Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মানুষকে আশ্বস্ত করা যাচ্ছে না, গুজব রুখতে এ বার ক্লাবের মদত চাইল পুলিশ

বুধবার নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুজব-প্ররোচনায় কান না-দিতে আবেদন জানান।

লালবাজারের খবর, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ডিভিশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

লালবাজারের খবর, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ডিভিশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ায় রটনা, এলাকায় এলাকায় হানা দিচ্ছে ছেলেধরার দল। তারাই নাকি বিভিন্ন আছিলায় বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের কিডনিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে! সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ধরনের গুজবের মোকাবিলায় এ বার স্থানীয় ক্লাবগুলির সাহায্য চাইল পুলিশ। একই সঙ্গে গুজব ঠেকাতে রাজ্য পুলিশের তরফে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।

লালবাজারের খবর, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ডিভিশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করার পাশাপাশি অপরিচিত কেউ আক্রান্ত হলে তা যেন প্রতিহত করা হয়। আক্রান্তকে উদ্ধার করেই যেন খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।

কিন্তু ক্লাবগুলিকে নিয়ে গুজব মোকাবিলায় কেন নামল পুলিশ?

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, গুজব রুখতে পুলিশ প্রচারপত্র বিলি করেছে। অটোয় মাইক নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে। কিন্তু তাতেও সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করা যাচ্ছে না। আনন্দপুর, ট্যাংরায় পরপর গণপিটুনির ঘটনায় পরিষ্কার, ভয় যেন আমজনতার মনের মধ্যে চেপে বসেছে। সেই ভয় কাটাতেই স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে বৈঠক করে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানান, যাদবপুর, বেহালা ডিভিশনের মতো এসইডি ডিভিশনের থানাগুলি ক্লাবের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রশাসনের তরফে ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার ফলে পুলিশের সঙ্গে এমনিতেই তাদের সম্পর্ক ভাল।

আরও পড়ুন: ‘দেশভক্ত’দের বেধড়ক মারে রক্তাক্ত, তবু বাংলা ছাড়বেন না কাশ্মীরের শাল বিক্রেতা জাভেদ

লালবাজার জানিয়েছে, ওই দৌরাত্ম্য ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে নতুন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সব থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সাইবার থানাও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব আটকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

অভিযোগ, ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়েছে। কলকাতার লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় কয়েক মাস ধরেই গুজবের জেরে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এত দিন লালবাজারের কোন হেলদোল দেখা যায়নি। পরে কয়েকটি থানা নিজেদের উদ্যোগে ব্যবস্থা নিতে শুরু করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। তাই গত এক সপ্তাহে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ভোটের জন্য শহরের সব থানাতেই বহু অফিসার বদলি হয়েছেন। ফলে নতুন অফিসার থানা এলাকা চেনার সুযোগ পাননি। তার আগেই নানা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

গুজব রুখতে কয়েক বছর আগে থেকেই বিভিন্ন জেলায় প্রচার চালাচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। গত বছরের মাঝামাঝি নির্দেশিকা জারি করে অতিরিক্ত পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং কমিশনারেটের কমিশনারদের নোডাল অফিসার করে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছিল। গুজব, ভুল খবরের প্রচার বন্ধ করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রশাসনের অনেকে মনে করছেন, সেই পদ্ধতি ততটা সফল হয়নি। তাই নতুন করে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ, এলাকা-ভিত্তিক সচেতনতা প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই প্রবণতা ঠেকাতে প্রশাসনিক ভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

বুধবার নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুজব-প্ররোচনায় কান না-দিতে আবেদন জানান। ‘‘গুজব এড়িয়ে চলুন। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল, তাদের নাম বলতেও লজ্জা হয়। এই ঘটনাগুলোর নিন্দা করছি। আমরা একতা চাই। আমরা লড়াই করছি দেশের একতার জন্য, তাকে ভাগ করার জন্য নয়। কলকাতায় একটা ঘটনা ঘটেছিল, আমরা কড়া পদক্ষেপ করেছি, নিরাপত্তা দিয়েছি। কাশ্মীরিরা এখানে থাকতে ভালবাসেন। কারণ এটা নিরাপদ জায়গা,’’ বলেন মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rumour-Mongering Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE