Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
BJP

ভাবনার রং গেরুয়া করতে ‘বাঁকা’ পথ?

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। হাতিয়ার সামাজিক মাধ্যমও। কৌশলটা কীআগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। হাতিয়ার সামাজিক মাধ্যমও। কৌশলটা কী

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৯
Share: Save:

জনতার চেতনার রঙে পান্না হবে গেরুয়া?

বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, বিজেপির আইটি –সোশ্যাল মিডিয়া বাহিনী ‘বাঁকা পথে’র আশ্রয় নিয়ে সেই চেষ্টাই করে চলেছে।

এমনকি, বিজেপির আইটি-সোশ্যাল মিডিয়া সেলের কয়েক জন প্রাক্তন কর্মীরও দাবি তেমনই। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত প্রচারের জন্য বিজেপি অনেক সময়ে দেশি বা বিদেশি সংস্থাকে ভাড়া করে। তাদের বিষয় বলে দেওয়া হয়। সেই বিষয়ে ভিডিয়ো, অডিয়ো, ইনফোগ্রাফিক এবং লেখা তৈরি করে সেই সংস্থা। ফেসবুক-সহ সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের দায়িত্বও থাকে তাদেরই। তার জন্য তারা অনেক সময় ফেসবুকে ‘হিন্দু সেনা’, ‘হিন্দু রক্ষা দল’ প্রভৃতি নানা নামে গ্রুপ পেজ তৈরি করে। অভিযোগ, সেই পেজগুলির সদস্যদের অনেকের প্রোফাইল নকল। এবং সেগুলো থেকে সত্য, মিথ্যা, আংশিক সত্য মিশিয়ে প্রচার চলে। যা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে।

অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মতো বিজেপি বিরোধী শাসিত রাজ্যে মানুষের ‘দুর্দশার’ ছবি তুলে ধরতে ওই সব পেশাদার সংস্থা কখনও শিল্পীদের দিয়ে অভিনয় করিয়ে ভিডিয়ো শুট করে, কখনও আবার অন্য দেশ বা রাজ্যের কোনও এলাকার গোষ্ঠী সংঘর্ষের ছবি বা ভিডিয়ো দেখিয়ে দাবি করা হয় সেটা পশ্চিমবঙ্গের এলাকা। উদ্দেশ্য— পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিজেপি বিরোধী শাসিত সব রাজ্যেই হিন্দুরা ‘বিপন্ন’ এবং মোদী জমানায় দেশ অগ্রগতির শীর্ষে পৌঁছেছে--- এই ধারণা মানুষের মনে গেঁথে দেওয়া। যাতে ভোটের সময় মানুষ বিজেপি ছাড়া আর কাউকে বেছে নেওয়ার কথা ভাবতেই না পারেন।

যেমন— ‘‘স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আসলে মুসলমান ছিলেন বলে তাঁর কর্মকাণ্ড হিন্দু বিরোধী ছিল’’, ‘‘মাত্র দশ বছর পরেই পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান মুখ্যমন্ত্রী ও ইসলামিক রাজ্য সরকার’’, ‘‘মোদী সরকারের আর এক চমক—— ৬০ বছর পর ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের কাছে ঋণমুক্ত হল ভারত’’ প্রভৃতি লেখা এবং এই ধরনের ছবি বা ভিডিয়ো প্রায়ই আমজনতার স্মার্টফোন প্লাবিত করে দেয়। গেরুয়া শিবিরের আইটি সেলের এক প্রাক্তন কর্মীর অভিযোগ, ‘‘ভোটে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাতে মানুষের মনে ভয়, সন্দেহ এবং ঘৃণার চাষ করা হয়।’’

আরও পড়ুন: তৃণমূলে যোগ দিলেন রেজাউল করিম

ওই প্রাক্তন কর্মী জানাচ্ছেন, রাজ্যের কোন এলাকায় কত পুরুষ, কত মহিলা, কত বৃদ্ধ, কত অল্পবয়সি, কত হিন্দু, কত মুসলমান থাকেন ইত্যাদি নানা তথ্য সমীক্ষক সংস্থার কাছ থেকে জোগাড় করা হয়। ফেসবুক পেজে ওই ভোটারদের কার্যকলাপ থেকে জানা যায় তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে ঠিক করা হয়‌, কার কাছে কোন ধরনের প্রচারসামগ্রী পাঠানো হবে। এই সব কাজের জন্য প্রোডাক্ট ম্যানেজার— রোডম্যাপ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, গ্রাফিক ডিজাইনার-বাঙালি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার চেয়ে চাকরির সাইটে বিজ্ঞাপনও দিয়েছে গুরুগ্রামের একটি সংস্থা। গত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপির হয়ে প্রচার করা একটি পেশাদার সংস্থার আবার দাবি, তারা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের বিষয় খুঁজে ‘আন্দোলন’ও করিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘চায়ে পে চর্চা’য় তৃণমূল, কটাক্ষে মুখর বিরোধীরা

রাজ্য বিজেপির আইটি ও সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেতৃত্বের অবশ্য সাফ কথা, এই সবই বিরোধীদের মিথ্যে অভিযোগ। বিজেপি কখনও প্রচারের স্বার্থে মিথ্যের আশ্রয় নেয় না। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অত্যুৎসাহী হয়ে ফেসবুকে গ্রুপ পেজ তৈরি করে ভুয়ো বা উগ্র প্রচার চালালে তার দায় বিজেপির নয়। অনেক সময় বিজেপির মানহানি করার জন্য বিরোধীরাও ভুয়ো প্রচারসামগ্রী ছড়ায়।

রাজ্য বিজেপির আইটি ও সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেতৃত্বের আরও দাবি, পেশাদার সংস্থা নয়, তাঁদের প্রচারের সব কাজ করেন দলের কর্মীরা এবং তাঁদের পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় না। তবে বিধানসভা ভোটের কৌশল নিয়ে মুখ খুলতে চাননি বিজেপির আইটি ও সোশ্যাল মিডিয়া সেলের রাজ্য নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, ভোটের পর যা বলার, বলবেন।

আর ভোটের আগে? সমাজমাধ্যমে বিজেপির প্রবল প্রচারের মুখে কী কৌশল রাজ্যের শাসক দল বা অন্য বিরোধী দলের?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE