Advertisement
১০ মে ২০২৪
Crime

মনুয়া-কাণ্ডের ছায়া ডায়মন্ড হারবারে, প্রেমিককে দিয়ে স্টেশন মাস্টারকে খুন করালেন স্ত্রী!

১১ নভেম্বর সকালে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রায়নগরের বাসিন্দারা নর্দমার মধ্যে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

সাংবাদিক বৈঠক করছেন ডায়মন্ড হারবারের এসপি ভোলানাথ পান্ডে, পিছনে ধৃতরা।—নিজস্ব চিত্র।

সাংবাদিক বৈঠক করছেন ডায়মন্ড হারবারের এসপি ভোলানাথ পান্ডে, পিছনে ধৃতরা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:০৪
Share: Save:

মনুয়া-কাণ্ডের ছায়া এ বার ডায়মন্ড হারবারেও।

পরিকল্পনা ছিল প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুন করিয়ে দুর্ঘটনার চেহারা দেওয়া। তার পর স্বামীর সরকারি চাকরি হাতিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করে নতুন করে সংসার পাতবেন। সেই ছকেই স্বামী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন তাঁকে নাইলনের দড়ির ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। খুনের পর দেহটি ভাড়া বাড়ি থেকে একটু দূরে নর্দমার মধ্যে এমন ভাবে ফেলে দেওয়া হয় দেহ যাতে আপাত ভাবে মনে হয় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন, তার পর নর্দমায় প়ড়়ে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শেয পর্যন্ত গলায় কালো সুতোর মতো দাগ দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বেরিয়ে আসে শ্বাসরোধের কথা। তদন্তে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে স্ত্রী এবং তার প্রেমিকের ষড়যন্ত্র।

১১ নভেম্বর সকালে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রায়নগরের বাসিন্দারা নর্দমার মধ্যে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। নর্দমার মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল দেহটি। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ দেহ তুলতেই স্থানীয়রা দেহটি ডায়মন্ড হারবার রেল স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার নির্মল কুমারের দেহ হিসাবে শনাক্ত করেন। আদতে বিহারে ভাগলপুরের বাসিন্দা নির্মল কুমার রায়নগরে স্ত্রী সোনালিকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। প্রথমে স্থানীয়রা দুর্ঘটনা বলেই মনে করেছিলেন। স্ত্রী সোনালিও কোনও অভিযোগ করেননি। কিন্তু গলার কাছে সরু দাগ দেখেই সন্দেহ হয় ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশের। তারা ময়নাতদন্তে দেহ পাঠায় এবং জানা যায় তার বা দড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে নির্মলের।

আরও পড়ুন: বাবরির পরিবর্তে কিছু নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না, জানিয়ে দিল জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ

শুক্রবার, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডে বলেন, ‘‘এটা যে খুন তা জানার পরই আমাদের সন্দেহ হয় নির্মলের স্ত্রীকে। তাকে জেরা করা শুরু হয়। সোনালি প্রথমে সমস্ত কিছু অস্বীকার করে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনালির মোবাইলের কল রেকর্ডস খতিয়ে দেখতে গিয়ে একটি নম্বর পাওয়া যায়। যে নম্বরে নির্মলের মৃত্যুর দিন, তার আগে এবং পরে যোগাযোগ করা হয়েছে। জানা যায় ওই নম্বরটি আরশাদ জলিল নামে এক যুবকের। বাড়ি বিহারের মুঙ্গেরে। ভোলানাথ বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয় ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে ওই ব্যাক্তির সঙ্গে একাধিক বার দেখাও গিয়েছে সোনালিকে।” এর পরই পুলিশ আরশাদ কে তা জানতে চেপে ধরে সোনালিকে। প্রথমে অস্বীকার করলেও, জেরার মুখে সোনালি স্বীকার করে যে, আরশাদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু সেই সম্পর্ক মেনে নেননি সোনালির বাবা-মা। বিয়ে দেওয়া হয় নির্মল কুমারের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের পরেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল আরশাদের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: মিলন রাতে ‘সতীত্ব’ প্রমাণে কৃত্রিম রক্তের পিল অনলাইনে! নিন্দার ঝড় সমাজ জুড়ে​

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জেরা করে জানা যায়, জোর করে বিয়ে দেওয়ায় আরশাদ এবং সোনালির আক্রোশ তৈরি হয়েছিল নির্মলের উপর। সেই আক্রোশ থেকেই খুনের ছক।” সেই ছক কষেই বিহার থেকে ডেকে আনা হয় আরশাদকে। ১০ নভেম্বর রাতে নির্মল যখন গভীর ঘুমে, তখন আরশাদ এসে সরু নাইলনের দড়ি দিয়ে নির্মলের শ্বাসরোধ করে খুন করে। এর পর দেহটি ভাড়া বাড়ির কাছে একটি নর্দমায় ফেলে দেয় এমন ভাবে যাতে মনে হয় যে দুর্ঘটনা। ভোলানাথ এ দিন জানিয়েছেন যে, আরশাদের নাম জানার পরই তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। তার বিহারের ডেরা থেকে পাকড়াও করা হয়। দু’জনেই জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE