Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্র ওপেন

সতেরো স্ল্যামজয়ীদের সঙ্গে ফ্লাশিং মেডো মাতালো দামাল সতেরো

প্রথম দু’জনের ঝুলিতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের সংখ্যাই সতেরো। পরের দু’জনের বয়স এখনও সতেরোর গণ্ডি-ই পেরোয়নি! ফ্লাশিং মেডোয় পাঁচ বারের দুই চ্যাম্পিয়ন রজার ফেডেরার ও সেরেনা উইলিয়ামস যে দাপটে শুরু করলেন, তাতে তাঁদের ট্রফি জেতার সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো উৎসাহিত।

প্রতিশ্রুতিমান। ফ্লাশিং মেডোয় দুই উঠতি।

প্রতিশ্রুতিমান। ফ্লাশিং মেডোয় দুই উঠতি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

প্রথম দু’জনের ঝুলিতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের সংখ্যাই সতেরো। পরের দু’জনের বয়স এখনও সতেরোর গণ্ডি-ই পেরোয়নি!

ফ্লাশিং মেডোয় পাঁচ বারের দুই চ্যাম্পিয়ন রজার ফেডেরার ও সেরেনা উইলিয়ামস যে দাপটে শুরু করলেন, তাতে তাঁদের ট্রফি জেতার সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো উৎসাহিত। তবে নিখাদ চাঞ্চল্য সৃষ্টিতে বিশ্বের দুই সর্বকালের অন্যতম সেরাকেও টেক্কা দিয়ে গেলেন পঞ্চদশী ‘সিসি’ বেলিস এবং সতেরোর ক্রোট কিশোর বোরনা চোরিচ। সাড়া ফেলা দু’টি অঘটন ঘটিয়ে।

১৯৯৯-এ সেরেনা উইলিয়ামস যখন তাঁর প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতছেন, ক্যাথারিন কার্টান বেলিসের বয়স পাঁচ মাসও ছিল না। বড় হতে হতে বিশাল নামটা ছেঁটে হয়ে যায় আদরের ডাকনাম সিসি। মঙ্গলবার টুর্নামেন্টের বারো নম্বর বাছাই এবং এ বছরের অস্ট্রেলীয় ওপেনের রানার্স ডমিনিকা চিবুলকোভাকে ৬-১, ৪-৬, ৬-৪ ছিটকে দিয়ে সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটানোর পর ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল পড়ুয়া সেই ডাকনামেই রাতারাতি টেনিস বিশ্বের নতুন বিস্ময়! “খেলতে নেমেছিলাম অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা হবে ভেবে। আত্মবিশ্বাসী আর আক্রমণাত্মক থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিতব, স্বপ্নেও ভাবিনি!” বলেছে জিতেই ছুটে দর্শকাসনে বাবার কাছে চলে যাওয়া সিসি। যার বাবা গর্ডন বেলিস জানিয়েছেন ভীষণ কড়া ক’টা শর্তে মেয়ে তাঁকে গ্যালারিতে বসার অনুমতি দিয়েছিল। “শর্ত ছিল, দীর্ঘশ্বাস ফেলা চলবে না, ও শুনতে পাবে! নড়াচড়া বা কথা বলা চলবে না। এতে ওর নাকি মনঃসংযোগ নষ্ট হবে। তাই মুখে হাসি সেঁটে স্রেফ স্ফিংসের মতো বসেছিলাম। আর প্রার্থনা করছিলাম,” বলেছেন বাবা।

১৯৯৬-এ আনা কুর্নিকোভার পরে আবার কোনও পনেরো বছরের মেয়ে এ ভাবে ফ্লাশিং মেডো মাতিয়ে দিল। র্যাঙ্কিংয়ে ১২০৮, সিসি এ বার ক্লাস টেন-এ উঠবে। তাই পুরস্কারের টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজে অপেশাদার হিসাবে স্পোর্টসকে কেরিয়ার করতে চায় বলে। ১৯৯১-এ পনেরোর লিন্ডসে ডাভেনপোর্টের পর এ বছর সিসি যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া অনূর্ধ্ব-১৮ টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই সুবাদে এখানে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছে। তবে এখনও জুনিয়র পর্যায়ে নামতে পারে সে। এ বারই উইম্বলডন জুনিয়র খেলে প্রথম রাউন্ডে হেরেছে।

এ দিকে, সিসি-র থেকে একটু বড়, গত বছরের যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন, বিশ্বের ২০৪ নম্বর চোরিচ গ্র্যান্ড স্ল্যামে অভিষেকেই স্ট্রেট সেটে হারালেন বিশ্বের ২৭ নম্বর, চেক তারকা লুকাস রসোলকে। সেই রসোল যিনি দু’বছর আগে উইম্বলডন থেকে ছুটি করে দিয়েছিলেন রাফায়েল নাদালের। চোরিচ প্রবল নাদাল-ভক্ত। ৬-৪, ৬-১, ৬-২ জেতার পর বলেছেন, “নিজেকে বলেছিলাম, কোয়ালিফায়ার পেরিয়ে মেন ড্র-এ ঢুকতে পারলেই বুঝব, সব পেয়েছি। দ্বিতীয় রাউন্ড কল্পনাতেও ছিল না!”

বয়সে চোরিচের প্রায় দ্বিগুণ, তেত্রিশ বছরের ফেডেরার আবার রাতের আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে ‘অনুপ্রাণিত’ টেনিসে ৬-৩, ৬-৪, ৭-৬ (৭/৪) হারালেন অস্ট্রেলিয়ার মারিঙ্কো মাতোসেভিচকে। ফেডেরারের অনুপ্রেরণা, তাঁর নিজের কথাতেই, “আমার ছোটবেলার আইডল” বাস্কেটবল কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডান হাজির ছিলেন সুইস কিংবদন্তির খেলা দেখতে। জডার্নের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় বাছাই এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়েন যে, নিজের ফেসবুক, টুইটার অ্যাকাউন্টে তো বটেই, ইনস্টাগ্র্যাম-এ নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে প্রথম ছবিটাই জর্ডানের সঙ্গে নিজের মোলাকাতের পোস্ট করেন। কোর্টেও জর্ডানের জন্যই যেন বিশেষ একটা শটে তাক লাগান। নেটের উল্টো দিকে ফিরে দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে মারা ফেডেরারের সেই শট সটান মাতোসেভিচের পিঠে লাগলে গ্যালারিতে হেসে গড়িয়ে পড়েন জর্ডান। মাতোসেভিচ আবার খেলতে খেলতে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে জর্ডনের দিকে হাত নাড়তে নাড়তে চিৎকার করে ওঠেন, “আমি মাইকের মতো হতে চাই!” তিনি যে সেন্টার কোর্টে, সেটাই যেন কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলীয়!

ফেডেরারের পরেই আর্থার অ্যাশে নেমে মেয়েদের বিশ্বের এক নম্বর সেরেনা আবার জিততে নিলেন মাত্র ৫৫ মিনিট। ১৮ বছরের মার্কিন মেয়ে টেলর টাউনস্টেডকে ৬-৩, ৬-১ চুরমার করার পরেও অবশ্য সতর্ক শোনাল গত দু’বারের চ্যাম্পিয়নকে। চলতি বছরে একটাও গ্র্যান্ড স্ল্যাম না জেতাটা সেরেনাকে ভাবাচ্ছে, সেটা স্পষ্ট। বললেন, “এ বছর প্রতিটা গ্র্যান্ড স্ল্যামে আমি আগেভাবেই বড্ড বেশি ভেবে নিয়েছিলাম। তাই ঠিক করেছি, এখানে ইতিবাচক থেকে প্রতিটা ম্যাচ ধরে ধরে এগোবো।”

ডাবলসে রোহন বোপান্না-আইসাম কুরেশির ইন্দো-পাক এক্সপ্রেস লড়াই সত্ত্বেও প্রথম রাউন্ডে ছিটকে গেল ইতালীয় জুটি ডানিয়েল ব্রাকাল্লি-আন্দ্রিয়াস সেপ্পির কাছে ৬-৭ (১০-১২), ৬-৪, ৬-৭ (৫-৭) হেরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

us open tennis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE