Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
State

পুরসভার কাজ চালাবেন ফিরহাদ হাকিমরাই, শীর্ষ আদালতে জয় নবান্নের

কলকাতা পুরসভার নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে গত ৭ মে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ১৮:০৭
Share: Save:

বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরই আপাতত কাজ চালিয়ে যাবে কলকাতা পুরসভার। সিলমোহর দিল খোদ শীর্ষ আদালত। বোর্ডের নিয়োগকে বেআইনি বলে চ্যালেঞ্জ করে যে মামলা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে পুরসভায় প্রশাসক বোর্ড নিয়োগ নিয়ে যে রাজনৈতিক এবং আইনি বিতর্ক শুরু হয়েছিল তাতে বড় জয় পেল রাজ্য, এমনটাই মনে করছেন আইনজীবীরা।

কলকাতা পুরসভার নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে গত ৭ মে। তার এক দিন আগে, ৬ মে, রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর কলকাতা পুরসভা আইন (১৯৮০)-এর ৬৩৪ নম্বর ধারাকে হাতিয়ার করে পুরসভার কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর গঠন করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য একটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনও পুরভোট করাতে অপারগ। সে কারণেই নাগরিক পরিষেবা প্রদান করার জন্য, পরবর্তী নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত ওই প্রশাসকদের বোর্ড পুরসভার কাজ চালাবে। বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেই বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। মেয়র পারিষদদের সদস্য করা হয় ওই বোর্ডে।

শুরু থেকেই এই বোর্ডের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। রাজনৈতিক বিতর্কের মাঝেই বোর্ড নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে তথ্য জানতে চান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ইতিমধ্যে উত্তর কলকাতার বাসিন্দা শরদ কুমার সিংহ নামে এক ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন এবং চ্যালেঞ্জ করেন বোর্ডের আইনি বৈধতাকে। হাইকোর্ট থেকে মামলা পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টে। বুধবার সেই মামলারই শুনানি ছিল শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতি এম খানউইলকর, দিনেশ মাহেশ্বরী এবং সঞ্জীব খন্নাকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে।

আরও পড়ুন: অবশেষে পথে নামছে বেসরকারি বাস-মিনিবাস, ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা

রাজ্য সরকারের পক্ষে সওয়াল করতে নামেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের নামী আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান। শীর্ষ আদালত সূত্রে খবর, আবেদনকারীর আইনজীবী কলকাতা পুর আইনের ৬৩৪ নম্বর ধারাকে নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। শ্যাম দিওয়ানের যুক্তি, ওই ধারাতে কোথাও উল্লেখ নেই যে সরকার বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করতে পারে। ফলে ওই আইনকে সামনে রেখে প্রশাসকদের বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া বা বিজ্ঞপ্তিই বেআইনি।

পাল্টা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতকে জানান, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পুরসভা নির্বাচনের আয়োজন করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোভিড পরিস্থিতির জন্য সেই নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি এবং তাঁরা যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে নির্বাচন করাতে পারবেন না, সে কথাও চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন রাজ্য সরকারকে। সেই পরিস্থিতিতে পুর এলাকার বাসিন্দাদের পুর পরিষেবা প্রদান করার জন্যই প্রশাসকদের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকের উদহরণ দিয়ে আদালতকে জানান, ওই দুই রাজ্যেও কোভিড সংক্রমণের জন্য উদ্ভুত অভূতপূর্ব পরিস্থিতির জন্য পুর নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে এবং স্থানীয় আইন অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি পুর আইনের ৬৩৪ ধারাকে আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ধারা বলে ব্যাখ্যা করেন।

ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে হওয়া এই মামলার শুনানির সঙ্গে যুক্ত এক আইনজীবীদের এক জন বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালতে এ দিন বিচারপতিরা এই ব্যাতিক্রমী সময়ে নাগরিকরা যাতে পুর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেন। এবং সেই পুর পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই প্রশাসকদের বোর্ডের প্রয়োজনীয়তার কথা কার্যত স্বীকার করে নেন। তাই আবেদনকারীর মামলা খারিজ করে দেন তাঁরা।”

ফলে মামলা ফের ফিরে এল কলকাতা হাইকোর্টে। এর আগে ৭ মে শরদকুমার সিংহ রিট পিটিশন ফাইল করলে সেই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের এজলাসে। তিনি বোর্ডকে তদারককারী বা কেয়ারটেকার হিসাবে পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।

আরও পড়ুন: শ্রমিকদের ১০ হাজার টাকা দিন, কেন্দ্রকে মমতা

এর পরেই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান শরদকুমার সিংহ। বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায় এবং তীর্থঙ্কর ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ আইনি না বেআইনি তা নিয়ে শুনানির অনুমতি দিলেও বিচারপতি তালুকদারের নির্দেশ অনুযায়ী বোর্ডকে কাজ চালিয়ে যেতে অনুমতি দেন। সেই শুনানির পরবর্তী দিন আগামী ২০ জুলাই। আইনজীবীদের দাবি, শীর্ষ আদালত আবেদজনকারীর মামলা খারিজ করে দেওয়ার অর্থ, আপাত ভাবে ওই বিতর্কে বড় জয় পেল রাজ্য সরকার এবং পরের ২০ জুলাই অবধি রাজ্য সরকার নিযুক্ত বোর্ড মসৃণ ভাবে কাজ করে যেতে পারবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE