Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীর সঙ্কটের সমাধান: শেষ আশা ফুরাল নেহরুর মৃত্যুতে

কাশ্মীর নিয়ে এমন সমাধান ভেবেছিলেন শেখ আবদুল্লা, যাতে ভারত বা পাকিস্তান কেউই জিতবে না বা হারবে না, কাশ্মীরের জনগণের সম্মানহানিও হবে না। চেয়েছিলেন, দুই দেশের সুসম্পর্ক বজায় থাকুক, অক্ষুণ্ণ থাকুক ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি, ভাল থাকুন সংখ্যালঘুরা। হঠাৎ নেহরু বিদায় নিলেন, হাতছাড়া হয়ে গেল সমস্যা সমাধানের সুবর্ণসুযোগ। সেপ্টেম্বর ১৯৬৩। চিনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারত পরাজিত। বিশ্বের কাছে, দেশের ও দলের কাছে নেহরুর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রবল মানসিক চাপ, কাজের চাপে শরীরও ভেঙে পড়েছে। নেহরুর পরে কে?

পাশাপাশি: কাশ্মীরে জওহরলাল নেহরু ও শেখ আবদুল্লা

পাশাপাশি: কাশ্মীরে জওহরলাল নেহরু ও শেখ আবদুল্লা

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০০:২১
Share: Save:

বেঞ্চের হাতল ধরে লোকসভার সিঁড়ি বেয়ে নামছেন তিনি। ক্লান্ত, দুর্বল একটা মানুষ। শরীরটা নুয়ে পড়েছে। তাঁকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সোশ্যালিস্ট দলের সদস্য, সাংসদ এইচ ভি কামাথ। চিনতেই পারা যাচ্ছে না জওহরলাল নেহরুকে! এই মানুষটাকেই মাদ্রাজে কংগ্রেসের অধিবেশনে দেখেছিলেন তিনি! ইলাহাবাদের বাড়িতে তরতরিয়ে দুটো সিঁড়ি টপকে উঠতে দেখেছেন! যাঁর ব্যায়ামের ছবির জনপ্রিয়তা বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছে!

সেপ্টেম্বর ১৯৬৩। চিনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারত পরাজিত। বিশ্বের কাছে, দেশের ও দলের কাছে নেহরুর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রবল মানসিক চাপ, কাজের চাপে শরীরও ভেঙে পড়েছে। নেহরুর পরে কে? আলোচনা শুরু হয়েছে। বাবার শরীর ভেঙে পড়েছে, বুঝতে পারছেন ইন্দিরাও। বিশ্রাম দরকার। কিন্তু বললেই কি বিশ্রাম পাওয়া যায়? ’৬৩-র ডিসেম্বরেই মাদ্রাজ, মাদুরাই, চণ্ডীগড়, কলকাতা, বিহার আর দু’বার বম্বে যেতে হয়েছে তাঁকে। ’৬৪-র জানুয়ারিতে ভুবনেশ্বরে কংগ্রেসের অধিবেশনে মঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সোজা দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে। জানা গেল, স্ট্রোক হয়েছে।

নেহরু হয়তো নিজেও বুঝতে পারছিলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে। এই সায়াহ্নে তাঁর মনে পড়ছে শেখ আবদুল্লার কথা। রাজনীতির চাপে অনেক সময় এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেহরুকে মেনে নিতে হয়েছে, যা তাঁর আদর্শের পরিপন্থী। যেমন শেখ আবদুল্লাকে বন্দি করে রাখা। শেখ তাঁর দীর্ঘকালের বন্ধু, তবু অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টে সই করতে পিছপা হননি নেহরু। কোথাও কি ভুল হয়েছিল? যেমনটা হতে যাচ্ছিল ২৬ অক্টোবর, ১৯৪৭-এ! কিন্তু সে দিন তো তাঁর পরামর্শ নেহরু মেনে নিয়েছিলেন!

নয়াদিল্লি, ১৯৪৭

‘‘সেনাবাহিনী পাঠান, শেখ আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের জনসমর্থন থাকলে তাদের ক্ষমতা দিন, যা খুশি করুন। কিন্তু আজ সন্ধের মধ্যে সেনাবাহিনীকে শ্রীনগর পৌঁছে যেতে বলুন,’’ কাতর অনুরোধ জানালেন কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহের প্রধানমন্ত্রী মেহেরচাঁদ মহাজন। পাক হানাদারেরা তখন লরিতে চেপে শ্রীনগরের দিকে এগোচ্ছে। হরি সিংহের স্বপ্ন ছিল, দুই দেশের মাঝে কাশ্মীর থাকবে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে। তাঁর ধারণা ছিল না, পাকিস্তানি সেনার মদতে গেরিলারা ঢুকে, দখল করতে চাইবে শ্রীনগর। বিপাকে পড়ে ২৬ অক্টোবর তাই মহাজনকে দিল্লি পাঠিয়েছেন নেহরুর সঙ্গে কথা বলতে। নেহরুর ঘরে তখন মহাজন ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেল।

প্রার্থনাস্থল: শ্রীনগরের হজরতবাল মসজিদ। প্রাঙ্গণে শান্তির পায়রারা আজও ওড়ে, কিন্তু কাশ্মীরে শান্তি এসেছে কি?

মহাজন দর কষার চেষ্টা করলেন। ‘‘আজ রাতের মধ্যে ভারতীয় সেনা না পৌঁছলে আমি জিন্নার সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হব। শ্রীনগরকে বাঁচাতেই হবে। দরকারে আমরা পাকিস্তানে যাব।’’ নেহরু স্তম্ভিত। এই লোকটা কি তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছে? ‘‘যেখানে খুশি যেতে পারো,’’ সটান বলে দিলেন তিনি। মহাজন উঠে পড়লেন। আর কথা বলার মানে হয় না। বল্লভভাই পটেল তাঁর কানে ফিসফিস করে বললেন, ‘‘যেতে চাইলে নিশ্চয়ই যাবেন। কিন্তু পাকিস্তানে নয়।’’ নেহরুর দিকে একটা চিরকুট এগিয়ে দিলেন, ‘‘শেখসাহেব পাঠিয়েছেন।’’

শেখসাহেব মানে শেখ আবদুল্লা। গাঁধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত, নেহরুর ভক্ত। তিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতেই। উত্তপ্ত কথোপকথন তাঁর কানেও গিয়েছে। তার পরেই দরজার বাইরে থেকে এই চিরকুট। সেখানে লেখা, শ্রীনগরকে বাঁচাতে মহাজন যেটা বলছেন, সেটা তাঁরও বক্তব্য। শেখ আবদুল্লা এমনিতে মহারাজার শাসনের বিরুদ্ধে, তিনি চান কাশ্মীরে রাজতন্ত্রের বদলে ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার আসুক। কিন্তু আজ পাক হানাদারদের আক্রমণের এই দুঃসময়ে তিনি রাজপ্রতিনিধি মেহেরচাঁদের পাশে।

শেখ আবদুল্লার মত জানতে পেরে নেহরুর ভঙ্গিও বদলে গেল। শ্রীনগরে সৈন্য পাঠাতে আর অসুবিধা নেই। বহু বছর পরে মেহেরচাঁদ তাঁর আত্মজীবনী ‘লুকিং ব্যাক’-এ জিন্নার পরিকল্পনা ও সে দিন নেহরু-পটেলের সঙ্গে আলোচনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ লিখেছিলেন। সেখানেই আছে, ২৬ অক্টোবর দু’দেশের সুপ্রিম কমান্ডার ক্লদ অকিনলেক জিন্নাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, হরি সিংহ ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করেছেন। ফলে কাশ্মীরে সেনা পাঠানো যাবে না। জিন্না আক্রমণের নির্দেশ তুলে নিতে বাধ্য হন।

নিউইয়র্ক থেকে গুলমার্গ

১৯৪৭-এ কাশ্মীর এই ভাবেই হানাদারদের থেকে বাঁচল। শেখ আবদুল্লার মনে দ্বিধা ছিল, দুটি বড় দেশের মধ্যে কাশ্মীর অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগবে না তো? কিন্তু একটা ব্যাপারে শেখের মনে কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না। জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্ব তিনি মানতেন না। সামন্ততান্ত্রিক, মুসলিম পাকিস্তান যে কাশ্মীরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখবে না, এ বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহ। পরের বছর জানুয়ারিতে নেহরু সমস্যাটি রাষ্ট্রপুঞ্জে নিয়ে গেলেন। নিউইয়র্কের অধিবেশনে রাষ্ট্রপুঞ্জ পাকিস্তানকে আর হানাদার না ঢোকানোর অনুরোধ করল। ভারতকে বলা হল জম্মু-কাশ্মীর থেকে আস্তে আস্তে সেনা সংখ্যা কমাতে। ’৫২-র অগস্টে নেহরু সংসদে জানালেন, ‘‘জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সৈন্য দিয়ে আমরা কাশ্মীর জয় করতে চাই না। কাশ্মীরের জনতা চাইলে আমাদের সঙ্গে নাও থাকতে পারে। ভারত-কাশ্মীর জোর করে বিয়ের পক্ষপাতী আমি নই।’’

কিন্তু শেখ সাহেব চান ভারত-পাকিস্তান কারও অধীনে না থেকে গণভোট। ও দিকে কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে কেবল কথার স্রোত। এরই মাঝে ১৯৫৩ সালে কাশ্মীরের সাংবিধানিক প্রধান করণ সিংহ প্রধানমন্ত্রীর আসন থেকে শেখকে সরিয়ে দিলেন। কাশ্মীরের নির্বাচিত শাসককে তখন মুখ্যমন্ত্রী নয়, প্রধানমন্ত্রীই বলা হত। নেহরুকে বলা হল, শেখ তলে তলে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হল শেখের বিভিন্ন চিঠি, সাম্প্রতিক বক্তৃতার ক্লিপিং। নেহরু নাকি পুরোটা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। যে শেখ আবদুল্লা সেই তিরিশের দশকে দলের নাম ‘মুসলিম কনফারেন্স’ থেকে বদলে রেখেছেন ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’, তিনি পাকিস্তানের হাতের ক্রীড়নক? ঘটনাটা আজও ‘কাশ্মীর কন্সপিরেসি কেস’ নামে পরিচিত, শেষ অবধি কোনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

৯ অগস্ট রাতে অ্যারেস্ট অর্ডার সই করে দিলেন নেহরু। রাজ্য সফরে বেরিয়ে শেখ আবদুল্লা সে রাতে গুলমার্গের এক সরকারি গেস্ট হাউসে। তাঁর আত্মজীবনী ‘ফ্লেমস অব চিনার’ বইয়ে চমৎকার বর্ণনা আছে। ১০ তারিখ ভোরে তাঁর সেক্রেটারি এসে জানায়, পুরো গেস্ট হাউস সশস্ত্র সেনা ঘিরে রেখেছে। শেখ শুনেই বেডরুমের বাইরে বেরিয়ে এলেন। ব্যাটন উঁচিয়ে এক সেনা-পুলিশ তাঁকে ভিতরে যেতে ইঙ্গিত করল। শেখ ঠান্ডা মাথায় ঘরে ফিরে পুলিশ সুপারকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাংলোয় এত পুলিশ কেন? সুপার কোনও উত্তর না দিয়ে তাঁকে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট দেখালেন। শেখ জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে সকালে নমাজ পড়ার সময় দেওয়া হবে কি?

হজরতবাল এবং তার পর

১৯৬৩-র ২৭ ডিসেম্বর। কাশ্মীর উত্তপ্ত। হজরতবাল মসজিদ থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে ‘মুই-এ-মুকদ্দাস’। মধ্যযুগ থেকে সুরক্ষিত অতি পবিত্র স্মারক। এমন স্মারক যদি হঠাৎ উধাও হয়ে যায়, মানুষের অসন্তোষ সহজেই অনুমেয়। চুরি যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই পবিত্র স্মারক আবার মসজিদেই পাওয়া যায়। কিন্তু কাশ্মীরের জনগণকে তা বিশ্বাস করাবে কে! উপত্যকা জুড়ে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানেও হিন্দুদের উপরে আক্রমণ হয়েছে। ও দিকে স্ট্রোক হয়ে অসুস্থ নেহরু। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে তিনি লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে কাশ্মীরে পাঠালেন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তিনি ক’জন মুসলিম বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ফিরে আসা স্মারকটি আসল না নকল দেখার ব্যবস্থা করলেন। তাঁরা দেখে জানালেন, স্মারকটি আসল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল উপত্যকা। নেহরুর মনে পুরনো কাঁটার কথা ফিরে এল। পাকিস্তানের সঙ্গে আদি বিরোধের কথাও।

দেশদ্রোহীর সন্তান

শেখ আবদুল্লার বন্দিদশার আট বছর পেরিয়েছে তত দিনে। ১৯৫৩ সালে প্রথম বার গ্রেফতারের সময়েই নেহরু দ্বিধান্বিত ছিলেন। কারণ, আবদুল্লার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই আনা হয়নি। ১৯৫৮-এর জানুয়ারিতে হঠাৎ শেখ আবদুল্লাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিশাল জমায়েত তাঁকে বরণ করে নেয়। শ্রীনগরে এবং হজরতবাল মসজিদে তিনি দু’টি সভা করেন। ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আর এতেই কাশ্মীরের আবদুল্লা-বিরোধী নেতা ও প্রশাসনিক কর্তাদের টনক নড়ে। এপ্রিলে আবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। বন্দি করা হয় জম্মুর জেলে। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় নেহরুকে এ সব মেনে নিতে হলেও তাঁর মনের কোণে একটা অপরাধবোধ ছিলই। তাই আবদুল্লার অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবারের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ নিতেন নেহরু। ফারুখ আবদুল্লা তখন জয়পুরে ডাক্তারি পড়ছেন। ১৯৫৫-এর জুলাইয়ে তিনি নেহরুর কাছে এলেন। জানালেন, তিনি ভাল নেই। সহপাঠীরা তাঁকে ‘দেশদ্রোহীর সন্তান’ বলে ব্যঙ্গ করেন। প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে চিঠি লেখেন নেহরু।

হজরতবালের ঘটনার পরে নেহরুর মনে হয়, আর এক বার চেষ্টা করে দেখা যাক, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয় কি না। প্রেক্ষাপট অবশ্য আগেই তৈরি ছিল। ১৯৬২-৬৩ জুড়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বেশ কয়েক বার বৈঠক হয় ভারতের। ভারতের পক্ষে ছিলেন সর্দার স্বর্ণ সিংহ, পাকিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তরুণ তুর্কি জুলফিকার আলি ভুট্টো। কিন্তু কাশ্মীরের পক্ষ থেকে কেউ ছিলেন না। আর দেরি নয়, এ বার শেখ আবদুল্লাকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে হবে। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী বক্সী গুলাম মহম্মদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত শেখের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন নেহরু। ৮ এপ্রিল ১৯৬৪, জম্মুর জেল থেকে বেরিয়ে এলেন শেখ। জানালেন, ভারতের এখন দুটি সমস্যা। এক, সাম্প্রদায়িকতা। দুই, কাশ্মীর। একমাত্র নেহরুর নেতৃত্বেই এর সমাধান সম্ভব। শেখ আবদুল্লাকে নয়াদিল্লিতে তাঁর সঙ্গে থাকার আমন্ত্রণ করলেন নেহরু। শেখ জানালেন, আগে তিনি কাশ্মীর যাবেন। ২৩ এপ্রিল, ইদের পরে তিনি নেহরুর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে দিল্লি আসবেন। ১১ এপ্রিল গাড়িতে জম্মু থেকে শ্রীনগর যাত্রা শুরু করলেন শেখ। কয়েক ঘণ্টার যাত্রাপথ। কিন্তু তিনি চলেছেন নিজের খেয়ালে— গ্রামেগঞ্জে, শহরে থামতে থামতে। যেখানেই থামেন, জনতার ভিড়। মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। শেখ বলেন, “কাশ্মীর অনেকটা সেই মেয়ের মতো, যাকে পাকিস্তান আর ভারত দুজনেই বিয়ে করতে চায়। কিন্তু কাশ্মীর কী চায়, তা দুজনের কেউই শুনতে রাজি নয়। ভারতকে মনস্থির করতে হবে।’’ শেখ জানালেন, তাঁর মনে কোনও বিদ্বেষ নেই। তিনি খোলা মনে নেহরুর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।

১৮ এপ্রিল হুডখোলা জিপে চড়ে শ্রীনগরে ঢুকলেন শেখ আবদুল্লা। আনন্দে উদ্বেল প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ সে দিন রাস্তায়। সারা শহর সেজে ওঠে তোলা হয়েছিল। জনতার সঙ্গে, নিজের দলের লোকের সঙ্গে কথা বলে শেখ বুঝলেন, এখানে সবাই তাঁকে পাকিস্তানের সমর্থক ভাবছেন। ভাবছেন, তিনি গণভোটের সমর্থক। বক্সী মহম্মদ সরকারের অপপ্রচার এর জন্য অনেকটাই দায়ী। দলের মধ্যেও তখন পাকিস্তানের দিকে ঝোঁক। কিন্তু বাস্তববাদী শেখ কখনই পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে রাজি ছিলেন না। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। মৌলভি ফারুকির সঙ্গে দেখা করলেন, তাঁকেও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার বিষয়ে নিরস্ত হতে বললেন। ২৩ এপ্রিল, নমাজের পরে শ্রীনগরের একটি সভায় যোগ দিলেন শেখ আবদুল্লা। সবাইকে সতর্ক করলেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান খুঁজতে গেলে ভারতে বসবাসকারী পাঁচ কোটি মুসলমান আর পাকিস্তানের এক কোটি হিন্দুর কথা মাথায় রাখতে হবে। তিন দিন পরে, দিল্লি যাওয়ার আগে, আবার কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে সতর্ক করলেন আবদুল্লা। কাশ্মীরে হিন্দুদের উপরে কোনও নির্যাতন যাতে না হয়, তাঁর অনুরোধ করলেন।

জনসঙ্ঘের প্রতিবাদ

নেহরুর নতুন কাশ্মীর নীতি নিয়ে এই সময় একটি দল প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। বিজেপির পূর্বসূরি জনসঙ্ঘ! ২৮ এপ্রিল, শেখ আবদুল্লার দিল্লি আসার আগের দিন দিল্লি জুড়ে বড় মিছিলের আয়োজন করে জনসঙ্ঘ। ৩৭০ ধারা বাতিল এবং কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণার দাবি মিছিলে। জনসঙ্ঘের নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী নেহরুকে বলেন, কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ তা শেখ আবদুল্লাকে জানিয়ে দিতে।

এমনকি, কংগ্রেসের ভিতর থেকেও একই দাবি ওঠে। নেহরুর ক্যাবিনেটের কয়েক জন সদস্যও একই মত প্রকাশ করেন।

তবে নেহরুর উদ্যোগের সমর্থনও আসে। প্রথমে জয়প্রকাশ নারায়ণের কাছ থেকে। কংগ্রেস আর জনসঙ্ঘের নেতাদের আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি, আলোচনার মাধ্যমেই যে পাকিস্তান-ভারতের মধ্যের এই সমস্যার সমাধান সম্ভব, তাও জোর গলায় বলেন। সমর্থন আসে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর কাছ থেকে। নেহরুর দীর্ঘ দিনের সহযোদ্ধা তিনি। আবার কঠোর সমালোচকও। কংগ্রেসের টানা শাসনের বিরুদ্ধে বারবার মুখ খুলেছেন। স্বতন্ত্র দল তৈরি করে নেহরুর অর্থনৈতিক নীতির প্রবল সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে, শেখ আবদুল্লাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করেন তিনি। কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের আলোচনার সমর্থনও করেন।

এমনই তপ্ত পরিবেশে ২৯ এপ্রিল পালাম বিমানবন্দরে এসে নামলেন শেখ আবদুল্লা। গন্তব্য তিনমূর্তি ভবন, যেখানে নেহরু তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। নেহরু তাঁকে কারাবন্দি করার এগারো বছর পর এই প্রথম দুজনের দেখা। পুরনো বিদ্বেষ

কাটিয়ে উঠতে পারবেন? সংশয় ছিল অনেকেরই। সব মিথ্যা প্রমাণ করে, শেখ আবদুল্লাকে দেখে নেহরু দু’হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিলেন। পাঁচ দিন তিনমূর্তি ভবনে কাটালেন নেহরু। দিনে দু’বার একান্ত আলোচনা হত। মাঝের সময়ে কংগ্রেসের অন্য নেতাদের সঙ্গে, বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে, জয়প্রকাশ নারায়ণের সঙ্গে আলোচনা করলেন শেখ আবদুল্লা। রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গাঁধীর সমাধিতে ফুল দিলেন, দিল্লির জামা মসজিদে প্রার্থনার পরে এক সভায় যোগও দিলেন।

কংগ্রেসের মধ্যে তখন বেশ ডামাডোল। অনেকেই কাশ্মীরে স্থিতাবস্থার পক্ষপাতী। ২৭ জন কংগ্রেসের সংসদ তো বিবৃতি প্রকাশ করে বসলেন। নেহরু সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় তখন জড়িয়ে আছেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। তাঁকে চিঠি লিখলেন রাজাগোপালাচারী। কাশ্মীরকে কোনও ধরনের স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার পক্ষে তিনি। আবদুল্লাও রাজাজির সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। নেহরুর সঙ্গে পাঁচ দিন কাটিয়ে মাদ্রাজ পাড়ি দিলেন। পথে ওয়ার্ধায় বিনোবা ভাবের সঙ্গে দেখা করলেন। ‘‘বিনোবা ভাবের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতা আর রাজাজির সঙ্গে বাস্তব রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে এসেছি,’’ জানালেন সাংবাদিকদের।

রাজাজি ফর্মুলা

৫ মে। মাদ্রাজে রাজাজি ও শেখ আবদুল্লার বৈঠক হল। পর দিন হিন্দুস্তান টাইমস লিখল, আবদুল্লা আর রাজাজি সমস্যা সমাধানের কাশ্মীর ফর্মুলা বার করে ফেলেছেন। রাজাজি এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে শেখ আবদুল্লা সাংবাদিকদের জানান, রাজাজি তাঁকে পরিষ্কার ভাবে ভাবতে সাহায্য করেছেন। দুজনে এমন সমাধানের কথা ভেবেছেন যাতে ভারত বা পাকিস্তান কেউই জিতবে না বা হারবে না। পাশাপাশি, কাশ্মীরের জনগণের সম্মানহানিও হবে না।

মাদ্রাজ থেকেই শেখ আবদুল্লা খবর পেলেন, পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। ৬ মে, দিল্লি এলেন আবদুল্লা। তিনমূর্তি ভবনে গিয়ে নেহরুর সঙ্গে দেখা করলেন। দুজনের কথা হল রহস্যময় ‘রাজাজি ফর্মুলা’ নিয়ে। নেহরু সব শুনে তৎকালীন বিদেশ সচিব ওয়াই ডি গুনদেবিয়া, পাকিস্তানে ভারতের হাই কমিশনার জি পার্থসারথি এবং আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য বদরুদ্দিন তৈয়াবজির একটি কমিটি করে দিলেন। দু’দিন ধরে সেই কমিটির সঙ্গে শেখ আবদুল্লার টানা আলোচনা চলল। গণভোট, ১৯৪৭-এর আগের অবস্থায় কাশ্মীরকে ফিরিয়ে দেওয়া, স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, রাজ্য ভেঙে জম্মু, লাদাখকে ভারতের সঙ্গে আর উত্তর অংশকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সঙ্গে জুড়ে গণভোটে যাওয়া, নানা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হল। আবদুল্লা অবশ্য সমাধানে তিনটি জিনিস থাকুক তা চাইছিলেন। এক, পাকিস্তান ও ভারতের সুসম্পর্ক। দুই, ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়। তিন, দুই দেশের সংখ্যালঘুরা যাতে সুরক্ষিত থাকেন। পাশাপাশি, কমিটি তাঁকে যেন একাধিক সমাধান দেয়, যা নিয়ে তিনি আয়ুব খানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।

শেখের দেওয়া শর্তগুলি দেখলে মনে হয়, সমাধানের মধ্যে গণভোটের বিষয়টি ছিল না। কারণ, গণভোটের ফল যা-ই হোক, তাতে একটি দেশে অসন্তোষ তৈরি হবে এবং দু’দেশের সংখ্যালঘুদেরই বিপদের আশঙ্কা থাকবে। রহস্যময় ‘রাজাজি ফর্মুলা’য় কাশ্মীরকে যতটা সম্ভব স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কথাই ভাবা হয়েছিল। দুই দেশ শুধু কাশ্মীরের বিদেশনীতি ও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে। বাকি বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবে কাশ্মীর। আর একটি সম্ভাবনা হল, পাকিস্তান, ভারত ও কাশ্মীরকে নিয়ে কনফেডারেশন তৈরি করা।

শেখ আবদুল্লা মনে করতেন, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে নেহরুই শেষ আশা। নেহরুও আবদুল্লার উপরে ভরসা রেখেছিলেন। ১৬ মে বোম্বেতে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটিকে দেওয়া ভাষণে শেখের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশংসা করলেন নেহরু।

২০ মে আবার দিল্লি এলেন শেখ আবদুল্লা। পাকিস্তান যাওয়ার আগে আবার নেহরুর সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। ২২ মে সাংবাদিক সম্মেলনে নেহরু পরিকল্পনা সম্বন্ধে বিশদে কিছু বলতে অস্বীকার করলেন। তবে তৎকালীন বিদেশ সচিবের চিঠিতে পরিকল্পনাটির কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। নেহরু আইনজ্ঞদের কাছে ভারত, পাকিস্তান ও কাশ্মীর নিয়ে একটি কনফেডারেশনের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান দু’টি সার্বভৌম রাষ্ট্র থাকবে। সেই কনফেডারেশনে জুড়ে যাবে কাশ্মীর। কাশ্মীরের অবস্থান আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট ও বাল্টিস্তানের উপরে ভারত দাবি ছেড়ে দেবে।

বদলে আয়ুব খান কী দেবেন? স্বতন্ত্র পার্টির তৎকালীন সাংসদ মিনু মাসানি তাঁর বন্ধু, করাচির নামকরা উকিল এবং এক সময়ে ভারতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং আয়ুব খানের বিশ্বস্ত এ কে ব্রোহি-কে চিঠি লিখলেন, আয়ুব খান যাতে খোলা মনে শেখের সঙ্গে আলোচনা করেন, সেখান থেকে যেন সদর্থক কোনও সংকেত আসে।

পাকিস্তানের পথে

২৪ মে রাওয়ালপিন্ডি নামলেন শেখ আবদুল্লা। বিমানবন্দর থেকে হুডখোলা জিপে তাঁকে শহরে ঘোরানো হল। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই পাকিস্তান সফর করেছিলেন। এই অভ্যর্থনা যেন তাকেও ছাড়িয়ে গেল। দু’সপ্তাহ পাকিস্তানে কাটানোর কথা শেখ আবদুল্লার। রাওয়ালপিন্ডির পরে তিনি যাবেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর। তার পরে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে দেশে ফেরা। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুরা কেমন আছে সেটা খতিয়ে দেখতে চান। বিমানবন্দরে নেমেই জানালেন, দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজাই তাঁর উদ্দেশ্য। ২৫ মে আয়ুব খানের সঙ্গে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক হল। বৈঠক শেষে বিশদে কিছু জানাতে না চাইলেও বৈঠক যে আশা জাগিয়েছে, শেখের আচরণে তা বোঝা যাচ্ছিল। শুধু জানালেন, দিল্লির মতো রাওয়ালপিন্ডিতেও তিনি একই আগ্রহ খুঁজে পেয়েছেন। সে দিনই রাওয়ালপিন্ডিতে জনসভায় বললেন, দুই দেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থে কাশ্মীর সমস্যার আশু সমাধান জরুরি। এই অবিশ্বাস, ভুল বোঝাবুঝি চলতে থাকলে দুই দেশেরই ক্ষতি।

পর দিন, ২৬ মে, আবার আয়ুব খানের সঙ্গে টানা বৈঠক। বৈঠক শেষে দৃশ্যতই খুশি আবদুল্লা ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, জুনের মাঝামাঝি নেহরুর সঙ্গে বৈঠকে রাজি হয়েছেন আয়ুব খান। কাশ্মীর-সহ দুই দেশের সব সমস্যা নিয়েই আলোচনা হবে। দিল্লিতে হবে বৈঠক। তিনিও দিল্লিতেই থাকবেন, যদি কোনও দরকার হয়। তবে ভারতের মতো পাকিস্তানেও শেখের এই উদ্যোগ সকলে ভাল চোখে দেখেননি। বিশেষ করে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে শেখের প্রশংসা এবং কাশ্মীরের বদলে দুই দেশের সুসম্পর্ককে বেশি জোর দেওয়াকে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে বেশ সমালোচনা করা হয়।

২৭ মে আবদুল্লার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ যাওয়ার কথা ছিল। ১৯৪৭-এর পরে প্রথম আবদুল্লা সেখানে যাবেন। শান্তির প্রস্তাবে ও-পারের কাশ্মীরিদের কী প্রতিক্রিয়া, তা জানতে। কিন্তু তা আর জানা হয়নি। তার আগেই খবর পৌঁছয়, নেহরু মারা গিয়েছেন। ভেঙে পড়েন শেখ আবদুল্লা। রাওয়ালপিন্ডি ফিরে সোজা বিমানে দিল্লি। তিনমূর্তি ভবনে পৌঁছে দেখেন, নেহরুর দেহ শায়িত রয়েছে। ছোট শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করেন শেখ। আবদুল্লা জানতেন, কত বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে আছে, নেহরুর চিতার আগুন নেভার পরে কাঁদতে কাঁদতে সেই চিতায় তাঁর শেষ অঞ্জলি রেখে যান শেখ আবদুল্লা। নেহরুর থাকা আর না-থাকা কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে পাকিস্তানের এক সংবাদপত্রে লেখা হয়, 'the end of a negotiated settlement of the Kashmir issue'. For whoever succeeded Nehru would not have 'the stature, courage and political support necessary to go against the highly emotional tide of public opinion in India favouring a status quo in Kashmir.'

এই সার্জিকাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইকের যুগেও ইতিহাস বলছে, সে দিন এই মন্তব্যে কতখানি সত্য ছিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Conflict Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE