Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টাকা কি আকাশ থেকে আসে, গৌতমকে ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রীর

প্রশাসক: কালিম্পংয়ের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

প্রশাসক: কালিম্পংয়ের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

দেবাশিস চৌধুরী
কালিম্পং শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০৪:৪৯
Share: Save:

মঙ্গলবার বলেছিলেন, অডিট করতে হবে পাহাড়ের উন্নয়ন বোর্ডগুলি ও জিটিএ-কে। বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে সেই সূত্র ধরেই যেন বোর্ডগুলিকে সাবধান করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনাদের নামে কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ আসছে।’’

পাহাড়ে উন্নয়নের কাজে স্বচ্ছতা আনতে এ দিন প্রশাসনিক বৈঠক জুড়েই মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ার করেছেন নানা জনকে। কাজ নির্দিষ্ট করে নিয়ে তাতে মন দিতে বলেছেন। বাদ যাননি রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবও। টাকার কথা বলায় দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারপার্সনকেও শুনতে হয়েছে, ‘‘টাকা কি আকাশ থেকে আসে!’’ সেই সূত্রে কাজ শেষ করার জন্য পাহাড়ের সব ক’টি পরিচালন কর্তৃপক্ষকে দু’বছর সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বস্তুত, গত বছর ১০৪ দিনের টানা বন্‌ধের পরে ধীরে ধীরে যখন পাহাড় শান্ত হচ্ছে, তখন থেকেই বারবার সেখানকার উন্নয়নের উপরে জোর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে কখনও তিনি দার্জিলিং পাহাড় ও কালিম্পং জেলার কাজকর্ম নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেননি। এ বারে তাই পাহাড়ের মানুষের কৌতূহল ছিল, কী বার্তা দেন তিনি? বিভিন্ন বোর্ডের বিরুদ্ধে যে কাজের ক্ষেত্রে ক্ষোভ জমছে, সেটাও পাহাড়ে কান পাতলে শোনা যায়।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী শুরু করেন বাড়ি তৈরির প্রকল্পের টাকা বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে। বলেন, ‘‘বাড়ি তৈরির টাকা ঠিক মতো লোকের হাতে যাচ্ছে না। এই নিয়ে বোর্ডগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে।’’ তার পরেই জানান, এ বার থেকে সরাসরি টাকা দিয়ে দেওয়া হবে প্রাপকদের। কিছু ক্ষণের মধ্যে
অবশ্য মত বদলে তিনি জানান, প্রথমে অর্ধেক টাকা পাবেন প্রাপকরা। কাজ কত দূর এগোল দেখে বাকি টাকার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এ দিন সব বোর্ডের তরফে এক মাত্র লেপচা বোর্ডের প্রধান থামসাং লেপচা
ছাড়া আর কাউকে বলার সুযোগও দেওয়া হয়নি। থামসাং যখন বলছিলেন, সারা ক্ষণই থমথমে মুখে বসেছিলেন মমতা।

এর পরেই পালা গৌতমবাবুর। টাইগার হিলের কটেজ এবং গজলডোবা প্রকল্পে কেন দেরি হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে পর্যটনমন্ত্রীকে তিনি রীতিমতো ভর্ৎসনা করেন। বলেন, ‘‘যে ঠিকাদার সময়ে কাজ করবে না, তাদের টাকাই দেবেন না।’’

সওয়া এক ঘণ্টার বৈঠক জুড়েই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী সময়ে কাজ শেষ করতে বলেছেন সকলকে। পাহাড়ের চারটি সমস্যার তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন: পানীয় জল, নিকাশি, রাস্তা ও বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ। বোর্ডগুলি এবং জিটিএ-কে এই কাজগুলিতে মন দিতে বলেছেন। একই সঙ্গে বিনয় তামাং, অনীত থাপাকে বার্তা, এর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে জিটিএ-রাজ্য সমন্বয়ের অভাবে কাজ আটকে যেত, সেটা যেন আর না হয়।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন সময় বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী? কেনই বা কড়া বার্তা দিলেন পাহাড়ের প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে? অনেকে মনে করেন, আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই সময় বেঁধে দিলেন তিনি। তার আগে অনিয়ম দূর করে উন্নয়নমূলক কাজ ঠিক ভাবে পরিচালনা করা এবং সামাজিক প্রকল্পের টাকা যোগ্য লোকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা যাতে যথাযথ হয়, সেটাই পাখির চোখ করতে বললেন তিনি।

পাহাড়ের লোকজন বলছেন, ‘‘বিমল গুরুংয়ের ছায়া এখনও পাহাড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সঠিক বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Goutam Deb Dvelopment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE