যদি তোমার বয়স ১৮ বছরের নীচে হয় এবং তুমি সমস্যায় থাকো কিংবা বিভ্রান্ত, নির্যাতিত অথবা অবসাদগ্রস্ত হও কিংবা অন্য কোনও শিশুও যদি এমন অবস্থায় থাকে, ১০৯৮ নম্বরে ফোন করো। কারণ কিছু নম্বর ভাল।
পাঠ্য বইয়ে লেখা এই শিশু নির্যাতন ও তার প্রতিকারের বিষয়টি পড়ুয়া দূরে থাক, অনেক অভিভাবকেরই নজরে পড়ে না। আর সেখান থেকেই এক বন্ধুর মাধ্যমে নম্বর জেনে নিয়ে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী বুধবার সটান ফোন করে ১০৯৮ নম্বরে। চাইল্ড লাইন থেকে সেই ফোন তুলতেই মায়ের বন্ধুর বিরুদ্ধে গড়গড় করে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানিয়েছিল সে।
আর সেই অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে চাইল্ড লাইন ও বহরমপুর থানার পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বহরমপুর থানার পুলিশ বুধবার রাতেই সানিয়াত চৌধুরী নামে অভিযুক্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করে। তিন দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পরে শনিবার বহরমপুরের পকসো আদালতের বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
নির্যাতিত ওই নাবালিকার মাকেও শনিবার রাতে বহরমপুর মহিলা থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রবিবার তাকে বহরমপুর সিজেএমের এজলাসে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ওই নাবালিকা এখন সরকারি হোমে আছে।
বহরমপুরের এক অভিভাবক বলছেন, ‘‘বেশ কিছু স্কুলের বইয়ে যে এ রকম ফোন নম্বর রয়েছে তা আমারও জানা ছিল না। আজই দেখলাম শিশু নির্যাতন ও তার প্রতিকারের বিষয়ে ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। ওই নাবালিকা সেখান থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।’’
ওই অভিভাবকের মতে, সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পাঠ্য বইয়ে শিশু নির্যাতন ও তার প্রতিকারের বিষয়ে এমন তথ্য দেওয়া উচিত। যাতে কোনও শিশু নির্যাতনের শিকার হলে দ্রুত অভিযোগ জানাতে পারে। যেমনটি জানিয়েছে এই মেয়েটি।’’ মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক পূরবী বিশ্বাস দে বলেন, ‘‘ওই নাবালিকার সাহস ও পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। আমরাও নিয়মিত বিষয়টি নিয়ে স্কুলের পড়ুয়াদের সচেতন করি।’’
মুর্শিদাবাদের জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক আনন্দময় কোনার বলেন, ‘‘আমরা জেলা জুড়ে চাইল্ড লাইনের ১০৯৮ নম্বরটি ছড়িয়ে দিচ্ছি। তার সুফলও মিলছে। বুধবারেই বহরমপুরের এক শিশুকন্যা চাইল্ড লাইনের নম্বরে ফোন করে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানায়। অভিযোগ পাওয়ার পরে অভিযুক্তকে যেমন গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুটিকেও উদ্ধার করে সরকারি হোমে রাখা হয়েছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় এক বছর ধরে ওই নাবালিকার উপরে নির্যাতন চালাচ্ছিল ধৃত ওই মহিলার বন্ধু সানিয়াত। অভিযোগ, নাবালিকা তার মাকে বিষয়টি জানালেও উল্টে তিনি সানিয়াতের পক্ষ নিয়ে মেয়েকেই বকাবকি করেন। মায়ের উপরে ভরসা হারিয়ে নিরুপায় হয়ে সে চাইল্ড লাইনের নম্বরে ফোন করে। জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই নাবালিকার মাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত সানিয়াত বহরমপুর শহরে নিজেকে তৃণমূলের নেতা হিসেবে পরিচয় দিত। যদিও শহর তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, নেতা তো দূরের কথা, সানিয়াত দলের সদস্যও নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy