Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

বিবেক ‘ম্যানেজড’, আফতাব ‘দালাল’: যোগসাজশের বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে দিল্লির দ্বারস্থ হচ্ছেন অধীর

এই পরিস্থিতির কথা সরাসরি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকেই তিনি বলবেন এবং বিবেক দুবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে অভিযোগ জমা দেবেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে অধীর চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র

সাংবাদিক সম্মেলনে অধীর চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৯ ১৯:৩৯
Share: Save:

রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষক এবং মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে তীব্র আক্রমণ করলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। কলকাতা প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নাম করে বিবেক দুবের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। বিবেক এ রাজ্যের শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আর রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবকে তিনি সম্বোধন করেছেন ‘দালাল’ বলে। এঁদের বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছেন অধীর।

বাংলায় যে ভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে, তাতে তিনি যে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট, সে কথা অধীর স্পষ্ট করে জানান এ দিন। নিজের কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে যে তিনি দুশ্চিন্তায় নেই, সে কথা অধীর জোর দিয়েই বলেছেন। কিন্তু তিনি নিজের কেন্দ্রে ভোট লুঠ যে ভাবে রুখতে পেরেছেন, অন্যান্য এলাকাতেও তা সম্ভব হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সন্দিহান। বিবেক দুবের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে বহরমপুরের বিদায়ী সাংসদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ভোটগ্রহণের পরবর্তী দফাগুলিতেও একই পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা হবে।

এই পরিস্থিতির কথা সরাসরি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকেই তিনি বলবেন এবং বিবেক দুবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে অভিযোগ জমা দেবেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন অধীর। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি দিল্লি রওনাও হয়ে গিয়েছেন।

রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করে অধীর চৌধুরী এ দিন বলেছেন, ‘‘এক জন প্রার্থী হিসেবে আমি বিবেক দুবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তাঁকে বার বার ফোন করেছি, এসএমএস পাঠিয়েছি। তিনি একবার মাত্র আমার এসএমএস-এর জবাব দিয়েছিলেন। আর কোনও এসএমএস-এর জবাব দেননি, ফোনও ধরেননি।’’ ভোটগ্রহণের দিন নানা অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করলেও বিবেক দুবের সঙ্গে কিছুতেই যোগাযোগ করা যায়নি বলে অধীরের অভিযোগ। ভোটের দিন বিবেক দুবে মুর্শিদাবাদেই ছিলেন এবং জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে ‘খোশগল্প করছিলেন, আড্ডা দিচ্ছিলেন’ বলে অধীর এ দিন মন্তব্য করেছেন।

আরও পডু়ন: দক্ষিণবঙ্গের ১৫ জেলায় তাণ্ডব চালাতে পারে ফণী, সতর্ক করল হাওয়া অফিস

আরও পড়ুন: রাজীব কুমারকে গ্রেফতারের আর্জি, রায়দান স্থগিত রাখল শীর্ষ আদালত

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে তথা গোটা মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেসের জয়ের আশা তছনছ করে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সক্রিয় হয়েছিলেন বলে এ দিন তোপ দেগেছেন অধীর চৌধুরী। কী রকম ভাবে ভোট লুঠের চেষ্টা হতে পারে, কী ভাবে ভোটারদের সন্ত্রস্ত করা হতে পারে, সে সব নিয়ে ভোটের অনেক আগে থেকেই বার বার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অধীর এ দিন জানান। পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাস হয়েছিল বলে অধীর অভিযোগ করেন। যে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের অধীনে ওই ‘সন্ত্রাস’ হল, তাঁদের কেন এ বারের ভোটের আগে সরানো হল না, সে প্রশ্নও কংগ্রেস নেতা তুলেছেন।

অধীরের দাবি, ভোটের আগের রাতে বহরমপুর শহরে ঢোকানো হয়েছিল বহু দুষ্কৃতীকে, সকাল থেকে বিভিন্ন বুথে তাদের দিয়ে গোলমাল পাকিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল যে, বহরমপুর শহরই লুঠ হয়ে গিয়েছে, আর ভোট করতে নেমে কংগ্রেসের লাভ নেই। কিন্তু কংগ্রেস কর্মীরা হাল ছাড়েননি এবং ভোট লুঠের চেষ্টা অধিকাংশ জায়গাতেই তাঁরা রুখে দিয়েছেন বলে অধীর চৌধুরী এ দিন দাবি করেছেন।

কেন বহরমপুর শহরে ৯৭টি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না, সে প্রশ্ন তুলে অধীরের তোপ, ‘‘আমি খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, নির্বাচন কমিশনের একটি অংশ তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।’’ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির পাওয়ার করিডরে বহু টাকার লেনদেন হয়েছে। পাওয়ার করিডরের বিভিন্ন দালালদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ খুব স্পষ্ট।’’

শুধু কি বিবেক দুবের বিরুদ্ধেই অভিযোগ অধীরের? এ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে যে কর্তারা রয়েছেন, তাঁদের ভূমিকা নিয়ে কি অধীর সন্তুষ্ট? এ প্রশ্নের জবাবে বহরমপুরের দীর্ঘ দিনের সাংসদ আরও চড়া গলায় তোপ দাগেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার যে আফতাব (মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব), সে তো একেবারে পাক্কা দালাল তৃণমূলের।’’ এঁদের বিরুদ্ধে তিনি আগেও অভিযোগ জানিয়েছেন, এ বারও সুনীল অরোরার কাছে অবশ্যই তিনি এঁদের ভূমিকার কথা তুলে ধরবেন বলে অধীর চৌধুরী জানান।

যে যোগসাজশের অভিযোগ তিনি করছেন, তাতে কি বিজেপি-ও সামিল? দিল্লির পাওয়ার করিডর বলতে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন? অধীরের জবাব, ‘‘বিবেক দুবেকে এ রাজ্যের শাসক দল ম্যানেজ করেছে। বিজেপি-কে ম্যানেজ করেছে, আমি এমনটা বলছি না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভোট লুঠের অভিযোগ তো আমি একা করছি না। বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ও তো একই অভিযোগ করছেন।’’ নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের একাংশের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশে এ রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব হয়ে উঠেছে বলে অধীর বার বার দাবি করেছেন এ দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE