ম্যাচ শেষে রোনাল্ডো থেকে কার্লো আন্সেলোত্তি, সবাই পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিলেন তাঁর। গোটা মেস্তায়া স্টেডিয়াম জুড়ে তখন চিৎকার হচ্ছে— ‘হালা মাদ্রিদ’। আবার অনেকের মুখে— ‘ধন্যবাদ নতুন রোনাল্ডো।’
আসলে গত রাতে যে তিনি আর টটেনহ্যাম থেকে রেকর্ড দামে সই করা বিতর্কিত সেই রিয়াল তারকা নন! যাঁর আত্মপ্রকাশের দিন মাদ্রিদ সমর্থকদের থেকেই শুনতে হয়েছিল- “নতুন ফুটবলারের জন্য মেসুট ওজিলকে যেন বিক্রি না করে ক্লাব।”
আসলে গত রাতে যে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের নতুন মহাতারকা। যিনি রোনাল্ডো-বিহীন রিয়ালের ত্রাতা। যিনি ছিলেন কোপা দেল রে-র এল ক্লাসিকো ফাইনালে বার্সেলোনা-বধের পিছনে মূল অস্ত্র।
‘তিনি’ বলতে আর কেউ নন। রিয়ালের ‘ওয়েলস উইজার্ড’ গ্যারেথ বেল।
রিয়াল মাদ্রিদকে মরসুমের প্রথম ট্রফি দিয়ে যিনি বলে দিয়েছেন, “স্বপ্ন সত্যি হল আজ। শুধু নিজে গোল করেছি বলে নয়, পুরো দলের জন্যই আমি খুশি। রিয়াল জার্সিতে প্রথম ট্রফি জিতে আমি সন্তুষ্ট। এ বার লক্ষ্য মরসুমের বাকি ম্যাচগুলোয় সেরাটা দেওয়া।”
এমনিতেই তীব্র গতিতে বিপক্ষের রক্ষণকে নাস্তানাবুদ করার জন্য ইউরোপ জুড়ে খ্যাতি আছে বেলের। তার উপরে আবার ফাইনালে লিও মেসিদের বিরুদ্ধে ৭.৫ সেকেন্ডে ৬৫ গজ দৌড়ে, সাইড লাইনের বাইরে বিপক্ষের বারত্রাকে (যাঁর ধাক্কায় বেল তার আগের মুহূর্তেই সাইড লাইনের বাইরে চলে গিয়েছিলেন) টপকে অবিশ্বাস্য গোল করার পরে ‘ওয়েলস উইজার্ড’ ছাড়াও নতুন তকমা পড়ে গেল বেলের নামের পাশে।
“স্বপ্ন সত্যি হল আজ। শুধু নিজে গোল করেছি বলে নয়, পুরো দলের জন্যই আমি খুশি।
রিয়াল জার্সিতে প্রথম ট্রফি জিতে আমি সন্তুষ্ট। এ বার লক্ষ্য মরসুমের
বাকি ম্যাচগুলোয় সেরাটা দেওয়া।” —গ্যারেথ বেল
স্পেনের রোড রানার।
তুলনা হচ্ছে জনপ্রিয় কার্টুনের সেই চরিত্রের সঙ্গে, যে বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়নোর জন্য প্রসিদ্ধ।
কোপা দেল রে ফাইনালে গোল করে বেল মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সান সিরোতে ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে করা সেই বিখ্যাত হ্যাটট্রিক। পুরো ম্যাচ জুড়ে নিজের গতিতে মাত করেছিলেন ইন্টারের আঁটোসাঁটো রক্ষণকে। বেলের অবিশ্বাস্য গোলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রিয়ালের ইতালীয় কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি। বলেছেন, “এটা অবশ্যই বেলের কেরিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল। রিয়ালের জন্য ঠিক সময় গোলটা এসেছে।” নিজের কেরিয়ারে কখনও এ রকম গোল দেখেননি, সাফ স্বীকার করছেন রিয়ালের মাঝমাঠের তারকা জাবি আলোন্সো। বলেছেন, “গোলটা অবিশ্বাস্য। এত বছর ফুটবল খেললেও এমন গোল কোনও দিন দেখিনি। দেখে মনে হচ্ছিল বলটা বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেলের অবিশ্বাস্য গতির দাপটে বলটা শেষ পর্যন্ত বার্সার জালে গিয়ে জড়ায়।” ব্রিটিশ মিডিয়া লিখছে, ‘রোনাল্ডোর ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছেন বেল।’
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে স্প্যানিশ কাপ জয় ছাড়াও রিয়াল সমর্থকদের আনন্দের আর এক কারণ ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কোপা দেল রে ফাইনালে হ্যামস্ট্রিং চোটে না খেললেও ফাইনালের রাতেই যিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম পর্বেই প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে তাঁর। বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে। রোনাল্ডো বলেছেন, “এই ম্যাচেই খেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য খারাপ। সুস্থ হচ্ছি ধীর গতিতে। এখন আর ব্যথা নেই। আমি হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম পর্বেই খেলব।” গত রাতে খেলতে না পারলেও মাঠের বাইরে এলএম টেনের বার্সেলোনাকে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়েননি সিআর সেভেন। “কোপা দেল রে জয়ের থেকেও ভাল লাগছে বার্সেলোনাকে হারিয়ে।”
বর্ণবিদ্বেষ বিতর্ক এল ক্লাসিকোয়
বিতর্কের রেশ ছড়িয়ে পড়ল ‘এল ক্লাসিকোয়’। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা, দুই ক্লাবের সমর্থকদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ আনা হল। ঘটনাটা কী? কোপা দেল রে ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল গ্যালারি থেকে নেইমার ও দানি আলভেজের উদ্দেশে বাঁদরের মতো হুপ হুপ আওয়াজ করা হয়। একই ভাবে বার্সেলোনা গ্যালারি থেকে রিয়াল ডিফেন্ডার পেপেকে গালিগালাজ করা হয়। এ ছাড়াও আবার রেফারির রিপোর্টে বলা হয় যে ম্যাচ চলাকালীন মাঠে লাইটার ছোড়া হয়। ছোড়া হয় ছোট গ্লাসের বোতলও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy