Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Asansol

গোটা দেশে তারকা-ঘুঁটি ঢেলে সাজাচ্ছে বিজেপি, বাবুল কি আসানসোলে টিকিট পাচ্ছেন?

এ বার বাবুল আসানসোলে টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে জল্পনা জোরদার। দিল্লির বিজেপি সদর দফতর সূত্রের খবর, বাবুল সুপ্রিয় এ বারও আসানসোল থেকেই লড়বেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির একটি অংশ বলছে, বাবুল টিকিট এ বারও পাবেন, কিন্তু আসানসোলে আর নয়।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:০০
Share: Save:

প্রার্থী তালিকায় তারকার মেলা ছিল ২০১৪ সালে। উত্তর, পশ্চিম এবং পূর্ব ভারতে বিজেপির একগুচ্ছ তারকা প্রার্থী সাফল্যও পেয়েছিলেন। ২০১৯-এর ভোটের মাস চারেক আগে বিজেপির পরিস্থিতি যে রকম, তাতে তারকা প্রার্থীদের ঘাঁটানোর রাস্তায় একেবারেই হাঁটতে চাইবেন না বিজেপি নেতৃত্ব— এমনই জল্পনা ছিল রাজনৈতিক শিবিরে। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, ঠিক উল্টোটাই ঘটতে চলেছে। বাংলা থেকে জিতে মন্ত্রী হওয়া তারকা বাবুল সুপ্রিয় আসানসোলে টিকিট পাচ্ছেন কি না, তা নিয়েও বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতাদের মধ্যে মতের ফারাক দেখা যাচ্ছে।

গোটা বাংলার রাজনৈতিক শিবিরকে খানিকটা চমকে দিয়েই ২০১৪ সালে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। গায়কবাবুল ৭০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের দোলা সেনকে। পরে কেন্দ্রীয় তিনি মন্ত্রীও হন।

কিন্তু এ বার বাবুল আসানসোলে টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে জল্পনা জোরদার। দিল্লির বিজেপি সদর দফতর সূত্রের খবর, বাবুল সুপ্রিয় এ বারও আসানসোল থেকেই লড়বেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির একটি অংশ বলছে, বাবুল টিকিট এ বারও পাবেন, কিন্তু আসানসোলে আর নয়।

কেন আসানসোলে নয়? রাজ্য স্তরের এক নেতার দাবি, আসানসোলের বিজেপি কর্মীরাই সাংসদের কাজকর্মে খুশি নন। কেন খুশি নন? কারণ, বাবুল এলাকার সব অংশের কর্মীদের মতামত মেনে কিছুই করেননি, আসানসোলে বাবুলের যাবতীয় কার্যকলাপ তাঁর নিজের খেয়ালখুশিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এমনটাই দাবি কলকাতার ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর।

বাবুলের আসানসোল আসন নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।

আরও একটা তত্ত্ব ভাসছে— বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এ বার বাংলা থেকে লড়তে পারেন এবং তাঁর জন্য আসানসোল, উত্তর কলকাতা এবং হাওড়ার কথা ভেবে রাখা হয়েছে। অমিত শাহ যদি আসানসোলে দাঁড়ান, তা হলে বাবুল সুপ্রিয়কে ওই আসন ছাড়তেই হবে। সে ক্ষেত্রে পাশের আসন বর্ধমান-দুর্গাপুরে বাবুলকে টিকিট দেওয়া হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় নিজে অবশ্য এই সব তত্ত্ব পত্রপাঠ নস্যাৎ করছেন। তিনি বলছেন, ‘‘আসানসোলে আমিই দাঁড়াব। এবং আমিই জিতব।’’ বাবুল আরও বলেন, ‘‘কে আমার বদনাম করছেন, জানি না। তবে এটা সবাই জানে যে, যদি অনেক ‘বন্ধু’ আমার নিন্দা করে, তার মানে আমি নিশ্চয়ই ভাল কাজ করছি।’’

আরও পড়ুন: তিন রাজ্যে হারের ধাক্কা! ১৭ নয়া পর্যবেক্ষক আনলেন অমিত

সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যে বিজেপির হারের পরে অবশ্য বাংলার কোনও আসন থেকে অমিত শাহের ভোটে দাঁড়ানোর জল্পনা কিছুটা ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলায় বিজেপির সম্ভাবনা আগের চেয়ে বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু হিন্দি বলয় বিজেপির জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানে যে ধাক্কা বিজেপি খেয়েছে, নেতৃত্ব এখন সর্বাগ্রে সেই ধাক্কা সামলানোয় নজর দেবেন। সুতরাং বাংলা বা ওডিশায় ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিকল্পনা এখন একটু পিছনের সারিতে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ থেকে না-ও লড়তে পারেন, বাবুলকে নিজের আসন না-ও ছাড়তে হতে পারে।

জল্পনা অবশ্য শুধু বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে নয়। বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে বিজেপির আর এক তারকা সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্‌হাকে নিয়ে জল্পনা আরও অনেক জোরদার। গত চার বছর ধরে যে ভাবে নাগাড়ে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের সমালোচনা করে গিয়েছেন শত্রুঘ্ন, যে ভাবে বার বার পার্টি লাইনের উল্টো কার্যকলাপ করেছেন, তাতে বলিউডের ‘বিহারিবাবু’কে টিকিট দেওয়ার ইচ্ছা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একেবারেই নেই— খবর বিজেপি সূত্রের।

আরও পড়ুন: কর্পোরেট ভঙ্গিতে বিজ্ঞাপন, অ্যাপের মাধ্যমে চাঁদা দেওয়ার ডাক বিজেপির, নেপথ্যে কি সমীক্ষা?

উত্তরপ্রদেশের মথুরায় এ বার হেমা মালিনীকে আর টিকিট দেওয়া হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। সাংসদ হিসেবে মথুরাকে হেমা একেবারেই সময় দেননি, দাবি স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের অনেকেরই। ক্ষোভ রয়েছে যথেষ্টই। তাই হেমা মালিনীকে এ বার ছাঁটা হতে পারে প্রার্থী তালিকা থেকে।

মথুরায় অনিশ্চিত হেমা মালিনী।

চণ্ডীগড়ের সাংসদ কিরণ খেরের কেন্দ্র বদল হতে পারে বলে খবর। তাঁকে অমৃতসরে টিকিট দেওয়া হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। অমৃতসর আসনে জেতার একটা প্রতীকী তাৎপর্য বরাবরই রয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে ওই আসন বিজেপির দখলে ছিল টানা ১০ বছর। কিন্তু ২০১৪ সালে মোদী ঝড়ের মাঝে অমৃতসর বিজেপির হাতছাড়া হয়ে যায়। পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি কংগ্রেসের ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ অমৃতসরে হারিয়ে দেন হেভিওয়েট বিজেপি প্রার্থী অরুণ জেটলিকে। এখন অমরেন্দ্র পঞ্চাবের মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৯-এর ভোটে অমৃতসর থেকে আর লড়বেন না তিনি। তাই কিরণ খেরের মতো তারকা প্রার্থীকে আসরে নামিয়ে পুরনো গড় পুনরুদ্ধার করার একটা চেষ্টা বিজেপি চালাবে বলে জল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: বিজেপিতে গাঢ় হচ্ছে সঙ্ঘের ছায়া? উত্তরপ্রদেশে ভোটের দায়িত্বে কট্টর মোদী সমালোচক গোর্ধন

উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে টিকিট না পেতে পারেন মনোজ তিওয়ারি।

ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সুপারস্টার মনোজ তিওয়ারিও এ বার উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে টিকিট পাচ্ছেন না বলে খবর। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রথম বার বিজেপির হয়ে লড়েন। উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে প্রায় লাখ দেড়েক ভোটে জেতেন। মনোজকে পরে দিল্লি বিজেপির সভাপতিও করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে দিল্লির দুই নগর নিগমের ভোটে আম আদমি পার্টিকে গোহারা হারায় বিজেপি। এ হেন মনোজ তিওয়ারি টিকিট পাবেন না কেন? বিজেপি সূত্রের খবর, মনোজকে ২০২০-র দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই তৈরি হতে বলেছেন জাতীয় নেতৃত্ব। তাই এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে না-ও লড়ানো হতে পারে।

আর এক তারকা সাংসদ পরেশ রাওয়ালকে নিয়ে অবশ্য কোনও জল্পনা এখনও পর্যন্ত নেই। গুজরাতের বদোদরা থেকেই এ বারও পরেশ টিকিট পাচ্ছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE