Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
5 Birding Spot

পাখি সব করে রব! কলকাতার আশপাশে পাখি দেখার সুলুকসন্ধান

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি— এই ক’টা মাস তাঁদের জন্য আদর্শ, যাঁরা পাখি দেখতে, পাখির ছবি তুলতে ভালবাসেন। কলকাতার আশপাশে কোথায় যাবেন পাখি দেখতে?

শীতের মরসুমে কলকাতার কাছেপিঠে পাখি দেখার সুলুকসন্ধান।

শীতের মরসুমে কলকাতার কাছেপিঠে পাখি দেখার সুলুকসন্ধান। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪
Share: Save:

পাখি দেখার শখ নিয়ে কথা উঠলে কথায় কথায় আর ‘শক’ খান না লোকে। গাঁ-গঞ্জের অনেকেই জানেন, বাড়ির চারপাশে যে সমস্ত পাখি উড়ে বেড়ায়, নদীতে ভেসে বেড়ায়, চরে চড়ে বেড়ায় যে বিহঙ্গকুল, তাদের খোঁজেই আসেন লোকে। তবে ‘রোস্ট’ করে খাওয়ার জন্য নয়, বরং ক্যামেরায় তাদের ছবি তুলতে। কেউ আসেন দূরবিন নিয়ে, কারও কাছে থাকে পাখির ডানা ঝাপটানো, ওড়ার কৌশল আরও নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য 'স্পটিংস্কোপ'। এঁদেরই বলা হয় পক্ষী পর্যবেক্ষক বা পাখি দেখিয়ে।

পাখি দেখিয়ে হতে গেলে যে পক্ষী বিশারদ হতেই হবে, এমন নয়। তবে পাখিদের আনাগোনা, রং, ডানা ঝাপটানোর কৌশল থেকেই অনেকের পাখি চেনার আগ্রহ তৈরি হয়। সেই আগ্রহই এ নিয়ে জানতে, বুঝতে উদ্বুদ্ধ করে। আপনারও কি পাখিদের প্রতি আগ্রহ আছে? তা হলে এই শীতে বরং বেরিয়ে পড়ুন নদী, ঝিলের ধারে। রইল কলকাতার কাছে পাখি দেখার ৫ সুলুকসন্ধান।

সাঁতরাগাছির ঝিল: বছরভরই এখানে পাখির আনাগোনা থাকে। তবে শীতের অতিথি হয়ে আসে পরিযায়ীরা। হুইসলিং বার্ড, গাডওয়াল এবং নর্দান পিন্টেল, টাফটেড ডাক-এর মতো ভিন্‌দেশি পাখিদের দেখার সুযোগ হল শীতের মরসুম। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় দেখা এখানে দেখা মিলেছে মুরহেন, ব্রোঞ্জ জাকানা, পার্পল হেরন, হোয়াইট ওয়াগটেল, লিটল কর্মরান্ট, গ্রেট ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন, হোয়াইট থ্রোটেড কিংফিশার সহ অন্যান্য প্রজাতির পাখিগুলির। শুধু বিদেশ নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও এখানে উড়ে আসে পাখিরা।

সাঁতরাগাছির ঝিলে লেসার হুইসলিং ডাক।

সাঁতরাগাছির ঝিলে লেসার হুইসলিং ডাক। ছবি: সিদ্ধার্থ ঘোষ।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে ট্রেনে অথবা টোটাতে সাঁতরাগাছি যেতে পারেন। সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে হেঁটেই ঝিলে পৌঁছনো যায়।

চুপির চর: ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনে একটি স্টেশন পূর্বস্থলী। ভাগীরথীর বুকেই জেগে উঠেছে চুপির চর। শুধু চর নয়, নদী-লাগোয়া অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদটি চেনা, অচেনা পক্ষীকুলের বিচরণক্ষেত্রে। পাখি চিনুন বা না-ই চিনুন, নিবিড় ভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে হলে ভেসে পড়তে পারেন এখানকার হ্রদে, গঙ্গায়। পাখি দেখিয়েদের কাছে এই স্থান বেশ জনপ্রিয়। চলতি বছর ডিসেম্বরে পূর্বস্থলীতে দেখা মিলেছে পরিযায়ী পাখি লিট্ল স্টিন্টের। এ ছাড়াও, হোয়াইট ব্রোড ওয়াগটেল, লিট্ল সুইফটের আনাগানো ক্যামেরাবন্দি করেছেন পক্ষী পর্যবেক্ষকরা। এ ছাড়াও লিটল রিংগ্ড প্লোভার, পানকৌড়ি, মাছরাঙা-সহ চেনা পাখির দল তো রয়েছেই। এখানেই দেখা মেলে গার্গ্যানি, ইউরেশিয়ান কুট, লিটল গিব-সহ অজস্র পক্ষীর। কোনওটি চরে চড়ে বেড়ায়। কোনওটি উড়ে বেড়ায় আবার কোনও পাখি দৃশ্যগোচর হয় নদীতে সাঁতার কাটার সময়।

চুপির চরে ফেরুজিনিয়াস ডাক।

চুপির চরে ফেরুজিনিয়াস ডাক। ছবি: মৌ জানা।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া-কাটোয়া লাইনে লোকাল ট্রেনে চেপে নামতে হবে পূর্বস্থলী। যদি ভাগীরথীর দু'কূলে পাখির ওড়াউড়ি দেখতে হয়, তা হলে অবশ্য বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে নামাই সুবিধাজনক।

নয়াচর: নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমানের সীমানা এলাকায় গঙ্গার বুকে তৈরি হয়েছে নয়াচর। শুধু পাখি নয়, এখানে দেখা মেলে গাঙ্গেয় ডলফিনের। শীত এলেই উড়ে আসে পরিযায়ীর দল। নদীর বুকে ভেসে, চরে হেঁটে পাখি দেখতে চাইলে আপনার গন্তব্য হতে পারে নয়াচর। চিরপরিচিত কাঠঠোকরা, মুনিয়া, মাছরাঙা, সারস তো আছেই। এ ছাড়া এখানে দেখা মেলে ইন্ডিয়ান সিলভারবিল, ব্ল্যাক উইংগড স্টিল্ট, লিট্ল স্টিন্ট, ইন্ডিয়ান গোল্ডেন ওরিয়েল-সহ রকমারি ছোটবড়, দেশি-বিদেশি পাখির।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া-কাটোয়া রেলপথে দাঁইহাট স্টেশন। সেখান থেকে এই নয়াচর ৫ কিলোমিটার। কাটোয়া স্টেশন থেকে নয়াচর যাওয়ার টোটো পাওয়া যাবে। মিনিট ২০ সময় লাগে।

পিয়ালি: মাতলার বুকে পিয়ালির মিশে যাওয়া, ম্যানগ্রোভ, প্রজাপতির ওড়াউড়ি দেখতে চাইলে বেরিয়ে পড়তেই পারেন পিয়ালি দ্বীপের উদ্দেশ্যে। অনেকে একে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বারও বলেন। পিয়ালির বুকে শীতে ভেসে বেড়ায় পরিযায়ী পাখির দল। নদীর বুকে নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লে অনেকটা কাছ থেকে চাক্ষুষ করা যায় তাদের। পিয়ালিতে দেখা মেলে টাফটেড ডাক, ইউরেশিয়ান উইজিয়ন, গাডোয়াল, নর্দান পিনটেলের মতো পরিযায়ী পাখিদের। এ ছাড়াও পিয়ালি দ্বীপে চোখে পড়বে হোয়াইট ব্রোড ওয়াগটেল, বিভিন্ন ধরনের স্যান্ডপাইপার, গ্রেটার পেন্টেড স্নাইপ-সহ নানা রকম বিহঙ্গের।

কী ভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ থেকে সকালবেলা জয়নগরের দিকের লোকাল ট্রেন ধরে নেমে পড়ুন দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে। সেখান থেকে অটোতে কেল্লা। কেল্লা থেকে হাঁটা পথে প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে করতেই পৌঁছনো যাবে পিয়ালিতে।

চিন্তামণি কর পাখিরালয়: কলকাতার দক্ষিণে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের কাছেই রয়েছে চিন্তামণি কর পাখিরালয়। শুধু পাখি নয়, এখানে দেখা মেলে ফার্ন, প্রজাপতিরও। বসন্তবৌরি, দোয়েল, শামুকখোল-সহ নানা ধরনের পাখির দেখা মেলে এখানে।

কী ভাবে যাবেন? স্থানটির দূরত্ব fনরেন্দ্রপুর থেকে ১৫ কিলোমিটার। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নরেন্দ্রপুর গিয়ে অটো, বাসে সেখানে যেতে পারেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Birding Spot Travel Migratory Bird
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy