ছবি: এএফপি।
গোটা দেশে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংহতির বার্তা দিতে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানোর ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংহতি জ্ঞাপনের নামে কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল অকাল দেওয়ালি! কলকাতা-সহ সারা রাজ্যেই রবিবার রাত ৯টার পর থেকে দেদার ফাটল শব্দবাজি, উড়ল ফানুস। এমনকি, মুহূর্মুহূ শোনা গেল ‘ভাগ করোনা, ভাগ’, কখনও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিও। রোগ মোকাবিলার কঠিন লড়াইয়ের সময়ে এমন বিজয়োৎসবের আতিশয্য ডেকে আনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। বিজেপি অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই খুশি। তাদের তরফে পাল্টা বলা হল, সাধারণ মানুষ মোদীর আহ্বানের প্রতি বিরোধিতার জবাব পটকা ফাটিয়ে দিয়েছেন!
রাজ্যের শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব ‘দীপ জ্বালো’র প্রশ্নে একই বিন্দুতে। তাঁরা কেউ সক্রিয় ভাবে এতে অংশগ্রহণ করেননি। বরং, সচেতন ভাবে আলো জ্বেলে রেখে ‘অবৈজ্ঞানিক’ ওই আহ্বানের বিরোধিতা করেছেন। অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতা বলেছেন, এমনিতেই অন্ধকার দেশে আরও অন্ধকার না করে তিনি তাস খেলায় মন দিয়েছিলেন! সন্ধ্যায় ডিওয়াইএফআই-এর ডাকে ফেসবুক লাইভে ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ভাষণ’ কর্মসূচিতেও সাড়া ছিল ভালই।
উল্টো দিকে, সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রচার চালিয়ে, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত থেকে পাপিয়া অধিকারীর মতো ব্যক্তিত্ব বা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো ধর্মীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ভিডিয়ো বা লিখিত বার্তা ছড়িয়ে দীপ জ্বালানোর কর্মসূচিকে সফল করার চেষ্টায় ঝাঁপিয়েছিল। দলের কর্মীদের প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার নির্দেশও ছিল তেমনই। দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, মুকুল রায়, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, অগ্নিমিত্রা পাল-সহ বিজেপির পরিচিত সব মুখই বাড়িতে আলো নিভিয়ে মোমবাতি, প্রদীপ বা মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বেলেছিলেন।
আরও পড়ুন: ভোট হোক বা করোনা, যুদ্ধে অগ্রবর্তী কিউআরটি
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজি, পটকা ফাটিয়ে উৎসব করে দূষণ ঘটানো হল! এটা কি বিজয়োৎসবের সময়? গোটা দেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে একটা উৎসব করে দেওয়া হল।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, ‘‘চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই এবং আরও নানা মানুষের কাছে জরুরি সামগ্রী পৌঁছচ্ছে না। অথচ আতসবাজি পাওয়া গেল কোথায়? তা হলে কি এত বাজি মজুতই ছিল?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের কথায়, ‘‘চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষের কাছে জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে থালা বাজানো, বাজি ফাটানো জরুরি! সঙ্কটের সময়ে রাজনীতির বার্তাই তাঁর কাছে বড়।’’
রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই অবশ্য মানছেন, রোগের আক্রমণে ঘরবন্দি মানুষের একঘেয়েমি ও অবসাদ কাটাতে একটু ভিন্নতার স্বাদ কাজে লাগে। কিন্তু সেটাই এ দিন পৌঁছে গিয়েছে উৎকট মাত্রায়! আর রাতে দিকে দিকে দেওয়ালির খবর আসতেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের বিরোধিতা যাঁরা করছিলেন, মানুষ বাজি ফাটিয়ে তাঁদেরই জবাব দিয়েছেন!’’
রাজভবন প্রাঙ্গণে সস্ত্রীক দীপ জ্বালানোর অবসরকেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় আবার বেশ কিছু দিন পরে কাজে লাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য। উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর তোপ, তিনি সাংবিধানিক প্রধান হওয়া সত্ত্বেও করোনা মোকাবিলার বিষয়ে রাজ্যপালকে কিছুই না জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করছেন না!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy