E-Paper

অধ্যক্ষ নিয়োগে দেরি, প্রশ্ন চিকিৎসক মহলে

রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিভিন্ন বেনিয়ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব বিরোধী চিকিৎসক সংগঠনগুলি। শাসক শিবিরের চিকিৎসকদের একাংশও ক্ষুব্ধ। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরাও উষ্মা প্রকাশ করছেন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৬

—প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই। সিনিয়র চিকিৎসকেরাই অস্থায়ী অধ্যক্ষের (অ্যাক্টিং প্রিন্সিপাল) দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। অথচ, চার মাস আগে অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতির জন্য ইন্টারভিউয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও তা কবে হবে, অন্ধকারে চিকিৎসক মহল। মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে বিভাগীয় পদোন্নতির বিজ্ঞপ্তি ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিভিন্ন বেনিয়ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব বিরোধী চিকিৎসক সংগঠনগুলি। শাসক শিবিরের চিকিৎসকদের একাংশও ক্ষুব্ধ। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরাও উষ্মা প্রকাশ করছেন। এক দিকে আটকে রয়েছে প্রিন্সিপাল পদের ইন্টারভিউ, অন্য দিকে প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতিতে আবেদনে যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণের নির্দিষ্ট সময়সীমা (কাট-অফ ডেট) আচমকাই বদল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের প্রশ্ন, “কাদের সুবিধা করে দিতে এমন বেনিয়ম চলছে? রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি আদৌ প্রভাবশালী-মুক্ত হবে?”

প্রিন্সিপাল পদের ইন্টারভিউ আটকে রাখা এবং বিভাগীয় পদোন্নতিতে বেনিয়মের মাধ্যমে পরোক্ষ ভাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ কাউকে সুবিধা করে দেওয়াই আসল লক্ষ্য বলে অভিযোগ। দু’টি বিষয়েই মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ইন্দ্রজিৎ সাহা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সূত্রের খবর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে অস্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সেখানকার উপাধ্যক্ষ তথা সুপার। আবার, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, বর্ধমান মেডিক্যাল, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ-সহ আরও কয়েকটিতে অস্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কোনও সিনিয়র চিকিৎসক। আবার, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তা অবসরের পরেও এক্সটেনশনে রয়েছেন। গত ২২ অগস্ট অধ্যক্ষ ও অধিকর্তা পদে পদোন্নতির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য দফতর। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন জমা করতে বলা হয়। প্রায় ৪০ জন প্রফেসর আবেদন জমা করছেন বলেই সূত্রের খবর। তাঁদের কয়েক জন চলতি মাসে বা আরও দু’-এক মাসে অবসর নেবেন। তেমনই এক জন আবেদনকারী প্রফেসরের কথায়, “চাকরি জীবনের শেষ কয়েকটা মাস অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলানোর আশায় আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষায় অবসরের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলাম।” কাকে ক্ষমতায় রেখে দিতে, আর কাকে ওই পদে দায়িত্ব পাওয়া থেকে আটকাতে ইন্টারভিউ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্নই ঘুরছে স্বাস্থ্য শিবিরে।

অন্য দিকে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে পদোন্নতির বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি বিভাগে প্রফেসরের ফাঁকা পদের সংখ্যা শূন্য। চিকিৎসক মহলের দাবি, প্রফেসর থেকে প্রিন্সিপাল পদে পদোন্নতি হলে, কয়েকটি বিভাগের প্রফেসর পদে অন্তত এক-দু’জন পদোন্নতির সুযোগ পেতেন।

আবার, ওই তিনটি পদে আবেদনের যোগ্যতার মানদণ্ড গত ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন থাকতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, আগে বছরে দু’বার বিভাগীয় পদোন্নতি হত। তাতে সাধারণত ৩০ জুন ও ৩১ ডিসেম্বর ‘কাট-অফ ডেট’ থাকত। কিন্তু এখন তা-ও অনিয়মিত। এ বারে যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণের সময়সীমা ডিসেম্বরের বদলে অক্টোবর করে দেওয়ায়, প্রায় দু’শো জন চিকিৎসক পদোন্নতির আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন বলেই চিকিৎসক মহল সূত্রের খবর। সময়সীমা পরিবর্তনের প্রতিবাদে সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর তরফে স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের তরফে চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, “প্রায় আড়াই বছর বাদে বিভাগীয় পদোন্নতির ইন্টারভিউয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। তাতেও বেনিয়ম! স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ক্ষমতাবান কারও ঘনিষ্ঠকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতেই কি সময়সীমা বদল করা হল?”

চিকিৎসক মহলের অভিযোগ, ৩১ ডিসেম্বর ‘কাট-অফ ডেট’ রাখা হলে, প্রতিযোগী বেড়ে যেত। সেই পরিস্থিতি আটকাতেই এমন পরিবর্তন। তাঁদের প্রশ্ন, “বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি আর কত দিন চলবে?”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Medical Colleges principals West Bengal health department

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy