Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জমি ফেরাতে মমতাই পথ, বলছে তৃণমূল

উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ, নদিয়ার করিমপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার পরিকল্পনা সবই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল প্রধানত স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উপর।

নতশির: খড়্গপুরে বিজয় উৎসবের মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নতশির: খড়্গপুরে বিজয় উৎসবের মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

ঔদ্ধত্য ঝেড়ে ফেলে পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে যাওয়া, মানুষের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, ক্ষোভ, অভিযোগ শোনা এবং তার প্রতিকারে জোর দেওয়ার মতো নিবিড় জনসংযোগ তিন উপনির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্যের একটি বড় কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের অন্দরেও প্রাথমিক পর্যালোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এমনকি, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের রণকৌশল নির্ধারণে উপনির্বাচনের এই অভিজ্ঞতা আরও বেশি করে কাজে লাগানো নিয়েও দলে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ, নদিয়ার করিমপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার পরিকল্পনা সবই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল প্রধানত স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উপর। তাঁদের পছন্দ-অপছন্দে গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় লোকজন ও দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ-অভিযোগ মেটানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। সঙ্গে দলের পুরনোদের সঙ্গে ‘নব্য’ এবং ‘যুব’দের দূরত্ব ঘোচানোর উপরেও যথেষ্ট নজর ছিল মমতার। কারণ, লোকসভা ভোটে ধাক্কার অভিজ্ঞতা।

এই ‘সংশোধিত’ পথ ধরেই দলকে এগিয়ে দিয়ে মমতা তিনে তিন জিতেছেন বলে দল নিঃসংশয়। তাই এই জয়কে শুধু ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ‘কেরামতি’ বলে জাহির করার বদলে কৃতিত্ব তৃণমূল নেত্রীকে দেওয়ার পক্ষপাতী তৃণমূলের একটি বড় অংশ। তাদের মতে, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। তা কার্যকর করেছেন পিকে। তাই আগামীতেও এই পথই ধরে রাখতে চায় তৃণমূল।

আরও পড়ুন: আধার নম্বরে লোপাট টাকা, চিন্তা প্রশাসনে

এনআরসি-কাঁটা অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের জন্য বেশ কিছুটা জমি তৈরি করেছিল কালিয়াগঞ্জ, করিমপুরে। খড়্গপুরে অবাঙালি ভোট এবং রেল-কলোনির ভোট টানার পিছনেও তৃণমূলকে ‘এগিয়ে’ দিয়েছে রেলের বেসরকারিকরণ, কর্মীসঙ্কোচন এবং রেলের এলাকায় উন্নয়ন না হওয়া ইত্যাদি।

কিন্তু এর বাইরেও যে ‘রণকৌশল’ তৃণমূলের পক্ষে জনসমর্থন পেতে সহায়ক হয়েছে, তা ঠিক করে দিয়ে তিন কেন্দ্রে দায়িত্বও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা। সেই পথেই পাড়ায় পাড়ায় নিবিড় জনসংযোগ, ঔদ্ধত্যের পথ ছেড়ে মানুষের সঙ্গে ‘নম্র’ ব্যবহার, ভুল স্বীকার করে নেওয়া, দলের পুরনো কর্মীদের মর্যাদা দিয়ে মূলস্রোতে নিয়ে আসা, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা সম্পর্কে খোঁজখবর করে তা সমাধানের চেষ্টার মতো বিষয়কে অস্ত্র করেই কাজে নেমেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্ররা। সবটাই হয়েছে স্থানীয় ভাবে। উপরতলার কোনও ‘প্রত্যক্ষ’ হস্তক্ষেপ বা দাপট দেখা যায়নি। চোখে পড়েনি প্রচারের ঢক্কানিনাদ, বিশাল নিরাপত্তাবাহিনী নিয়ে কতিপয় নেতার আনাগোনাও।

উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু। সঙ্গে মেদিনীপুরের এই ভূমিপুত্রকেই খড়্গপুরেও ভোটের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। শুভেন্দু বলেন, ‘‘খড়্গপুরে ২০টি বাড়িপিছু এক জন করে কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতি পাড়ায় দু’জন কর্মীর কাজ ছিল মানুষের সমস্যা শোনা, পাড়া-বৈঠকের ব্যবস্থা করা, ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখা। প্রয়োজনে বাইরে থাকা ভোটারদের আনার ব্যবস্থা করা।’’ একই ভাবে উত্তর দিনাজপুরের পর্যবেক্ষক হিসেবে কালিয়াগঞ্জেও স্থানীয়দের উপরেই নির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু। প্রচারের ক্ষেত্রেও কোথাও বড় সমাবেশ বা তারকা-বক্তা না এনে জোর দেওয়া হয়েছিল ছোট ছোট সভার উপর। যেখানে মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। শুক্রবারই খড়্গপুরে গিয়ে শুভেন্দু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘‘পুরভোটের আগে উন্নয়নের কাজ শেষ করব।’’

একই ভাবে নদিয়ার পর্যবেক্ষক এবং কালিয়াগঞ্জে ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজীব বুথস্তর থেকে সংগঠন শক্ত করতেই বেশি সময় দিয়েছেন। তাঁর কথা, ‘‘বুথস্তর থেকে কে কী ভাবে কাজ করবে, সব ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। এলাকায় যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, সামনে রাখা হয়েছে তাঁদের। আর ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছি।’’ করিমপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ও বর্তমান সাংসদ মহুয়া মৈত্রও এলাকায় পড়ে থেকে কাজে করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE