টোল প্লাজা কাণ্ডে দলের মনোভাব বুঝে সংখ্যালঘু বিত্ত উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরেই যেতে হল তৃণমূল নেতা আবু আয়েশ মণ্ডলকে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঙ্গলবার কথা হওয়ার পরেই নিগমের চেয়ারম্যান হিসাবে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন আবু। সুন্দরবন সফর সেরে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী তথা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবু আয়েশের ইস্তফা মঞ্জুর করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেই সরকারি সূত্রের খবর।
টোল চাওয়ার ‘অপরাধে’ ডানকুনির টোল প্লাজার কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে রীতিমতো ‘জুতোপেটা’ করার ঘটনায় অভিযুক্ত আবু আয়েশের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে লিখিত ব্যাখ্যাও চেয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আবু আয়েশ একটিই চিঠি লিখে সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এমন গুরুতর অভিযোগে আবু আয়েশের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে কবে? পার্থবাবু বুধবার বলেন, “প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করবে। এই নিয়ে দলীয় স্তরে আমাদের কিছু বলার নেই।” হুগলি জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা এ দিনও দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে। আমাদের উপর কোনও স্তরের কোনও চাপ নেই। কিন্তু, তদন্তের কিছু পর্যায় আছে। সেগুলি পেরোনোর পরেই পুলিশকে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয়।”
ডানকুনির ওই টোল প্লাজার কর্মীদের সংগঠনও তৃণমূল অনুমোদিত। আক্রান্ত কর্মীরা যেমন পুলিশে অভিযোগ করেছেন, তেমনই তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও নালিশ জানিয়েছেন। পার্থবাবু আগেই জানিয়েছিলেন, ঘটমনার দলীয় স্তরেও তদন্ত হবে। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার ডানকুনি টোলপ্লাজায় গিয়ে আক্রান্ত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তাঁকে রবিবারের ঘটনা বিশদে জানান কর্মীরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপনবাবু। তৃণমূলের একটি সূত্রের অবশ্য ইঙ্গিত, দল অনুমোদিত টোল প্লাজার ওই সংগঠন মারফত কর্মচারীদের ক্ষোভ প্রশমন করার চেষ্টা হতে পারে। শাসকদলের নেতৃত্বের যুক্তি, অভিযোগ উঠেছে বলেই আবু আয়েশকে পদ ছাড়তে হয়েছে। এর পরে পুলিশি পদক্ষেপ করে আর বিড়ম্বনা বাড়ানোর দরকার নেই, এই বার্তাই কর্মচারী সংগঠনকে দিতে চান তাঁরা।
কিন্তু, আবু আয়েশের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ডানকুনি থানায় আরও একটি অভিযোগ হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটি এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব চৌধুরী বুধবার ওই অভিযোগ করেছেন। এর আগে তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধেও পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেই মামলা এখন হাইকোর্টে চলছে। বিপ্লববাবুর কথায়, “টোল প্লাজার কর্মীদের মারধর করে ওই বর্ষীয়ান নেতা অন্যায় করেছেন। প্রহৃতদের মধ্যে সেনাকর্মীও রয়েছেন। শাসনক্ষমতার বৃত্তের মধ্যে থেকে ক্ষমতার এই আস্ফালনের বিরুদ্ধেই আমার প্রতিবাদ।” পুলিশ-প্রশাসন বিহিত না করলেও তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন। বাম জমানাতেও একই ভাবে শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন বিপ্লববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy