বর্ষার মতো শীতও কয়েকটি ছোটো ছোটো ধাপে বাড়ে- কমে।
একবার তেড়েফুঁড়ে আসছে। জাঁকিয়ে বসতে না বসতেই হাওয়া! এই বাক্স খুলে বেরলো মাফলার, মাঙ্কিক্যাপ। পরা শুরু করতে না করতেই আকাশে মেঘের আনাগোনা। বর্ষশেষের ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ইতিহাস বলে মনে হচ্ছে। ১০ দিনের মধ্যে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ১৬.৪ ডিগ্রি। মাঙ্কিক্যাপের কথা তো চিন্তাই করা যাচ্ছে না। রাতে লেপ পর্যন্ত গায়ে রাখা যাচ্ছে না। ঘুমকাতুরে বাঙালির তাই মুখ ব্যাজার।
এটা কি শীত? সকালে মুখ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে না। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আপাদমস্তক মুড়ে হি-হি করে কাঁপতে হচ্ছে না। বার বার গরম চায়ে চুমুক দিতেও মন চাইছে না। দুপুরে ছাদে উঠে সূর্যের দিকে পিঠ দিয়ে বসলে চোখ বুজে আসছে না। সূর্যের তেজই বা কোথায়? মাঝে মাঝেই মেঘ এসে সূর্যের মুখে যেন মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছে। শীতের এই লুকোচুরিতে বঙ্গবাসীর মনমেজাজ খিঁচড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির নীচে নেমে গেলে প্রতি শীতের মরসুমেই মনে হয় এমন শীত আগে পড়েনি। আবার আকাশ মেঘে ঢাকা পড়ে তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রিতে উঠে গেলে প্রতি বছরই মনে হয়, এমন হতচ্ছাড়া শীত আগে আসেনি। শীতের এই হঠকারিতা কিন্তু বাৎসরিক। এই লুকোচুরিকে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করছেন না আবহবিদেরা। তাঁদের মতে, এটাই শীতের ধরন। বিশেষত গাঙ্গেয় উপত্যকায়।
আবহবিদেরা বলছেন, বর্ষার মতো শীতও কয়েকটি ছোটো ছোটো ধাপে বাড়ে- কমে। শীতকে নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি প্রাকৃতিক বিষয়। এক, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। দুই, উত্তুরে হাওয়া এবং তিন, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ রেখা।
ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীর দিয়ে ভারতে ঢোকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। বসন্তের দূত তেমন কোকিল, তেমনই ভারতে শীতের দূত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। এই ঝঞ্ঝা এমন একটি বায়ুপ্রবাহ, যা বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্প কে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায়। আকাশ পরিষ্কার করতে করতে এগোয়। যেহেতু জলীয় বাষ্প নিয়ে ওই বাতাসের কারবার, তাই যে এলাকার উপর দিয়ে সে বয়ে যায়, সেখানে তুষারপাত বা বৃষ্টি হয়। দিল্লিতে গত দু-তিন ধরে যে বৃষ্টি হচ্ছে তার কারণও ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা।
ওই ঝঞ্ঝা অবশ্য দফায়-দফায় আসে। কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ে তাই তুষারপাত হয় দফায় দফায়। ওই ঝঞ্ঝা সরে গেলেই কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। তাপমাত্রা নামতে থাকে লাফিয়ে। এটাই শীতের রসায়ন। ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই উত্তর ভারত থেকে নেমে আসে গাঙ্গেয় উপত্যকায়। যা শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকেই। তবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ফলে গাঙ্গেয় উপত্যকায় বৃষ্টি তেমন হয় না। আবহবিদেরা বলছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা গাঙ্গেয় উপত্যকায় এসে পৌঁছনোর সময় শক্তি হারিয়ে ফেলে। এই বায়ুপ্রবাহের ফলে বঙ্গোপসাগরের উপরে নিম্নচাপ রেখা তৈরি হয়। নিম্নচাপ রেখাই বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প ঢুকিয়ে দেয় পরিমণ্ডলে। তার ফলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এখনও যেমন বাড়ছে।
আবহবিদদের অবশ্য আশা, এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বিদায় নেওয়ার পরে আকাশ পুরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার পিছন পিছন আসা উত্তুরে হাওয়া ঢুকে পড়বে গাঙ্গেয় উপত্যকায়। দিল্লিতে আকাশ পরিষ্কার হলেই কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় উপত্যকায় উত্তুরে হাওয়া ঢুকতে শুরু করবে। পৌষ সংক্রান্তির আগেই ফের আরেক দফা ঠাণ্ডা পড়তে পারে। তবে সেটাই শেষ দফা কি না, সেই চিত্রটা পরিষ্কার নয় আবহবিদদের কাছে। কাশ্মীর দিয়ে যতদিন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকবে, ততদিনই শীতের আশা থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy