Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

অ্যাম্বুল্যান্স বা ওষুধ, পাশে থাকার ‘প্রয়াস’

লকডাউনের মধ্যে মথুরাপুরের জটা নগেন্দ্রপুর থেকে এসএসকেএম যেতে রাজি হচ্ছেন না কেউই। প্রয়োজন অ্যাম্বুল্যান্সের। ব্যবস্থা করলেন সমরেশ সামন্ত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

সবেমাত্র খেতে বসেছিলেন। তার মাঝেই ফোনে খবর এল পথ দুর্ঘটনা হয়েছে এক পোস্টমাস্টারের। খাবার ফেলেই মোটরবাইকে কিক। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত পোস্টমাস্টারকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলেন সঞ্জীব জানা।

পেটের সমস্যায় সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে বছর নয়েকের কোয়েল মিদ্দের। কাটা হয়নি সেলাই। লকডাউনের মধ্যে মথুরাপুরের জটা নগেন্দ্রপুর থেকে এসএসকেএম যেতে রাজি হচ্ছেন না কেউই। প্রয়োজন অ্যাম্বুল্যান্সের। ব্যবস্থা করলেন সমরেশ সামন্ত। বকুলতলার বাসিন্দা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু সৌম্যদীপের রক্তের প্রয়োজন। বিভিন্ন জায়গাতে তথ্য পৌঁছে তা জোগাড়েও সহায়কের ভূমিকা নিয়েছেন সমরেশ।

হৃদ্‌রোগের রোগী কুলতলির বুদ্ধিশ্বর হালদারের অস্ত্রোপচার হয়েছে। ওষুধ ফুরিয়েছে। জানতে পেরে একদিনের মধ্যেই তা বুদ্ধিশ্বরের হাতে পৌঁছে দিলেন মিলন পুরকায়েত।

আরও পড়ুন: শান্তি মিছিল ঘিরে প্রশ্ন টিকিয়াপাড়ায়

সঞ্জীব, সমরেশ, মিলনেরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার অসামরিক বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবক। দৈনিক ভাতাই তাঁদের ভরসা। বছরের বেশির ভাগ সময়েই কাজ থাকে না। তাঁরাই আজ কোভিড-১৯ আর লকডাউনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ‘মুশকিল আসান’। কোভিড-১৯ পর্বে প্রায় ৩৫০ স্বেচ্ছাসেবকদের টিমের পোশাকি নাম ‘প্রয়াস’।

আরও পড়ুন: মানুষকে ঘরে রাখতে রাস্তায় সংখ্যালঘু মহিলারা

কাজের তালিকা লম্বা। কারও ওষুধের প্রয়োজন পড়লে পৌঁছে দেওয়া, কারও অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা রক্তের দরকার পড়লে ব্যবস্থা করা, অভুক্তের খাবার জোগাড় করা। প্রবীণ বা প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন সঞ্জীবরা। এমনকি, রাস্তায় দেখা হলেও প্রবীণদের ফোন নম্বর দিয়ে আশ্বস্ত করছেন। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি গৃহ পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া কতটা মেনে চলা হচ্ছে, তা-ও খেয়াল রাখছে ‘প্রয়াস’।

লকডাউনের শুরুতে তৈরি হয়েছিল ‘প্রয়াস’। এখনও পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের হাতে ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। ছ’হাজারের বেশি পরিবারের কাছে খাবার নিয়ে হাজির হয়েছেন। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জরুরি ত্রাণ তহবিলে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। সমরেশ বললেন, ‘‘কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত।’’

এই অনিশ্চিত সময়ে এ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া কেন? সঞ্জীব বলছেন, ‘‘মানুষের উপকার করতে পারলে তার থেকে আনন্দের কিছু হয় না।’’ সাহায্যের প্রসঙ্গে অন্য অফিসার ও জনপ্রতিনিধিদের সদর্থক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মিলন বলেন, ‘‘ওষুধ পেয়ে বয়স্ক মানুষটা ফোকলা গালে হাসলেন। এর থেকে বড় শান্তি নেই!’’ এই দলটি প্রতিনিয়ত দেখাশোনা করছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন একাধিক আধিকারিক।। ‘প্রয়াস’-এর সদস্যদের নম্বর তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছনোর কৃতিত্বের দাবিদার তাঁরা। যে নম্বরে ফোন করলে শোনা যাবে, ‘এক দিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে...।’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown NGO Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE