Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
State News

বধূ নির্যাতন তদন্তে ‘উপরি’ পুলিশের

বধূ নির্যাতন রোধে ৪৯৮এ কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক অবশ্য পুরনো।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০৫:১৪
Share: Save:

আইন আইনের পথে চলুক। কিন্তু অপব্যবহার যেন না হয়। বিশ্ব নারী দিবসের প্রাক্কালে বধূ বা শিশু নির্যাতন রোধের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন কার্যকর করায় পুলিশের ‘দূর্নীতির’ প্রতিবাদে এ বার থানায় থানায় সচেতনতা-অভিযানের ডাক উঠল। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের শীর্ষ স্তরে চিঠি দিয়ে তাঁরা এ বিষয়ে সজাগ করতে চলেছেন বলেও জানাচ্ছেন পুরুষ অধিকার রক্ষা মঞ্চের নেত্রী নন্দিনী ভট্টাচার্য।

বধূ নির্যাতন রোধে ৪৯৮এ কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক অবশ্য পুরনো। সুপ্রিম কোর্ট কখনও আইনটির অপব্যবহার নিয়ে পদক্ষেপ করেছে, আবার কখনও আইনটির প্রয়োগে ঢিলেমিতেও সতর্ক করেছে। হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি ইতিবাচক পদক্ষেপের সুযোগ নিয়ে কিছু অসৎ পুলিশকর্মী অভিযুক্তকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে।’’ কী ভাবে? যেমন, ৪৯৮এ জামিনঅযোগ্য ধারার মামলা হলেও কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে রক্ষাকবচ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। বছর দুয়েক আগে বলা হয়, ৪৯৮এ ধারার মতো সাত বছর পর্যন্ত সাজার অপরাধের মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১এ ধারা প্রয়োগ করতে পারে পুলিশ। অর্থাৎ, অভিযুক্ত তদন্তে সহযোগিতা করলে তাঁকে গ্রেফতার না-করলেও চলে। জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, ‘‘এই ৪১এ ধারার প্রয়োগই পুলিশের জন্য অসদুপায়ে রোজগারের রাস্তা খুলে দিচ্ছে। কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকটি থানায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারে ছাড়ের বিনিময়ে পুলিশের উপরির দাবি ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা ছুঁয়েছে বলে খবর পাচ্ছি।’’

অভিযুক্ত এই টাকা দিতে অপারগ হলে, তাঁকে কোর্টে মামলা করতে হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, ‘‘৪১এ ধারা প্রয়োগের নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে।’’ নারী অধিকার রক্ষা কর্মী দোলন গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়া পুরুষের সংখ্যা কম নয়। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দশকের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, নারী নির্যাতনের অজস্র অভিযোগের মধ্যে উচ্চ শ্রেণির গুটিকয়েক অভিযোগ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে পুলিশের নারীবিদ্বেষী ভাবনা-কথাবার্তা বা অভিযুক্তদের সঙ্গে খাতিরে অভিযোগকারিণী বিপন্ন বোধ করেছেন, এটাই বেশি দেখেছি।’’ জয়ন্তনারায়ণবাবু অজস্র নির্যাতিতা নারীর হয়ে মামলা লড়লেও কিছু ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্তে অসততা আইনের সঠিক প্রয়োগের জমি আলগা করছে বলেই মনে করেন। লালবাজারের গোয়েন্দাপ্রধানের দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের দুঃসাহস ক’জন দেখাতে পারে, সেখানেও থাকছে সংশয়।

আরও পড়ুন: ‘নিষ্ক্রিয়’ বিধায়ক, রত্নাকে বেহালা পূর্বের দায়িত্ব দিয়ে শোভনকে বার্তা তৃণমূলের

পকসো মামলার অপপ্রয়োগ নিয়েও জয়ন্তনারায়ণবাবু বলছেন, ‘‘কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বুঝেও পুলিশ চার্জশিট দিচ্ছে। নিম্ন আদালতে দ্রুত সাজা হচ্ছে। পরে উচ্চ আদালতে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন। পুলিশ চাইলে এই ভোগান্তি এড়ানো যেত।’’ অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ভুক্তভোগী পুরুষদের সহমর্মী। তবে তিনি বলছেন, ‘‘সব পুলিশের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ সত্যি নয়।’’ মুরলীধরের বক্তব্য, ‘‘পকসোয় কাউকে ফাঁসানো হলে তিনিও আইনি পদক্ষেপ করতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

International Women's Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE