪৮। কুড়িটির মধ্যে ১৯২-এর এক ইনিংস ছাড়া যাঁর পাঁচটি ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি, সেই সুদীপকে নিয়ে যে লক্ষ্মণও আশাবাদী, তা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এক দিকে ব্যাট হাতে বাংলার এই নতুন প্রতিভাবান। উল্টো দিকে বল হাতে লক্ষ্মণ। ঝাড়া মিনিট কুড়ি সুদীপকে থ্রো ডাউন করে গেলেন লক্ষ্মণ। বুঝে নিলেন বাংলার এই তরুণ ব্যাটিং প্রতিভার প্লাস পয়েন্ট।
থ্রো ডাউনের জবাব দিতে দিতেই সুদীপ পাচ্ছিলেন নানা টিপস। কী সেগুলো? প্র্যাকটিসের পর বাংলার ব্যাটসম্যান বললেন, “মূলত ফুটওয়ার্কের উপর। ফ্রন্টফুটের ক্ষেত্রে পা-টা বোধহয় একটু বেশিই এগিয়ে ফেলছিলাম। ভিভিএস বললেন, অতটা এগোনোর দরকার নেই, একটু ছোট করে নাও। দেখলাম সুবিধাই হচ্ছে।” শুধু কি এইটুকুই? হায়দরাবাদি ব্যাটিং-শিল্পীর জ্ঞানের খনি থেকে বাঙালি তরুণ আহরণ করলেন আরও অনেক কিছু।
রঞ্জি ট্রফিতে শেষ পাঁচ ইনিংসে যাঁর ব্যাটে ১৯২, ৬৭, ৫৯, ৫৭-র মতো স্কোর রয়েছে, সেই সুদীপ বলছিলেন, “এমন কিছু জিনিস শুধরে দিলেন, যাতে মনে হচ্ছিল, আরে, এগুলো তো আগে ভেবে দেখিনি। ভেবে দেখলে ব্যাটিংটা আরও কিছুটা সহজ হত! দারুন কিছু টিপস পেলাম, যেগুলো ম্যাচে কাজে লাগাতে পারলে আরও নিখঁুত ব্যাটিং করতে পারব।”
এই অভিজ্ঞতার পর বেশ উত্তেজিত সুদীপ বললেন, “ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো একজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান আমাকে থ্রো ডাউন দিচ্ছেন, এটা অভাবনীয়। এমনিতেই ওঁর উপস্থিতিটাই আমাদের মারাত্মক ভাবে মোটিভেট করে। তার উপর উনি আমার জন্য এতটা সময় ব্যয় করলেন! আমার কাছে বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। আজকের এই অভিজ্ঞতা চিরকাল মনে থাকবে।” প্র্যাকটিসের পর আবার তাঁর ব্যাটিং অ্যাকশনের ভিডিও বিশ্লেষণ দেখতে ছুটলেন লক্ষ্মণ। অর্থাত্ একদিনেই তাঁর সুদীপ-চর্চা শেষ হয়ে যায়নি।
মাস দুয়েক আগে দলীপ ট্রফিতে লাহলির ভয়ঙ্কর উইকেটে ৯৯-এর ইনিংস খেলে আসা সুদীপকে নিয়ে আশায় বাংলার কোচ অশোক মলহোত্রও। চলতি রঞ্জিতে ৮৩.৫০-র গড়ে চার ইনিংসে ৩৩৪ রান করা দলের সফলতম ব্যাটসম্যানকে নিয়ে তিনি বলছেন, “ছেলেটার মধ্যে যথেষ্ট প্রতিভা আছে। প্রথম দিনই লক্ষ্মণকে সেটা বলি আমি। আপাতত সুদীপকে ভিভিএসের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমি নিশ্চিন্তে। আমার বিশ্বাস লক্ষ্মণের ক্লাসের পর সুদীপ আরও উন্নতি করবে।”
রঞ্জিতে আপাতত সবচেয়ে বেশি রানশিকারিদের তালিকায় তামিলনাড়ুর অভিনব মুকুন্দের (৩৫৭) পরই বাংলার সুদীপ। তবে গড়ের দিক থেকে মুকুন্দকে (৫৯.৫০) পিছনে ফেলে দিয়েছেন এই বাঙালি তরুণ। আর তিন ইনিংসে দু’টি সেঞ্চুরি করে ১০৮-এর গড়ে ৩২৫ করে তাঁর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন যুবরাজ সিংহ। এ সব নিয়ে অবশ্য ভাবছেনই না সুদীপ। শুধু ভিভিএসের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যাটিংয়ে মন দিতে চান বারাসাতের ছেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy