Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Labour coronavirus

ভিন্‌রাজ্যে আটক বাঙালিদের জন্য সক্রিয় মমতা, চিঠি ১৮ মুখ্যমন্ত্রীকে

রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বাইরে আটকে পড়া বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত অন্য সাংসদরাও।

মুর্শিদাবাদ থেকে যাওয়া এই শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন মুম্বইতে। মমতার তৎপরতায় সে রাজ্যের সরকার দ্রুত এঁদের আশ্রয় এবং খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে। — নিজস্ব চিত্র

মুর্শিদাবাদ থেকে যাওয়া এই শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন মুম্বইতে। মমতার তৎপরতায় সে রাজ্যের সরকার দ্রুত এঁদের আশ্রয় এবং খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ১৮:০২
Share: Save:

লকডাউনের জেরে ভিন্‌রাজ্যে আটকে বহু বাঙালি। কেউ কাজে গিয়ে, কেউ বেড়াতে গিয়ে। লকডাউন ঘোষণার পরে কেউ আচমকা উপার্জনহীন। কারও ক্ষেত্রে পরিকল্পনার বাইরে একুশ দিনের জন্য আটকে পড়া বড়সড় আতান্তর হয়ে উঠেছে। সুরাহায় হাত বাড়াল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ১৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে রাজ্যে আটকে পড়া ৮৭ জন বাঙালি শ্রমিকের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্তও করলেন অত্যন্ত দ্রুত।

রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বাইরে আটকে পড়া বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত অন্য সাংসদরাও। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী পক্ষের নেতা অধীর চৌধুরী থেকে শুরু করে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া— প্রত্যেকেই নিজের নিজের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন যে ১৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন, সেগুলি হল তামিলনাড়ু, ওড়িশা, তেলঙ্গানা, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, কেরল, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, ঝাড়খন্ড, রাজস্থান, বিহার, গোয়া, গুজরাত, ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ। উত্তরাখণ্ড থেকে গত কয়েক দিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন বিভিন্ন পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্রে আটকে পড়া বাঙালিরা। এঁরা গিয়েছিলেন বেড়াতে। কিন্তু লকডাউন ঘোষণার জেরে আর ফিরতে পারেননি। আর মহারাষ্ট্র থেকে বুধবার যোগাযোগ করেছিলেন এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ থেকে সেখানে কাজ করতে যাওয়া ৮৭ জন শ্রমিক। লকডাউনের মাঝে তাঁরা খাদ্যসঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন এবং তাঁরা রাজ্যে ফিরতে চান— সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো ছেড়ে তাঁরা এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

সেই ভিডিয়ো বার্তা মুখ্যমন্ত্রী খেয়াল করেন। দলের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ কয়েক জনকে তিনি দায়িত্ব দেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই শ্রমিকদের সুরাহার বিষয়ে অনুরোধ করতে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা পেয়েই দ্রুত সক্রিয় হয় উদ্ধব ঠাকরের অফিস। সক্রিয় হন খোদ উদ্ধবের ছেলে তথা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরেও। মুর্শিদাবাদের যে শ্রমিকরা ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তা চেয়েছিলেন, মুম্বইয়ের প্রশাসন দ্রুত তাঁদের খুঁজে নেয় বান্দ্রা পূর্ব এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই তাঁদের খাবার এবং আশ্রয়ের বন্দোবস্ত সুনিশ্চিত করা হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে, দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ-সহ মোট ১৮ জন মুখ্যমন্ত্রীকে এই চিঠি লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

একই ভাবে অন্যান্য রাজ্যে আটকে থাকা বাঙালিদের পাশে দাঁড়াতেও তৎপর হয়েছে নবান্ন। ১৮ জন মুখ্যমন্ত্রীকে মমতা যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে তিনি লিখেছেন— ‘‘আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনার প্রশাসনকে বলুন, এই সঙ্কটের সময়ে সেখানে আটকে পড়া (পশ্চিমবঙ্গের) শ্রমিকদের আশ্রয়, খাবার এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তা দিতে। একই ভাবে বাংলায় যাঁরা আটকে পড়েছেন, আমরা তাঁদের যত্ন নিচ্ছি।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ এবং মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই ৮৭ জন বাঙালি শ্রমিকের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত দ্রুত হওয়ার কথা তুলে ধরে রাজ্য সরকারের প্রশংসা করেছেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতার কথায়, ‘‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা অনেকেই করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে প্রচেষ্টায় অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর ভূমিকা নির্ণায়ক এবং সহানুভূতিশীল।’’

লোকসভার প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা অধীর চৌধুরীর দফতরেও কিন্তু গত কয়েক দিন ধরেই বহু ফোন যাচ্ছে। ভিন্‌রাজ্যে আটকে থাকা বাঙালিরা সেখানেও অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁদের রাজ্যে ফেরানোর ব্যবস্থা করার জন্য। সকলকে ফেরানো এই মুহূর্তে সম্ভব না হলেও খাবার, আশ্রয়স্থল এবং ওষুধ যাতে ঠিক মতো মেলে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অধীরও। উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, কেরল, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে গত কয়েক দিনে অধীরের সঙ্গে যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কোনও ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে, কোনও ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

আর এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও ভিন্‌রাজ্যে আটকে পড়া বাঙালিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্রের বেশ কিছু বাসিন্দা উত্তরাখণ্ডের কৌসানীতে আটকে রয়েছেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার অহলুওয়ালিয়া তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্থানীয় প্রশাসন সব রকম ভাবে ওই বাঙালি পর্যটকদের পাশে থাকবে বলে তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE