Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লেব্যাক শব্দটা শুনলে মাথা গরম হয়ে যায়

নিজেকে লাইমলাইটে আনার জন্য অকারণ সাক্ষাৎকার দিতে নারাজ। জীবনে উল্টো পথে চলতেই বরাবর স্বচ্ছন্দ মোনালি ঠাকুর নিজেকে লাইমলাইটে আনার জন্য অকারণ সাক্ষাৎকার দিতে নারাজ। জীবনে উল্টো পথে চলতেই বরাবর স্বচ্ছন্দ মোনালি ঠাকুর

মোনালি

মোনালি

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

গুজব ছিল তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে ফোনে তাঁকে বহুবার ধরার চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি ধরা দেননি।

প্র: বিয়েটা কি হয়ে গিয়েছে?

উ: আরে কী অদ্ভুত প্রশ্ন! বিয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কী আছে? এটা তো জাস্ট একটা সইয়ের ব্যাপার।

প্র: হয়েছে কি হয়নি?

উ: না হয়নি। হলে জানতে পারবেন। আপনাকেও জানাব। আমার হয়ে সারা শহরকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে দেবেন।

প্র: সেকি! সারা শহর মোনালি ঠাকুরের বিয়ের নেমন্তন্নে যাবে?

উ: (প্রচণ্ড হেসে) আপনি সত্যিই এটা লিখে দেবেন? একটু কাজের কথা নিয়ে জিজ্ঞেস করবেন?

প্র: খুব তাড়াতাড়ি পাশ কাটাচ্ছেন। আপনার বয়ফ্রেন্ডের নাম, কী খেতে ভালবাসেন, পছন্দের ডেস্টিনেশন...

উ: (থামিয়ে দিয়ে) শুনুন এটা আমার বিয়ে আর বয়ফ্রেন্ড নিয়ে সাক্ষাৎকার নয়। প্লিজ ছেড়ে দিন। ও ডাল-রুটি খেতে ভালবাসে, এটুকু বললাম। আর মানসিক ভাবে ওর সঙ্গে আমি খুব খুশি। এ বার প্রসঙ্গটা বদলান প্লিজ।

প্র: আপনি জীবিকা বদলালেন?

উ: আমার দিদি মেহুলি ঠাকুরের সঙ্গে কলকাতায় একটা এথনিক স্টোর খুলছি। ‘বান্ধবী’। তার মানে আমি জীবিকা বদলে ফেললাম! আসলে দিদি ছোটবেলা থেকেই খুব ইন্টারেস্টিং সব পোশাক বানায়। আগে সেগুলো আমার পছন্দ হতো না। এখন দেশে-বিদেশে সেই ধরনের হ্যান্ডলুম বিক্রি হতে দেখে ওর কদর বুঝেছি। ইচ্ছে আছে, মুম্বইয়েও একটা স্টোর খোলার। ওখানে অর্গ্যানিক মেটিরিয়্যাল, হ্যান্ডলুমের খুব কদর।

প্র: দিদি-বোনের হিংসে নেই?

উ: আগে দিদি ছিল মায়ের মতো। এখন আমি দিদির মা। নিজেকে তো অনেক বদলে ফেলেছি।

প্র: ইদানীং মোনালি ঠাকুরকে খুব কমই প্লেব্যাকে পাওয়া যায়!

উ: উফ। প্লেব্যাক শব্দটা শুনলে মাথা গরম হয়ে যায়। ভারতবর্ষ ছাড়া এই কনসেপ্ট কোথাও নেই। প্লেব্যাক আসলে কী? অন্যের কম্পোজিশন গাওয়া। সেখানে আমার ক্রিয়েটিভিটি কোথায়?

প্র: একটা সময় তো নিজেই প্লেব্যাক সিঙ্গার হতে চেয়েছিলেন?

উ: হ্যাঁ চেয়েছিলাম। মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে প্লেব্যাক করার স্বপ্ন নিয়ে কলকাতা ছাড়ি। প্রথমে সম্পূর্ণ অন্য জঁরের গান গেয়ে প্লেব্যাক করেছি। এখন আর পোষায় না।

প্র: কেন?

উ: এখন পুরনো গান রিমিক্স হয়। কেন শুনবে লোকে? বলিউডি গান শুনতে একদম ভাল লাগে না। ওই একঘেয়েমি থেকে বেরোনোর জন্য আন্তর্জাতিক মিউজিক শুনি। ভাবুন তো, মা‌ইকেল জ্যাকসনের কথা। নিজে গান তৈরি করে সেটা বিশ্বের সামনে প্রচার করেছেন। সেখানেই এক জন শিল্পীর সার্থকতা। অন্যের তৈরি গান গেয়ে আর কত দিন?

আরও পড়ুন:দিনের শেষে ফাঁকা ফ্ল্যাটে হুমার জন্য কি বয়ফ্রেন্ড অপেক্ষা করেন?

প্র: তা হলে কী করবেন ভাবছেন?

উ: আপনি আবার পুরো নেগেটিভ লিখে বসবেন না। বলতে চাইছি, প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে আমি নিজেকে আটকে রাখতে চাই না।

প্র: যদি বলি ‘সওয়ার লুঁ’ মোনালির সংগীত জীবনে একটা বড় ছাপ ফেলে গিয়েছে, তা হলে কি ভুল বলা হবে?

উ: একেবারেই না। ওই গানটা আমার গায়কির কথা ভেবে প্রচুর সময় নিয়ে তৈরি হয়েছিল। অসম্ভব ক্রিয়েটিভ একটা গান। এই ধরনের কাজই একক ভাবে করতে চাই।

প্র: মানে আপনি সিঙ্গলস-এর কথা বলছেন...

উ: অবশ্যই। সারা পৃথিবী এখন সিঙ্গলসে মাতোয়ারা।

প্র: গান কম্পোজ করার কথা ভাবছেন?

উ: আমার কাছে খুব বড় ব্যানারের একটা ছবির সংগীত পরিচালনার প্রস্তাব এসেছিল। আমি সেটা ফিরিয়ে দিয়েছি। প্লিজ ছবিটার নাম জি়জ্ঞেস করবেন না। আমার বন্ধুরা শুনে অবাক হয়েছিল, এ রকম একটা কাজ ফিরিয়ে দিলাম বলে।

প্র: শোনা যায় অরিজিৎ সিংহ আপনার বন্ধু।

উ: ওরে বাব্বা! সে তো কবেকার কথা। এখন অরিজিৎ আর আমি মুম্বইয়ে একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। কিন্তু এখন আমরা নিজেদের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। জানেন কি, আমি আর ও মুম্বই থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে এসেছিলাম?

প্র: সে কী! পালিয়ে মানে?

উ: মুম্বইয়ে এমন সব দিন গিয়েছে, যখন অরিজিৎ আর আমার বাড়িভাড়া দেওয়ার পয়সা ছিল না। বাধ্য হয়েছিলাম কলকাতায় পালিয়ে আসতে। সে সব দুর্দিনের কথা মনে করতে চাই না। তবে অরিজিৎ খুব সফল। মেয়েদের মধ্যে হর্ষদীপ কউরের গলাটা ভাল লাগছে। সুনিধি তো ভালই। তবে ওই যে, বেশি বলিউড শুনি না।

প্র: ইনস্টাগ্রামে দেখলাম, অনুপম রায়ের সঙ্গে আপনার ছবি।

উ: ও নিজের একটা স্টেটমেন্ট তৈরি করেছে। গানের ক্ষেত্রে এখন শব্দের ব্যবহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনুপমের গানে সেই শব্দের ব্যবহার দেখেছি। ‘হেমলক সোসাইটি’-র ‘আমার মতে তোর মতো কেউ নেই’ গানটা কী অপূর্ব! আর এক জনের কথাও বলি। পাপন। ও রকম ‘গর্জাস’ গায়কি কে না শুনতে চাইবে বলুন।

প্র: ‘ইন্দু সরকার’-এর ‘ইয়ে আওয়াজ হ্যায়’ নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া?

উ: খুব ভাল। প্রচুর লোকে হোয়াটস অ্যাপ করেছেন। ওটা আমার গাওয়া সবচেয়ে লম্বা গান।

প্র: প্লেব্যাকের উপরে রাগ দেখিয়ে প্লেব্যাক কিন্তু করে যাচ্ছেন।

উ: দেখুন, যে ভাবে মেকানিক্যালি প্লেব্যাক করা হয়, তাতে হৃদয় থাকে না। ধরুন, একটা মনখারাপের গান। সেটা যদি পুরোটাই কম্পিউটার আর পিচ কারেকশন করে হয়ে যায়, তা হলে লোকে কি সেটা মনে রাখবে?

প্র: মনখারাপ হলে কী করেন?

উ: দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাই। আমার মনখারাপের সঙ্গে জায়গাটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। দমবন্ধ হয়ে আসে। খোলা হাওয়ায় নিজেকে ছেড়ে দিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE