Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
BJP

মেদিনীপুর সমাবেশে কৃষক ও তফসিলি উপস্থিতি চান অমিত, তৎপর বিজেপি

নয়া কৃষি আইন নিয়ে কৃষক বিক্ষোভে চাপের মুখে মেদিনীপুরের সমাবেশ থেকে অমিত বার্তা দিতে চান, কৃষকরা রয়েছেন তাঁদের পাশেই।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:১৯
Share: Save:

বিশাল সংখ্যা কৃষকদের এনে ভরাতে হবে অমিত শাহর শনিবারের সভাস্থল। এই মর্মেই বঙ্গ বিজেপি-কে নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। নয়া কৃষি আইন নিয়ে কৃষক বিক্ষোভে চাপের মুখে মেদিনীপুরের সমাবেশ থেকে অমিত বার্তা দিতে চান, কৃষকরা রয়েছেন তাঁদের পাশেই। তবে শুধু কৃষক নয়, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার তফসিলি জাতি ও উপজাতি মানুষকেও অমিতের সভায় জড়ো করার লক্ষ্য নিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। বিজেপি-র দাবি, শনিবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের সমাবেশ হবে। তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশই থাকবেন কৃষক। বাকি জনতার মধ্যে বড় সংখ্যায় থাকবেন তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষেরা। এর জন্য কেশিয়ারি, নারায়ণগড়, গড়বেতা, শালবনি, ধেড়ুয়া, চাঁদড়া, গোয়ালতোড়, ঝাড়গ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুর জেলা বিজেপি-র সহ সভাপতি শুভজিৎ রায়। তাঁর দাবি, ‘‘তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষেরা যে বিজেপি-র সঙ্গে, তা গত লোকসভা নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনেও যে সেই সমর্থন মিলবে, সেটা শনিবারের সভায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

অমিতের চাহিদামতো সমাবেশে কৃষকদের জমায়েত করতে ইতিমধ্যেই জোর তৎপরতা শুরু করেছেন তিন জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরেই। যা পরিকল্পনা, তাতে হাজার তিনেক বাস ও অন্যান্য গাড়ি করে শনিবার মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হবে কৃষকদের। জানা গিয়েছে, মূলত জোর দেওয়া হয়েছে চন্দ্রকোনা টাউন, সবং, পিংলা, দাসপুর এলাকায়। এই লক্ষ্যে শুক্রবারই পিংলায় কৃষকদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অমিতের সভায় বড় অংশের কৃষকের উপস্থিতি থাকবে বলে জানিয়ে দিলীপ বলেছেন, "আমরা দেখিয়ে দেব, যে কৃষকরা আমাদের সঙ্গেই আছেন। কেন্দ্রের সরকার যে কৃষক-বিরোধী নয়, বিশাল অঙ্কে সভায় উপস্থিত থেকে সেটা বুঝিয়ে দেবেন কৃষকরাই।"

সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা বঙ্গসফরে এসে কলকাতায় বস্তিবাসী এবং ডায়মন্ড হারবারে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নড্ডার পরেই রাজ্যে আসছেন অমিত। নড্ডা যেমন বস্তিবাসী ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, অমিত তেমন বার্তা দিতে চাইছেন কৃষক ও তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষদের। কেন এমন উদ্যোগ? রাজ্য বিজেপি-র মুখপত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে নরেন্দ্র মোদীর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ এবং সব কা বিশ্বাস’ বার্তা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।’’ যদিও ওয়াকিবহালরা মনে করছেন, সম্প্রতি শুরু হওয়া রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির মোকাবিলা করতেই এই পথ নিচ্ছে বিজেপি। রাজ্যের এই কর্মসূচিতে ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘খাদ্যসাথী’, ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ ও ‘কৃষকবন্ধু’র মতো ১০টি প্রকল্প রয়েছে। তার জবাব দিতেই বিজেপি আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছতে চাইছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি ইতিমধ্যেই রাজ্যে সাড়া ফেলেছে। তৃণমূলের নেতাদের দাবি, এই প্রকল্পই ‘খেলা ঘুরিয়ে দেবে’। ফলে সেই কর্মসূচির মোকাবিলা করা বিজেপি-র প্রয়োজন।

নয়া কৃষি আইনের প্রতিবাদে দেশের রাজধানী দিল্লির সীমানায় অবস্থান বিক্ষোভ চলছে প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের হাজার হাজার কৃষক লাগাতার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকেও বরফ গলেনি। এই পরিস্থিতির মধ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে মেদিনীপুরে সমাবেশ অমিতের। রাজনৈতিক জল্পনা— ওই সমাবেশ হয়ে উঠতে পারে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার মঞ্চ। শুভেন্দু অধিকারী-সহ অনেকেই অমিতের হাত থেকে পদ্মের পতাকা নিতে পারেন। তবে বিজেপি সূত্রে যা খবর, তাতে অমিতের বক্তব্যের বড় অংশ জুড়ে থাকতে পারে কৃষকদের সমস্যার কথা। মমতা সরকারের জন্য বাংলার কৃষকরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে আক্রমণ শানাতে পারেন অমিত। একই সঙ্গে তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষদের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার কী কী প্রকল্প এনেছে, তা-ও হতে পারে অমিতের হাতিয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Amit Shah Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE