Advertisement
E-Paper

‘বলিউডে প্রথম সারির পাঁচ নায়কের মধ্যে আমার নাম আসত’

হ্যাঁ, আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। তখন গড়পার রোডে মামাবাড়িতে থাকতাম। মামাতো বোন আমাকে মেকআপ তুলতে দেখে ফেলে। ওকে বলি, একটা ছবিতে কাজ করেছি, কাউকে বলিস না। বললে বাড়ি ছাড়তে হবে। এত কনজ়ারভেটিভ!

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

প্র: কেমন আছেন?

উ: আমি সব সময়ে ফিট। আমার ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন মনোতোষ রায়। ওঁর কাছে যোগব্যায়াম শিখেছি কলেজ জীবন থেকে। কী ভাবে ফিট থাকতে হয়, তা মনোতোষদা ভাল করে শিখিয়েছিলেন।

প্র: বলিউডে অভিনয়ের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান কলকাতায় কেন?

উ: কারণ কলকাতা আমার শিকড়। আর শিকড়ের সঙ্গে কোনও দিনই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। শুধু বাংলার হিরো হয়ে থাকতে চাইনি, তাই বম্বে গিয়েছিলাম। কিন্তু তখনও বছরে দুটো-তিনটে করে বাংলা ছবি করেছি। এ বছর আমার কেরিয়ারের ষাট বছর। ১৯৫৮-য় আমার প্রথম ছবি মুক্তি পায়। ‘ডাকহরকরা’। জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু।

প্র: শুনেছি, বাড়িতে আপত্তি ছিল আপনার অভিনেতা হওয়া নিয়ে?

উ: হ্যাঁ, আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। তখন গড়পার রোডে মামাবাড়িতে থাকতাম। মামাতো বোন আমাকে মেকআপ তুলতে দেখে ফেলে। ওকে বলি, একটা ছবিতে কাজ করেছি, কাউকে বলিস না। বললে বাড়ি ছাড়তে হবে। এত কনজ়ারভেটিভ! কিন্তু ও সবাইকে বলে দিল আর আমাকেও মামাবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হল। ওরা আমার বাবাকেও ভুল বুঝিয়েছিল। বাবা আমার পেশা মেনে নেননি। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কাটিয়েছি বহু দিন। রংমহলে তিরিশ টাকা মাইনে পেতাম। এক বন্ধুর ছোট্ট এক মেসে গিয়ে থাকতাম, সেখানে এমন ছারপোকা কামড়াত যে মেঝেয় শুতে হতো। বাবা ছিলেন আর্মির ডাক্তার। বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় ঘুরতাম লাহৌর, করাচি, লখনউ, মিরাট... তাই অবাঙালি কালচারে আমার বড় হওয়া। যখন ফিল্মে এলাম, আমার হিন্দি এত ভাল ছিল যে, কেউ বিশ্বাস করতে চাইত না আমি বাঙালি। মা মারা যাওয়ার সময়ে আমি মাত্র তেরো। একমাত্র সন্তান আমি। তাকেও রাস্তার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল! পৃথিবীটা এমনই। আমাকে হিরো বানিয়েছিলেন বিমল ঘোষ, বরাহনগরের এম পি স্টুডিয়োর কর্ণধার।

প্র: বাংলা ছবিতে সফল হয়েও মুম্বইয়ে কেন গেলেন? উত্তমকুমারকে ছাপিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে?

উ: উত্তমকুমারের সামনে আমি আর এক জন রোম্যান্টিক হিরো হিসেবে যে জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম, সেটাই আমার কাছে অনেক। তার জন্য উত্তমদা আমাকে খুব ভালও বাসতেন। রংমহলে যখন ‘সাহেব বিবি গোলাম’ নাটক করছি, উত্তমদার বাড়িতে প্রায়ই যেতাম। আমাকে নানা ভাবে গাইড করতেন চরিত্রটা নিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘মায়ামৃগ’ ছবিতে উনি আমার পাশে ক্যারেক্টার রোল করেছেন! ছবিটা করার সময়ে বিকাশদা (রায়) বলেছিলেন, ‘দেখেছ তো তোমার চারপাশে কারা আছে? সন্ধ্যারানি, ছবি বিশ্বাস, আমি, উত্তমকুমার... তুমি কিন্তু অভিমন্যু, বধ হয়ে যাবে। সামলে নিয়ো।’ ভাবতে শুরু করেছিলাম, কী করে এঁদের সামনে দাঁড়াব। আসলে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে বরাবর ভালবাসি। আজও। এখনও অভিনয় করে চলেছি সিনেমা, থিয়েটারে।

প্র: মুম্বইয়ে যাওয়া হল কী ভাবে?

উ: ‘মায়ামৃগ’ থেকে আমার উন্নতি হতে শুরু করল। তখন মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন আকাশবাণীতে, নাটক করতে। তার পরে ওখানে নাটক করতাম। তৃপ্তি মিত্র আমার হিরোইন ছিলেন। রেডিয়োর নাটকে শুধু গলা দিয়ে অভিনয় করতে হয়। বীরেনদা আমাকে সেটা শিখিয়েছিলেন। উনিই ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ডিরেক্ট করতেন। নাটকটা জনপ্রিয় হল। ওই সময়ে এক দিন গুরু দত্ত, গীতা দত্ত ও আব্রার আলভি দেখতে এলেন নাটকটা। সেটা দেখে গুরু দত্ত আমাকে বললেন, ‘হিন্দিতে ‘সাহেব বিবি...’ বানাচ্ছি, আপনাকে অভিনয় করতে হবে।’ ওঁর কথায় বম্বে গেলাম। ওয়াহিদা রহমান, মীনাকুমারী... টিমের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। ছবিটা আমি করতে পারিনি। উনি আমাকে পাঁচ বছরের একটা এক্সক্লুসিভ কনট্র্যাক্ট সই করতে বলেছিলেন। সেটা করিনি।

প্র: ফাইনালি কবে মুম্বই গেলেন?

উ: তার পরে আবার কলকাতায় ফিরে এলাম। নাটক, সিনেমা করতে লাগলাম। এক দিন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এলেন ব্যাকস্টেজে আমার সঙ্গে দেখা করতে। বললেন, ‘ওহে বিশ্বজিৎ তোমায় এ বার স্টেজ ছাড়তে হবে। আমি একটা ছবি করছি, ‘বিশ সাল বাদ’। সেখানে তুমি হিরো।’ কিন্তু কী করে যাব, রংমহল থিয়েটারের সঙ্গে তো আমার চুক্তি আছে। তখন লোকে ‘সাহেব বিবি...’ নাটকে বিশ্বজিৎকে দেখতে আসত। এ রকম ক্রেজ় ছিল। কিন্তু সে সময়ে বোধহয় মানুষরা অন্য রকম ছিলেন। রংমহল আমাকে আটকে রাখেনি।

প্র: মুম্বইয়ের কঠিন মাটিতে কী ভাবে সফল হলেন, যা উত্তমকুমারও পারেননি?

উ: আমার মনে হয় এখান থেকে যাঁরা মুম্বই গিয়েছে, মিঠুন ব্যতীত কেউ তৈরি হয়ে যাননি। যে কোনও কাজেই মানুষের প্রস্তুতি লাগে। আমি প্রথম থেকে হর্স রাইডিং, ফেন্সিং, বক্সিং... নানা স্পোর্টস শিখেছি। উর্দু শিখেছি। বব দাসের কাছে নাচ শিখতাম। অল ইন্ডিয়া লেভেলের হিরোদের যা যা প্রয়োজন, সে ভাবে নিজেকে গ্রুম করেছিলাম। আর আমি সারনেম ব্যবহার করতাম না। শুধু বিশ্বজিৎ। তাই নাম দেখে বাঙালি বোঝা সম্ভব ছিল না।

প্র: মুম্বইয়ে কি কাঙ্ক্ষিত জায়গা পেয়েছিলেন?

উ: হ্যাঁ। আমার সময়ে রাজ কপূর, দিলীপকুমার, দেব আনন্দের রমরমা। তাঁদের মাঝখানে মাছ-ভাত খাওয়া এক বাঙালি এসে পড়ল! কিন্তু উপরওয়ালা সেই জায়গাটা করে দিয়েছিল। তখন প্রথম সারির পাঁচ নায়কের মধ্যে আমার নাম আসত।

প্র: আপনি তো খুব ভাল গানও গাইতেন...

উ: এখনও গাই। পৃথিবীর নানা দেশে পারফর্ম করেছি। লন্ডনে লতাজির সঙ্গে, বার্মিংহামে আশাজির সঙ্গে... মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নাইটেও অনেক গান গেয়েছি। তবে আমার কোনও প্রথাগত ট্রেনিং ছিল না। হেমন্তদার ছোট ভাই সঙ্গীত পরিচালক অমল মুখোপাধ্যায় আমাকে দিয়ে প্রথম গান রেকর্ড করায়। প্রথম গান ‘কখন নদীর তীরে সন্ধ্যা নামবে’। সেটা হিট হওয়ার পরে প্রতি পুজোয় গান বেরোত।

প্র: আপনি তো সেই সময়কার সব নামী নায়িকাদের বিপরীতে অভিনয় করেছেন...

উ: সন্ধ্যা রায়, মালা সিংহ, ওয়াহিদা রহমান, শর্মিলা ঠাকুর, রাখী, তনুজা, সায়রা বানু, মুমতাজ.... আমি যখন যে নায়িকার সঙ্গে কাজ করতাম, তাঁদের সঙ্গে এমন ভাবে মিশতাম যে, সকলেই আমাকে সাপোর্ট করত। যাঁদের সঙ্গে কাজ করতাম, তাঁরা বোধহয় ভাবতেন, আমি তাঁদের প্রেমে পড়েছি (হেসে)!

প্র: এত সুন্দরী নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন, কারও প্রেমে পড়েননি?

উ: ‘না’ বললে মিথ্যে বলা হবে। এত ক্লোজ়ে কাজ করতে করতে অনেকের সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছে। আজ তাঁদের নাম বলতে চাই না।

প্র: আপনার প্রথম বিয়ে ও প্রথম সন্তান প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে...

উ: বুম্বার স্ট্রাগলের জন্য আমি একা দায়ী নই। প্রসেনজিৎ-পল্লবী তখন অনেক ছোট। ওরা কিছুই জানে না। এ সব নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না, কারণ তা খুব কন্ট্রোভার্শিয়াল। সব প্রশ্নের উত্তর দেব অটোবায়োগ্রাফিতে।

Biswajit Chatterjee Interview Celebrity Bollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy